নয়া ক্রোনোলজি / Protesting Wrestlers Detained
তাহলে ক্রোনোলজিটা মিলিয়ে নেওয়া যাক।
১. জনৈক বিজেপি নেতা এবং সাংসদের উপরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠলো। সেই অভিযোগ কারা করলেন? দেশের জন্য মেডেল জিতে আনা, বিশ্বের মানচিত্রে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা মেয়েরা। একসময় যাঁদের সঙ্গে হেসে ছবি তুলে নরেন্দ্র মোদী দেশের গৌরব বৃদ্ধি সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছিলেন৷
২. অভিযুক্ত আরবি নামধারী হলে বাড়িতে হয়তো বুলডোজার চলে যেত, মিডিয়া হয়তো ধর্ম তুলে মুণ্ডপাত করত৷ আইটি সেল হয়তো হোয়াটসঅ্যাপে বোঝাতো– দ্যাখো নিজের বাড়ির মেয়েদের সাবধানে রাখো৷ মুসলমানরা সবাই এরকম।
অথচ এই বিজেপি নেতা এবং সাংসদের রিরুদ্ধে তেমন কিছুই হল না৷ তিনি যে অপরাধী ‘হিন্দুভীর’-রা এটাই মানতে নারাজ৷
৩. তবে কী হল? মেডেল আনা মেয়েরা যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে ধর্ণায় বসলেন৷ গুটিকতক মানুষ ছাড়া তাঁদের পাশে কেউ দাঁড়ালেন না৷ যাঁরা নাকি ‘হিন্দু মা-বোনেদের ইজ্জৎ বাঁচাতে সদা তৎপর, তাঁরাও এলেন না। দিনের পর দিন মেডেল আনা মেয়েরা অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন৷ তাঁদের উপর অভিযোগ আনা হল যে, তাঁর মিথ্যে বলছেন৷ শুরু হল ভিক্টিম ব্লেমিং।
৪. ওই নেতা এবং সাংসদ বহাল এখনও তবিয়তে ঘুরছেন৷ গ্রেফতারি, বুলডোজার ইত্যাদি তো দূর, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে তিনি আজও ছবি তুলেছেন। পেছনে একটি ফলক জ্বলজ্বল করে উঠছে৷ যাতে লেখা ‘সত্যমেব জয়তে।’
৫. সত্যের জয়ই বটে৷ এর চেয়ে বড় তামাশা আর কী হতে পারে! যেখানে অভিযোগকারী মহিলাদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আর অভিযুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ সেদিন নাকি ভারতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের নামে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন শ্রী মোদী এবং তার সহযোগীরা!
৬. গল্প এখানেই শেষ হয়নি৷ যাঁরা যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের টেনে হিঁচড়ে বাসে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের কাঁদো কাঁদো মুখের ছবিকে এআই প্রযুক্তি দিয়ে হাসিমুখ করা হয়েছে৷ বোঝানো হচ্ছে– দ্যাখো এদের উপর নিপীড়ন ইত্যাদি কিছুই হয়নি৷ এরা মজায় আছে।
কারা করছে এসব? আইটি সেলের হিন্দুবীররা৷ যে হিন্দুবীররা শাহিনবাগের প্রতিবাদী মহিলাদের ভার্চুয়াল নিলাম করেছিল৷ এখন তারা আপনার বাড়ির মহিলাদের নিয়ে নোংরামি করছে। এখন তো নামগুলো সাইমা, বিলকিস বা শাবানা নয়৷
৭. অর্থাৎ ক্রোনোলজি অনুযায়ী কী বোঝা গেল? বিজেপির নেতার হাতে যৌন হেনস্থার শিকার হলে তা অত গুরুতর ব্যাপার নয়। তখন ‘বাড়ির মেয়ে’ ইত্যাদি সেন্টিমেন্ট কাজ করে না৷
৮. প্রথমে শুনেছিলাম দেশের প্রধানমন্ত্রী পোশাক দেখে ধর্ম দেখে অপরাধী চিহ্নিত করেন। কিন্তু না। তাতে পুরো সত্যিটা বলা হচ্ছে না। কারন এখন বিজেপির দলীয় পতাকা দেখে সরকার অপরাধীদের আড়াল করাও শুরু করে দিল। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা মুকুব করে জেল থেকে ছেড়ে দেয় যে দলের সরকার, সেই দলের সরকার নিজের দলের টিকিটে নির্বাচিত সাংসদকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠলে আড়াল করবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে?
বিজেপি নেতা জড়িত আর অভিযুক্ত আরবি নামধারী নন বলে কি ঠিক বীরত্ব জাগছে না? এই লজ্জার শেষ কোথায়?
Comments are closed.