মেরি মর্জি / Leadership Vs. Followers

উনি মুখ খুললেন, দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচন নিয়ে।

“কিছু বলার নেই। আমরা যা ঠিক করি, আমরা তাই করব। এতে কী বলার আছে।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই বললেন সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে ৫% জনমত পাওয়া দলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

এই “আমরা” কারা, তাই নিয়েই যত সমস্যা। ফলস্বরূপ, ওনার দলের মধ্যেই উঠছে আবার প্রশ্ন। অনেকেই জানতে চাইছেন, “কম্যুনিস্ট পার্টির এক নেতার এই বক্তব্য কি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার শৃঙ্খলাভঙ্গ করছে না?” কেউ কেউ আক্ষেপের সুরে অনুযোগ করছেন, “নেতৃত্বের এই চাপিয়ে দেওয়া অভ্যেস কি সমাজকে সবসময় সঠিক দিশা দেখায়!”

এই মুহূর্তে এই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় একজনও বামপন্থী বিধায়ক নেই। এমন দুঃসময়েও যে কর্মী-সমর্থকরা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছেন, তাদের সকলের চেতনার ওপর আঘাত না হেনে, এক স্বনামধন্য এবং দায়িত্বশীল নেতার এই ধরণের বক্তব্য এড়ানো কি অসম্ভব ছিল! এই প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা করে যা জেনেছি, কমিউনিস্ট পার্টি হল শ্রমজীবী মানুষের দল। শ্রমিকশ্রেণীকে এবং সমাজের সমস্ত শোষিত অংশকে তাদের আশু স্বার্থের জন্য এবং সমস্ত ধরনের শোষণ ও অন্যায়ের অবসানের জন্য সংগ্রামে সমাবেশিত ও ঐক্যবদ্ধ করে কম্যুনিস্ট পার্টি। রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য শুনে কেউ যদি এখন প্রশ্ন তোলেন, কম্যুনিস্ট পার্টি মানে শৃঙ্খলার নামে শৃঙ্খল, তিনি কি তবে ভুল বলবেন!

শক্তিক্ষয় হলে কি নীতিহীন হতে হয়! না নীতিহীন হলে শক্তিক্ষয় হয়? এই প্রশ্ন আমাদের নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় কাজ করা এক শ্রমিকের।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্যে কৌশলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, নীতি আদর্শের বিসর্জন, কোনো কম্যুনিস্ট পার্টির থেকে দলের কর্মী-সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষেরা সাধারণত আশা করে না।

এবার এদেশ ছেড়ে যাই বিদেশে। গত মঙ্গলবার থেকে ব্রিটেনে টানা রেল ধর্মঘট চলছে। চল্লিশ হাজারের ওপর রেলশ্রমিক ধর্মঘটে গেছেন মাইনে না বাড়া, কাজের চাপ বৃদ্ধি ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে।

তবে সে দেশের রেল শ্রমিকরা ব্রিটেনের লেবার পার্টির বর্তমান প্রধান স্টারমার’কে পাশে না পেলেও, পাশে পেয়েছিলেন লেবার পার্টির কিছু তরুণ সাংসদকে। সেটা পছন্দ হয়নি স্টারমারের। তিনি ঘোষণা করেন রেলশ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য লেবার পার্টির তরুণ সাংসদদের ক্ষমা চাইতে হবে।

শ্রমিকদের সাথে করবিন

তারপর… রেলশ্রমিকদের সাথে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিলেন জেরেমি করবিন, লেবার পার্টির সদ্যপ্রাক্তন প্রধান। কারণ অধিকার উপহার হিসেবে আসে না, এটা যেমন বিশ্বাস করেন রেলশ্রমিকরা, তেমনই করবিন সেটা লেবার পার্টির তরুণ সাংসদদের সাথে এক সারিতে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করেন।

পরিশেষে বলি, মেহনতী মানুষেরা সংগঠিত হয়েই তৈরি করেছিল কম্যুনিস্ট পার্টি। কম্যুনিস্ট পার্টি মেহনতী মানুষ তৈরি করেনি।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস