বদ্দা / The Chit Fund Maestro

বদ্দা যখন পঞ্জি স্কিমে কোটি কোটি টাকার দুনম্বরী করবার করতেন, তখন কিনতেন ছবি। তারপর কি যে হল, “উত্তর” থেকে ধরা পড়ে গারদে পাচার হতেই, লিখতে লাগলেন চিঠি। ছবি কেনার মতনই, বদ্দা চিঠি লিখতে ভালবাসেন, তাই লেখেন, কে কি বলবে এতে! তবে তিনি নিজে লেখেন, নাকি কেউ লিখিয়ে দেন, তা আমরা জানি না এবং জানতেও চাই না। বড্ড রিস্ক মশাই।

তবে একটা ব্যাপার কমন, তিনি ছবি কিনুন বা চিঠি লিখুন, বিদ্যুৎ গতিতে তা পৌঁছে যায় প্রেস থেকে টেলিভিশন মিডিয়ার পর্দায়। প্রভাবশালী কিনা। তার ওপর ওনার বিশ্বস্ত প্রাক্তন কর্মচারী আবার মুখপাত্র, যিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও শাস্তি পান না। বিশাল ল্যাম্পপোষ্ট, খবর তো মিডিয়াতে যেতেই হবে। দেখলে হবে মামা, খরচা আছে! কোটি কোটি পাবলিক মানি চোট করা কয়েদী কি সবাই হতে পারে কাকা! ফেসিলিটি তো থাকবেই। আর এমনি এমনি তো উনি বলেননি, “যা গেছে, তা গেছে”। বদ্দার ক্যালমা আছে বলতে হবে।

এই দেখুন না, কয়দিন আগে সারা দেশ বার দুয়েক উত্তাল হয়ে উঠল, বিশ্বগুরু পড়লেন বিপদে, আর তার বঙ্গীয় ভক্তকূল মহাবিপদে। তাই রক্ষাকর্তার বেশে বদ্দা দুম করে জেগে উঠেই লিখে ফেললেন চিঠি। যেই না লেখা, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া। মাসখানেক ধরে মুখ লোকানো “রগড়ে দেওয়া” ক্লাবের সদস্যরা আবার যেই নবীকে নিয়ে ময়দানে ফিরছিলেন, অগ্নিপথ স্কিমটা সে কাঁথায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু বদ্দার চিঠি আবার সেই আগুন নিভিয়ে সামনে এনে ফেলেছে নিজের পাড়া-পুরসভার ভোটে গো হারান হেরে যাওয়া হিন্দুত্বের পোস্টার বয়কে ! সবই বদ্দার খেলা!

যাই হোক বদ্দা চিঠি আগেও লিখেছেন। আর সব চিঠিতেই তিনি লেখেন, অমুক টাকা নিয়েছে, তমুক টাকা নিয়েছে। দাতা বদ্দার লিস্টটাও বেশ ইন্টারেস্টিং।

যিনি বদ্দার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছিলেন বলে বদ্দা আগের চিঠিতে লিখেছিলেন, তিনি এখন নিজেই জানেন না তিনি কোন দলে আছেন, সব জেনে বিধানসভার স্পিকারও বিভ্রান্ত, সাথে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহরও। ওই একই চিঠিতে আরও একজনের নাম বদ্দা করেছিলেন, যিনি এখন যাদবপুরের এক ক্যান্টিনের সাথে যুক্ত, যেখানে আবার কম পয়সায় খাবার পাওয়া যায়। তারপর আছেন সেই লোক যাকে বিশ্বগুরু “ফাইটার” বলার পরে, নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত প্রায় সবকটা বিধানসভাই দিয়ে দিয়েছিলেন বদ্দার বদ্দিকে। সেই চিঠিতেই আবার অবিবাহিত এক সাদা চুলের বুড়োর নাম আছে, যার আবার নিজের বাড়ি নেই, পার্টি অফিসে একটা ছোট্ট ঘরে থাকেন।

বদ্দা এদের নামে চিঠি লিখলেও দিল্লির বেয়াড়া এজেন্সিগুলো এদের ঠিক পছন্দ করে না, তাই বদ্দাকে যারা উত্তর থেকে পাকড়াও করে নিয়ে এসেছিল, তাদের বাহিনীকেই ওরা বারে বারে ডাকে। বদ্দার চিঠিতে উল্লেখ করা লোকদের ডাকেই না। তাতেও বদ্দার চিঠি লেখা বন্ধ হয় না।

তা যাই হোক, বদ্দার ছত্রছায়ায় যারাই ছিলেন, তারাই মানুষের চোখে বিখ্যাত, কেউ আজ কবিতা লেখেন, কেউ নাতির সাথে দিঘায় ঘুরতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পাশ্চাৎদেশ থেঁতো করে ফেলেন, কেউ নিজের বউ ছেড়ে কালবৈশাখী নিয়ে “মম চিত্তে” নাচেন, কেউ একসময় বাড়িতে ছেলে ঢোকাতে উৎসাহ দিতেন, কেউ তো আবার জাত গোখরো। নানা জনের নানা গুণ। সবই বদ্দার কৃপা।

তবে কোটি কোটি ঝাড়ার পর নিশ্চিন্ত আশ্রয় কি করে পাওয়া যায়, সেটা বদ্দার কাছে সক্কলের শেখা উচিৎ। বদ্দা ফাটাফাটি। বদ্দাই উন্নয়ন, বদ্দাই পরিবত্তন, বদ্দাই সব। যেখানে পা রাখেন সেটাই সংরক্ষণ করা হয়। বুঝলেন না?

বদ্দা আগে যেই জেলে থাকত, সেটা উঠিয়ে দিয়ে, ওই জায়গায় মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল মনে আছে কি! ঠিকই আছে, উডবার্ন থাকতে জেল কেনো, হোক মিউজিয়াম।

তবে ওই মিউজিয়ামে কাদের সংরক্ষণ করা হবে, সেটা আমাদের জানা নেই। লিস্টি পেলেই, আপডেট করব।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র:
a) https://www.business-standard.com/about/what-is-saradha-scam
b) https://timesofindia.indiatimes.com/topic/saradha-scam
c) https://www.anandabazar.com/west-bengal/sudipta-sens-letter-handed-over-to-cbi/cid/1264425
d) https://www.anandabazar.com/amp/west-bengal/kunal-ghosh-again-demands-the-arrest-of-mamata-banerjee-1.92183
e) https://bangla.aajtak.in/kolkata/story/saradha-scam-sudipta-sen-claims-suvendu-adhikari-taken-money-tmc-kunal-ghosh-tapas-roy-slam-bjp-leader-abk-387240-2022-06-24
f) https://www.anandabazar.com/west-bengal/mamata-painting-had-bought-rose-valley-1.78073
g) https://eisamay.com/west-bengal-news/kolkata-news/suvendu-adhikari-reacts-on-sudipta-sen-sarada-allegations/articleshow/92440942.cms