৪১ ‘টা’ গরীব ছোটলোকের জন্য… / Forty One
ভারত বা ইন্ডিয়া, আমাদের দেশকে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন তাতে কিছু নির্মম সত্যি চাপা দেওয়া যায় না। তারই মধ্যে যেমন একটা সত্যি হল খেটে খাওয়া গরীব প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে আমরা বরাবরই উদাসীন থেকেছি। ‘গরীবি হঠাও’ ডাক দিলেই অথবা ‘ফকিরবাবা’ বা ‘চা-ওলা’ সাজলেই এই সারাদিন গায়ে গতরে খেটেও আধপেটা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর অবস্থার যে তেমন কোন উন্নতি হয় না, তা আজ দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তারা চিরকালই সভ্যতা ও অগ্রগতির ভিক্টিম। দেশের তথাকথিত শিক্ষিত এগিয়ে থাকা মানুষেরা এদেরকে চিরকাল ‘ছোটলোক’ই ভেবে এসেছে এবং আগামী দিনেও তাই ভাববে। তা না হলে হিমালয়ের বুকে পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ পথ বানাতে গিয়ে উত্তরকাশীতে পাহাড় ধসে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের দুরাবস্থাটা দীপাবলী উৎসব ও বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে মত্ত ভারতবাসীর নজর এড়িয়ে যেত না। আর আরও আশ্চর্য্যের বিষয় যেটা সেটা হলো, তারপর আরও দুই সপ্তাহ কেটে গেলো, আটকে পড়া শ্রমিকদের এখনও উদ্ধার করা যায়নি, অথচ মূলস্রোতের মিডিয়ায় তা নিয়ে খুব একটা সাড়া শব্দ দেখছি না। দেশের দক্ষিণপন্থী দলগুলোও এমন মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে প্রথম দু-একদিন কিছুটা প্রথা মাফিক ট্যুইটযুদ্ধ করলেও তারপর বিস্ময়কর রকম চুপ! একমাত্র কিছু হাতেগোনা বামপন্থী দল এবং তাদের শ্রমিক ইউনিয়নগুলি তাদের সীমিত ক্ষমতা ও পরিসরে এনিয়ে কিছুটা হলেও চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
তাই রাইজ অফ ভয়েসেস এর মনে হয়েছে এই উত্তরকাশীর দুর্ঘটনা নিয়ে দু-একটা কথা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন।
প্রথমতঃ উত্তরকাশীর পাহাড় ধসকে যেভাবে একটা নিছক প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা বলে দেখানো হচ্ছে এটা কিন্তু আদৌ তা নয়। ধরুন আপনার বাড়ির ছাদের চারধারে আপনি কোন পাঁচিল দেননি, মানে যাকে বলে ন্যাড়া ছাদ। এবার সেই ছাদে আপনি যদি বাড়ির বাচ্চাদের খেলতে পাঠান এবং কোন বাচ্চা ন্যাড়া ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে যদি হাত-পা ভাঙে বা গুরুতর জখম হয় তাহলে সেটাকে কি আর নিছক দুর্ঘটনা বলে? নাকি আপনার ঔদাসিন্য বলবো! উত্তরকাশীর পাহাড় ধস অনেকটা সেরকমই সরকারী ঔদাসিন্যের ফল। আসলে ‘রোটি-কাপড়া-মকান’ এর থেকেও আমাদের দেশে ভোটবাজারে ধর্মীয় ভাবাবেগ এবং নির্বাচিত বিধায়ক-সাংসদ অনেক সস্তায় ও সহজে বিক্রি হয়। তাই দশলাখি স্যুট পরা ‘চা-ওলা’র রাজত্বে যখন আম জনতার ‘আচ্ছে দিন’ এলো না, ভারত কালাধন ফেরত পেলো না এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢুকলো না, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে অথবা আর্থিক বৈষম্যের সূচকে দেশের স্থান যখন তলানিতে এসে ঠেকেছে এবং সরকার প্রকারন্তরে মেনে নিয়েছে দেশের আশি কোটি জনতার সামান্য চাল-ডাল কেনবার সামর্থ্য নেই, ঠিক তখন চারধাম যাত্রাকে সড়ক পথে যুক্ত করার সরকারি প্রকল্প হাতে নিয়ে, ধর্মীয় ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে, ভোট বাগাবার মাস্টার্স স্ট্রোক দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। একা ‘রাম মন্দির’ উদ্বোধনে যদি কাজ না দেয়! ভারতবাসীর মধ্যে কজনই বা রামের পূজারি! তার থেকে ‘শিব’ ঠাকুর বা ভগবান ‘বিষ্ণু’ রাজনৈতিক ব্যাপারিদের কাছে অনেক বেশি ‘সেফ বেট’! আর তাছাড়া মা গঙ্গা বা যমুনাদেবীর পূজারিও কম কিছু নেই। আর এইসব দিক বিবেচনা করেই চারধাম সড়ক প্রকল্প হাতে নেওয়া।
কিন্তু সবার আগে জেনে নেওয়া জরুরি ‘চারধাম’ ঠিক কি?
হিন্দু ধর্মের পবিত্র চারটি তীর্থক্ষেত্র হলো গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ। এগুলোকেই একত্রে বলা হচ্ছে ‘চারধাম’। ঘটনাচক্রে এই চারটি তীর্থস্থানই হিমালয়ের কোলে গড়ে ওঠা ছোট্ট রাজ্য উত্তরাখন্ডে অবস্থিত। পাঠকদের সুবিধার জন্য নীচে প্রতিটি ‘ধাম’ নিয়ে ছোট করে বিবরণ দেওয়া হল।
যমুনোত্রী:
উত্তরাখণ্ডের পশ্চিম গাড়ওয়াল অঞ্চলে অবস্থিত যমুনোত্রী হল চারধাম যাত্রার প্রথম গন্তব্য। এটি যমুনা নদীর উৎস এবং এখানে যমুনোত্রী মন্দির, দেবী যমুনাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
গঙ্গোত্রী:
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত, গঙ্গোত্রী হল চারধাম যাত্রার দ্বিতীয় গন্তব্য। এটি গঙ্গা নদীর (গঙ্গা) উৎপত্তিস্থল এবং এখানে গঙ্গোত্রী মন্দির রয়েছে, যা দেবী গঙ্গাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
কেদারনাথ:
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত, কেদারনাথ হল চারধাম যাত্রার তৃতীয় গন্তব্য। এটি প্রাচীন কেদারনাথ মন্দিরের জন্য পরিচিত, যা ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। কেদারনাথ বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি, যা ভগবান শিবের সবচেয়ে পবিত্র আবাস বলে বিবেচিত হয়।
বদ্রীনাথ:
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত, বদ্রীনাথ হল চারধাম যাত্রার চতুর্থ এবং চূড়ান্ত গন্তব্য। এটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এটি বদ্রীনাথ মন্দিরের আবাসস্থল, এটি বৈষ্ণবদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এই চারধাম দর্শনে ‘ইহ’ জীবনের যাবতীয় পাপ স্খালন করে পূণ্য অর্জন করা যায়। আর তাই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই পুণ্য অর্জনের লক্ষে তীর্থযাত্রীদের ‘চারধাম’ দর্শনের হিড়িক।
আর সেই হিড়িক কে উস্কে দিতেই পর্যটন শিল্পের উন্নতি এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের নাম করে সরকারের তরফে হাতে নেওয়া হয়েছে চারধাম হাইওয়ে প্রকল্প, যার পোশাকি নাম ‘চারধাম মহামার্গ বিকাশ পরিযোজনা’। এই প্রকল্পে পাহাড় কেটে রাস্তা এবং জায়গায় জায়গায় টানেল বানিয়ে চওড়া সড়কপথে এই চারটে ধামকে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিকটবর্তী ইন্দো-চীন বর্ডারে সেনাবাহিনী যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারে তার জন্যও এই সড়কপথ জরুরি বলে যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, যদিও সেনাবাহিনীর তরফে এমন কোন দাবী ভারত সরকারের সামনে পেশ করা হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে ধর্মীয় কারণের ওপর দেশ সুরক্ষার বর্ম চাপাতেই সরকারের তরফে ইন্দো-চীন সীমান্তে দ্রুততার সাথে পৌঁছানোর যুক্তি সামনে আনা হয়েছে। ৯০০ কিমি দীর্ঘ এই সড়ক পথ নির্মাণে সরকারের খরচ ধরা আছে ১২,০০০ কোটি টাকা।
