সরকারি দফতরে আগুন / Fire at PHE Building

এই বাংলায় এই মুহুর্তে এমন পরিস্থিতি, যেখানে কিছু ঘটলেই সেটা আর অন্তর্ঘাত অথবা দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তেমনই একটা ঘটনা আজকে সেন্ট্রাল এভিনিউর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আগুন। দমকল বাহিনী অত্যন্ত তৎপরতার সাথে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও, জনমানসে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গেছে।

প্রশ্ন উঠছে, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের গ্রেফতারির পর পরই হঠাৎ আগুন কেন লাগল, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অফিসে? এটা কি নিছকই দুর্ঘটনা? নাকি দুর্ঘটনার আড়ালে অন্যকিছু? আর আগুন লাগলো তো লাগলো, তা লাগলো জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সার্ভার রুমের ও স্টোর রুমের বিস্তীর্ণ অংশে। খটকা তো লাগবেই।

কয়দিন আগেই সুজয় কৃষ্ণ বলেছিলেন, “অভিষেককে স্ট্যাব করার আগে, আমাকে স্ট্যাব করতে হবে”। আবার কখনো বলেছিলেন, “আমার সাহেবকে কেউ কিছু করতে পারবে না”। তারপরে সুজয়বাবু গ্রেফতার হলেন, আর তার পরে পরেই মুখ খুললেন সুজয়বাবুর হাত ধরে চাকরি পাওয়া এক চাকরিপ্রাপক। বেহালার এক ক্লাবের ভোটে সুজয় কৃষ্ণকে ভোট দিয়েই মিলেছে জনসম্পদ উন্নয়ণের সরকারি চাকরি, এমনটাই জানিয়েছেন চাকরিপ্রাপক অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মানে শুধু শিক্ষা দফতর নয়, রাজ্যের অন্যান্য দফতরেও চাকরি দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন কালীঘাটের কাকু। এখন যদি কেউ ভেবে বসেন, কাকুর গ্রেফতারীর পর চাকরী বিক্রির বেআইনি নথি গায়েব করার জন্যেই আগুন, তাহলে কি আর বলার আছে। কিন্তু সাথে আমরা এটাও জানিয়ে দিই, টেকনোলজির উন্নতির ফলে, কোন রেকর্ডেড সরকারী ডকুমেন্ট এখন আর পোড়ানো যায় না, সব জমা থাকে ক্লাউডে। তাই রাজ্য সরকার চাইলেই ডেটা রিস্টোর করতে পারেন, আর ইডি সিবিআই চাইলেই টুকুস করে ক্লাউড থেকে ডেটা নামিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারেন।

যাই হোক, আবার আসি আগুনে। সকাল সাড়ে নয়টা। রাজ্যের এক অন্যতম ব্যস্ত অফিস শুরু হওয়ার ঠিক আগেই ঘটে অগ্নিকাণ্ড। তাই আগুনে কারো আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আমাদের কানে আসেনি। এটা একটা ভালো খবর, কিন্তু ফাঁকা অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই রাজ্যে প্রথম নয়। আপনাদের মনে থাকবে বোলপুরে বেসরকারি ব্যাংকের অফিসে কয়েক মাস আগে, ঠিক এভাবেই আগুন লেগেছিল। আর ঘটনাচক্রে সেই ব্যাংকে আমানত ছিল বীরভূমের বাঘের, যিনি আপাতত তিহারের খাঁচায় বন্দি।

নাহ্ প্রসঙ্গে ফিরি। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বর্তমান মন্ত্রী পুলক রায়। তার বিরুদ্ধেও কিন্তু কয়েক মাস আগে অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, যেটা আর এখন কোনো আলোচনাতেই আসে না। গত নভেম্বরে নথি হাতে শুভেন্দু বাবু বলেছিলেন, “জল জীবন মিশনে ১০৮৬ কোটির দুর্নীতি, ৫০০ কোটির কাটমানি”। শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য নিয়ে মন্ত্রী পুলক রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে, উনি তখন কিছু বলতে চাননি। জানিয়েছিলেন, এখনই তিনি কিছু বলবেন না। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু তারপর থেকে ৬ মাস কেটে গেলেও, শুভেন্দু অধিকারী বা পুলক রায় বা সংবাদমাধ্যমের মুখে এই নিয়ে আর “রা” বেরোয়নি।

আমরা একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারি না, শুভেন্দু অধিকারী যখন এত কিছু জানেন, তখন একদিন সিবিআই দফতরে গিয়ে সব নথিসহ প্রমান জমা দিয়ে আসতেই পারেন। নাকি সারদা-নারদা কেসে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তিনি সিবিআইমুখো হন না, তা আমরা জানি না।

যাই হোক, এবারে সুজয় কৃষ্ণ গ্রেফতার হলেন, গ্রেফতারির পর পর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অফিসে আগুন লাগল, এবার কি আবার কোনো নতুন বক্তব্য আসবে? সিপিআইএমের আলমারি ভর্তি ফাইল পোড়ানোর গল্প বলা হবে? নাকি শুধু বলা হবে, এটা একটা দুর্ঘটনা, একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। চ্যাপ্টার ক্লোজড। কিন্তু তার পরেও মানুষের মনে প্রশ্ন থাকবেই। সময়টাই এই রকম।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস