অবশেষে স্বীকৃতি / Sex Workers In India

দেবীমূর্তি গড়তে অবশ্যম্ভাবী সেখানকার মাটি। হিন্দু শাস্ত্রে তেমন বিধানই দেওয়া আছে। সমাজ যাদের দূরে ঠেলে রাখে, আদিশক্তি কিন্তু তাদেরই বুকে টেনে রাখে। খাজুরাহো থেকে কালনা (উপরের ভাস্কর্যটি কালনার গোপালবাড়ি মন্দিরের), মন্দিরগাত্রে সঙ্গমভাষ্কর্য দেখা গেলেও, সমাজের চোখে এইসব এখনো “নষ্টামি”। কারণ, “নষ্ট” মেয়েদের বাড়ি তো “বাবু”দের খেলার ঘর। বাবুরা যে পুরুষমানুষ। তাদের সম্পূর্ণ “অধিকার” আছে। কিন্তু সেখানকার মেয়েগুলো? লজ্জা নেই, শরম নেই! কাপড় খুলে এক এক রাত, এক এক জনের সঙ্গে কাটাতে তাদের মান-সন্মানে বাধে না! এমন মেয়েরা তো “নোংরা”, আর তাদের সম্ভোগ করা পুরুষরা তো “পয়-পরিষ্কার”। সমাজ আজও এমনটাই ভাবে। তাই বলে কি এই মহিলারা তাদের কাঙ্খিত অধিকার পাবেন না?

অন্যান্য “অধিকার”-এর মত যৌন শ্রমিকদের অধিকারও “উপহার” হিসেবে আসবে না, এটা বিলক্ষণ জানতেন পুরুষদের “একবেলার সুখ প্রদানকারী” এরাজ্যের তথাকথিত “নষ্ট” মেয়ের দল। তাই তাদেরও সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, আমাদের এই কলকাতা শহরে।

কল্লোলীনী কলকাতায় ২০০১ সালের ৩রা মার্চ, কয়েক হাজার যৌনকর্মী তাদের অধিকার আদায়ে এক বিরল সমাবেশের আয়োজন করেন। যেটা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় যৌন কর্মীদের নিজ উদ্যোগে এই ধরনের প্রথম সম্মেলন। তাদের সেই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন, তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী, সুভাষ চক্রবর্তী। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সম্মেলন চলেছিল চারদিন ধরে। প্রত্যেকদিন ছিল আলাদা আলাদা ইভেন্ট। ছিল আলোচনা-প্রদর্শনী। সরকারী হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২৫,০০০ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন এই সম্মেলনে। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে, এর পর থেকে প্রতিবছর সেই দিনকে পালন করা হয় যৌন কর্মীদের অধিকার দিবস হিসাবে।

তার পর কেটেছে ২১টা বছর, আজ দেশের সুপ্রীম কোর্টের তরফে এল এক যুগান্তকারী নির্দেশিকা। অবশেষে “পেশা” হিসেবে স্বীকৃতি পেল যৌন শ্রম। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ যৌনকর্মীদের নিয়ে মোট ছ’দফা নির্দেশিকা জারি করেছে।

ভারতের সমস্ত যৌনকর্মীরা এবার থেকে “যৌনশ্রমিক” হিসেবেই স্বীকৃতি পাবেন। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, ‘‘যৌনকর্মীরাও আইনের চোখে সমান সুরক্ষার অধিকারী। একজন প্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মী নিজের সম্মতিতেই যৌনতা বিক্রি করছেন। সে ক্ষেত্রে পুলিশ অকারণ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কোনও ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা যাবে না। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ এই দেশের প্রত্যেক নাগরিককে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার দিয়েছে।’’

এই পর্যবেক্ষণকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। ২৭শে জুলাইের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কেন্দ্রকে মতামত জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। এবারে অপেক্ষা কেন্দ্রীয় সরকার কি মতামত দেয়।

সরকারের মতামত যাই হোক না কেন, রাইজ অফ ভয়েসেসের তরফ থেকে সমস্ত “যৌন শ্রমিক” মা, বোন, মেয়েদের জন্যে রইল “অধিকার” আদায় করে নেওয়ার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র

a) https://www.thehindu.com/news/national/supreme-court-recognises-sex-work-as-a-profession/article65461331.ece/amp/
b) https://www.anandabazar.com/india/supreme-court-order-on-sex-workers-sex-work-legal-dgtl/cid/1346709
c) https://www.thewall.in/news/sex-work-is-legal-said-sc/
d) http://ganashakti.com/bengali/supreme-court-recognises-sex-work-as-a-profession
e) https://www.bbc.com/bengali/news-39457408