আপাত দৃষ্টিতে অনেকেরই মনে হতে পারে সেই চিরপরিচিত ‘বিজলি-সড়ক-পানি’র সড়ক তৈরি হচ্ছে, কাজেই এতে আপত্তির কি আছে! ব্যবসা ভি হলো, এমপ্লয়মেন্ট ভি হলো, বিকাশ ভি হলো! কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ ততটা সহজ না। আমরা সবাই জানি হিমালয় হল ভঙ্গিল শ্রেণীর পর্বতমালা এবং অপেক্ষাকৃত ‘তরুণ’। তরুণ বলা হয় কারণ হিমালয় পর্বতমালার পাহাড় পৃষ্ঠের নড়াচড়া এবং উচ্চতা বৃদ্ধি এখনও চলছে। ফলে পাহাড়পৃষ্ঠের ‘স্টেবিলিটি’ কম। তাই হিমালয় পর্বতমালা একটি ভূমিকম্প ও ভূমিধ্বস প্রবণ এলাকা হিসেবেই ভূ-বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করে থাকেন। তারওপর যেভাবে পরিবেশবিদ এবং ভূত্তত্ববিদদের যাবতীয় হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করে হিমালয়ের গা কেটে পাথর ফাটিয়ে এই চারধাম প্রকল্পের রাস্তা-টানেল বানানো চলছে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও তীর্থযাত্রার নাম করে অপরিকল্পিত নির্মাণ ও নগরায়ন চলছে তাতে উত্তরাখণ্ড ও পার্শ্ববর্তী হিমাচল প্রদেশে আগামীদিনে সমূহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এমনিতেই পর্যটন ও তীর্থযাত্রার নামে সারা বছর ধরে বহু মানুষের আনাগোনা চলতে থাকায় হিমালয় পর্বতমালা অংশে প্রাকৃতিক দূষণ বেড়েছে হু-হু করে। জলহাওয়াও বদলে যাচ্ছে দ্রুত। এখন নভেম্বর মাসে বা ডিসেম্বরের শুরুর দিকেও কোন রকম গরম জামা কাপড় ছাড়াই দিব্যি দিনের বেলা সিমলা বা দেহরাদুনে ঘুরে বেড়ানো যায়, যা কয়েক দশক আগে ভাবাই যেত না। এরথেকে একটা জিনিষ স্পষ্ট যে পাহাড়ি জনপদগুলোতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় দূষণ ও উষ্ণায়নের ব্যপক প্রভাব পড়েছে। আর এই অঞ্চলের তাপমাত্রা এভাবে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় হিমালয়ের উচ্চ অংশে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। ফলে ইদানীং প্রায় প্রতি বছর উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশে ব্যপক বন্যা হচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সম্পত্তি ও জীবনহানি। এছাড়া পাহাড়ের গায়ে দেদার গাছ কেটে চলছে ঘরবাড়ি-হোটেল রেস্তোঁরা বানানো। স্কুলের বাচ্চারাও জানে গাছের শেকড় মাটি আঁকড়ে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধ্বস আটকায়। কিন্তু পাহাড়ের পিঠকে গাছ কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ায় প্রায়সই দেখা দিচ্ছে ল্যান্ড স্লাইড বা পাহাড়ধস। এমনকি বন্যার জলের অল্প চাপেই ধসে যাচ্ছে আস্ত পাহাড়। ভেসে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জনপদ। হাতে গরম উদাহরণ রয়েছে জোশীমঠের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের। কিন্তু আমরা শিক্ষা নিলাম কোথায়? পাহাড়ি জনপদে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে তীর্থযাত্রা ও পর্যটনের নামে জনবিস্ফোরণ ও নগরায়নের পথেই চলতে চাইছে দেশের সরকার। আর ইদানীং তারই অংশ হিসেবে যে ভাবে উন্নয়নের নামে পাহাড় কেটে অথবা ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে রাস্তা-টানেল-জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বানানোর দক্ষযজ্ঞ চলছে হিমালয় পর্বতমালা জুড়ে, তাতে পাহাড়ের গা বা পৃষ্ঠে ফাটল হয়ে বা পাথর আলগা হয়ে এক এক অঞ্চলের আস্ত পাহাড়টাই ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আর ঠিক এমনটাই ঘটেছে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ নির্মানের ক্ষেত্রে। সেখানে চারধাম