জুবেইর জিন্দাবাদ / #StandWithZubair

“আঘাত” এমনই এক স্পর্শকাতর বিষয় যে, কার কখন লেগে যায় বোঝা মুশকিল।

“হ”-এ হনিমুন ও হনুমান দুই-ই হয়। এখন দোষটা “হ”-এর, নাকি হিন্দী-ইংরাজী গুলিয়ে “গ” করে দেওয়া হোটেল মালিকের আমরা জানতে পারি না। শুধু জানতে পারি জনৈক “সজ্জন” তা নিয়ে সামান্য হাসি-ঠাট্টা করলেই রাষ্ট্রের “তখলিফ” শুরু হয়ে যায়। যদিও অন্যধর্মের প্রবক্তাদের প্রতি কু-ইঙ্গিত করলে বা খুলে আম প্রাণনাশের হুমকি দিলে রাষ্ট্রকে এতটা “তখলিফ” ওঠাতে দেখা যায় না। আইন আদালত থেকে আপনি-আমি, আজকাল এসবে আর তেমন ভাবে প্রভাবিতও হই না। যেন রাষ্ট্রের এমন ঔদাসীন্য স্বাভাবিক। কিন্তু তা কি কেবল “গোলি মারো শালো কো” শব্দগুচ্ছে গুলির আওয়াজ থাকে না বলে, নাকি কবিতার মধ্যে কন্ডোম ঢুকে যায় বলে বলতে পারব না।

শুধু যা দেখেছি তা হল এমন সব স্পর্শকাতর “তুই-মুই” বাকযুদ্ধের আড়ালে বসে রাষ্ট্রর ব্যানার টাঙিয়ে ভুঁইফোড় দেশনেতাদের টুকিটুকি খেলতে। আর তারপরেও অনেকটা ঐ “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত” আপ্তবাক্য মেনে বিশ্বাস করেছি, শিশু বয়সে কুমিরছানার সাথে কুমিরডাঙ্গা খেলতে খেলতে বড় হওয়া ভুঁইফোড় দেশনেতাদেরকেই। ভাবটা এমন যেন আমরা বাড়িতে যেমন কুকুর-বেড়াল পুষি, গাঁ-গঞ্জে লোকে যেমন গরু-মোষ অথবা হাঁস-মুরগি পোষে, তেমনই বাড়ির বাচ্চাদের মনোরঞ্জন এবং খেলার সাথীর খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে কুমিরছানা পোষা যেতেই পারে! এমন উদ্ভট চিন্তায় আমাদের প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাসে কোথাও আঘাত আসে না! এমনকি যখন কোন সিনেমায় দাবী করা হয়, স্বামী বিবেকানন্দের পর ফের এক নরেন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তিনি ঘটনাচক্রে জনৈক শ্মশ্রুগুম্ফ সজ্জিত দেশনেতা তখন আমাদের স্বামীজির ভক্তদের কেউ তেমন আঘাত পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। ঠিক যেমনটা গতকাল জনৈকা নেত্রীকে “মা-সারদা” র প্রতিমূর্তি হিসেবে কেউ কেউ দাবী করলেও, মা সারদার ভক্তদের মধ্যে তেমন চিত্ত চাঞ্চল্য বা উত্তেজনা চোখে পড়ছে না। দেখলে মনে হবে আমাদের বিশ্বাস অটুট আছে, কোথাও আঘাত লাগেনি। কিন্তু আসলে আঘাত লাগলেও আমরা যে “মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা” স্টাইলে মুখ ফিরিয়ে আছি সেটা আমাদেরকে দেখলে কে বলবে!

কিন্তু কেন এমন “পতিব্রতা” মৌনতা। কারণ আমরা “পার্টি-পলিটিক্স বুঝি না” টাইপ। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও জানি মমতা অথবা মোদীর একটা তেজ আছে, অনেকটা ইন্দিরার মত! আর এমন শাসকদের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা “নিরলস সাধনা”র বিষয়। শাসকের অমরত্ব কামনায় যেখানে কবিতাকেও তাচ্ছিল্য করা যায়, সেখানে সামান্য মান-অপমান তুচ্ছ।

কিন্তু জনৈক দেশবাসীর করা নির্বিষ ঠাট্টা উপহাসে শাসক বা তার তাঁবেদার বর্গের সামান্য নিন্দা-সমালোচনা থাকলেই মুশকিল! আঘাত পেয়ে থানায় ছুটি, এফআইআর করি। কারণ গত কয়েক বছরে আমরা শিখেছি এবং জেনেছি শাসককে “তখলিফ” দিলে “সজ্জন” হওয়া যায় না। আর এমন সজ্জন হওয়ার “এমার্জেন্সি” চিন্তাভাবনাই আমাদের পাড়ার অলি-গলিতে কিম্বা মোড়ের চায়ের দোকানের ঠেকে “মন্দিরা” হয়ে বাজতে থাকে। সে মন্দিরার ব্যঞ্জনায় মোদী বা ইন্দিরাকে নাই বা খুঁজলাম! কিন্তু নিজের নিজের শিরদাঁড়াটা হারিয়ে ফেলছি না তো!

মহম্মদ জুবেইররা কিন্তু আমাদের কে সেটাই মনে করাচ্ছেন।
কিন্তু আমরা দেখছি কি! শিখছি কি!

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস চাই না, গণতন্ত্র বা বাক স্বাধীনতা এভাবে শাসকের খাঁচাবন্দী তোতা হয়ে শাসকের হাতে ছোলা খাক, আর শাসকের শেখানো গান গেয়ে যাক। আদালত তো খাঁচাবন্দী তোতা-কাহিনী শুনিয়েই খালাস, মহম্মদ জুবেইরদের মত বনের পাখিদের খাঁচা খুলে আকাশে উড়িয়ে প্রমাণ করুক, দেশে শাসকের নয়, আইনের শাসন বলবৎ আছে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চ: বাবা-মা রা সাবধান! “তুই একটা আস্ত হনুমান ” বলে ছেলেমেয়েদের তিরস্কার করলে জেলের ভাত জুটতে পারে!