প্রকল্পের অংশ হিসেবে ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলছিল। ড্রিলিং করে সুড়ঙ্গ বানানো অনেক বেশি সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। তার চেয়ে অনেক সহজ ও কম খরচে হয়ে যায় সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ যদি পাথরের খাঁজে খাঁজে ডিনামাইট গুঁজে দিয়ে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো যায়। আর ঠিক সেই পথেই এগিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা। পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে এগোচ্ছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু একটা সময়ের পর বিস্ফোরণের ধাক্কা আর নিতে পারেনি পাহাড়। সুড়ঙ্গের মুখের কাছেই পাহাড় ধসে সুড়ঙ্গ প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভেতরে আটকে পড়েছে ৪১ জন শ্রমিক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বিপর্যয়ের পর জানা গেলো এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পথ বানানোর প্রাথমিক শর্ত হিসেবে সুড়ঙ্গের মধ্যে কাজ চলাকালীন কোন বিপর্যয় ঘটলে কর্মরত শ্রমিকরা যাতে সুরক্ষিতভাবে বেরিয়ে আসতে পারেন তারজন্য একটি এমার্জেন্সি এক্সিট পথ কাজ শুরুর আগেই বানিয়ে বা চিহ্নিত করে রাখতে হয়। এমনকি সুড়ঙ্গের ছাদ যাতে অটুট থাকে তারজন্য প্রযুক্তিগত অতিরিক্ত যান্ত্রিক সাপোর্টও দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এসব কিছুরই ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ। মানে শ্রমিকদের সুরক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থাই ছিল না! আর তারই ফলশ্রুতি এই ৪১ জন শ্রমিকের সুড়ঙ্গের ভেতরে আটকে যাওয়া।
কাজেই সবকিছু জেনেশুনে ও পড়ে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ ধ্বসের ঘটনাটিকে কি আর নিছক দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে আপনাদের! এটা কি আর পাঁচটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যাকে ‘অ্যাক্ট অফ গড’ বলা হয় নাকি ‘গড’ কে সামনে রেখে ‘অ্যাক্ট অফ পলিটিক্স’ এর নামান্তর! উত্তর নেই। কারণ কোন আলোচনাই নেই। দীপাবলীর উৎসবে মেতে থাকা, ক্রিকেট বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত ভারতবাসী পুরো ব্যাপারটাকে একরকম ‘নজর আন্দাজ’ই করেছে বলে মনে হয়েছে আমাদের।
আজ ১৬ দিন হয়ে গেল। এখনও ঐ ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তারা এখনও পাহাড়ের নীচে । ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন। পর্যাপ্ত খাবার নেই, জল নেই। ঐ পাইপে করে যেটুকু সাপ্লাই করা যাচ্ছে ঐটুকু খেয়েই কোনমতে বেঁচে থাকা। অক্সিজেন কম থাকায় শ্বাসকষ্ট তো আছেই, তারওপর ভূ-গর্ভস্থ পাথরের খাঁজে আটকে থাকা বিষাক্ত গ্যাস কখন বেরিয়ে আসবে কেউ জানে না। এছাড়াও রয়েছে সাপ-খোপ ও বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রবের ভয়। আর সর্বোপরি আদৌ আর কোনদিন সূর্যের আলো দেখতে পাবেন কি না, বেঁচেবর্তে বেরিয়ে এসে আবার স্বাভাবিক জীবনে আর কোনদিন ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে রয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা ও মৃত্যু ভয়!
মাঝে দু একদিন মিডিয়ায় এমন প্রচার হলো যেন আর মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাপার! শ্রমিকরা সুড়ঙ্গ থেকে বের হলেন বলে! কিন্তু পরে বুঝলাম রাজস্থান বিধানসভার ভোটের দিন সামনে ছিল তাই এই প্রহসনটি মঞ্চস্থ করা হলো! কারণ রাজস্থান বিধানসভা ভোট মিটতেই তারপর দিনই উদ্ধারকার্যের সাথে যুক্ত বিদেশী বিশেষজ্ঞ যা জানালেন তা হল, তিনি আশা করছেন এই শ্রমিকেরা আগামী ২৫ শে ডিসেম্বর মানে বড়দিন তাদের পরিবারের সাথেই কাটাবেন। মানে ঘুরিয়ে ২৫ শে নভেম্বর কর্তৃপক্ষ অবশেষে ঝেড়ে কাশলেন এবং আরও এক মাসের কাঁদুনি গেয়ে রাখলেন!
এই প্রতিবেদনটি যখন লেখা হচ্ছে তখনও আমাদের দেশের ঐ ৪১ জন সহনাগরিক দুঃসহ মানসিক যন্ত্রনা ও শারীরিক কষ্ট নিয়ে অন্ধকার সুড়ঙ্গে বাঁচবার লড়াই চালাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সুড়ঙ্গের বাইরে থাকা কোটি কোটি ভারতবাসী আদৌ কি তাদের কথা সবাই মিলে ভাবলাম? দেশ নির্মাণে নিয়োজিত ঐ ৪১ জন গরীব প্রান্তিক শ্রমিকের হয়ে সমস্বরে আমরা গলা ফাটাতে পারলাম কি? কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করতে পারলাম কি কেন শ্রমিক সুরক্ষার নামে এই অবহেলা…. নাকি গরীব ছোটলোকদের কথা ভাবনা চিন্তা করবার অভ্যেসটাই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেখানে ৪১ ‘টা’ একটা সংখ্যামাত্র!
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্রঃ-
a) https://www.timesnownews.com/videos/times-now/india/uttarkashi-vertical-drilling-begins-as-christmas-miracle-expected-for-tunnel-trapped-workers-video-105515175
b) https://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2023-11-26/202311252356518.jpg&category=0&date=2023-11-26&button=
c) https://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2023-11-26/2023112600161111.jpg&category=0&date=2023-11-26&button=
d) https://timesofindia.indiatimes.com/city/dehradun/experts-no-escape-route-in-tunnel-norms-flouted/articleshow/105301095.cms
e) https://www.thequint.com/opinion/bjps-char-dham-project-how-govt-bypassed-environmental-clearance
f) https://bankworkersunity.com/2023/11/25/uttarkhand-tunnel-tragedy-put-safety-measures-first/
g) https://www.thequint.com/explainers/explained-the-char-dham-project-its-ecological-impact-the-supreme-court-judgement#read-more
h) https://www.newsclick.in/noted-environmentalist-red-flags-char-dham-project-dangers
i) https://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2023-11-25/202311242316465.jpg&category=0&date=2023-11-25&button=
j) https://tv9bangla.com/india/uttarakhands-joshimath-is-sinking-what-are-the-reason-behind-this-calamity-au17-722115.html
Ratan Kumer Ray
সত্যিই কি আমর
Ratan Kumer Ray
স্তিমিত কি আমরা নিজেদের মানুষ বলে দাবী করি বা করতে পারি যতক্ষণ না এই শ্রমিকদের প্রতি খরচ বাঁচাতে ইমারজেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থা না করার জন্য সরকার ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই।
Ratan Kumer Ray
স্তিমিত কি আমরা নিজেদের মানুষ বলে দাবী করি বা করতে পারি যতক্ষণ না এই শ্রমিকদের প্রতি খরচ বাঁচাতে ইমারজেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থা না করার জন্য সরকার ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই।
Ratan Kumer Ray
সত্যিই কি আমরা নিজেদের মানুষ বলে দাবী করতে পারি ? আমি যখন প্রতিবাদ করিনি বা প্রতিবাদ সংগঠিত করিনি সরকারের বা নিয়োজিত ঠিকাদারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে — সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাকরার বিরুদ্ধে ।