মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং… / AIITEU

আজ যে বিষয়টা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই তা অত্যন্ত অমানবিক একটি বিষয়, যা যেকোন সময়ে যেকোন মানুষের সাথে ঘটতে পারে। তাই আমরা চাই আপনারা প্রত্যেকে এব্যাপারে সতর্ক হোন এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন। তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের ভিড়েও যে একজন বিবাহিত নারীকে তাঁর কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য এতটা লড়তে হবে দেখে আমরা বেশ তাজ্জব হয়েছি। আর যাঁরা এমন একটি নক্কারজনক ঘটনা ঘটালেন তাদের অংশের মানুষজনই সম্ভবত গলাবাজি করে বলে বেড়ান এইসব পার্টি-পলিটিক্স-ইউনিয়নবাজি খুব খারাপ। কারণ এই সমস্ত হিংস্র স্বাপদকূলকে ঐ পার্টি-পলিটিক্স ইউনিয়নবাজরাই খাঁচাবন্দি করে ফেলে।

ঘটনাটি ঘটেছে গুরগাঁও-এর একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান র‌্যান্ডস্ট্যাডে। এক মহিলা কর্মচারী, যিনি আট মাসের গর্ভবতী, তাঁকে ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে বলা হয় যে মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যাবে না। যদিও মাতৃত্বকালীন ছুটি নারীর অধিকারের মধ্যেই পড়ে, তবুও এই ক্ষেত্রে তাঁর আবেদন কোম্পানির তরফে বারবার অস্বীকার করা হতে থাকে। এই নিয়ে ক্রমাগত চাপের ফলে তিনি অফিসের মধ্যেই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁকে অফিসের তরফে এমন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় যেটি কোম্পানির স্বাস্থ্য বীমার আওতাভুক্ত নয়। তাঁকে এও জানিয়ে দেওয়া হয় যে ঐ হাসপাতালটি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত না হওয়ায় চিকিৎসার সমস্ত খরচ তাঁকেই বহন করতে হবে। এমনকি এও বলা হয় যে যদি বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাঁর পক্ষে কাজ করা সম্ভব না হয় তাহলে তিনি যেন পদত্যাগ করেন। অন্যথায় তাঁকে অপসারিত করে দেওয়া হবে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে মাত্র ২ মাস আগেও ইনি একজন সামনের সারির কর্মচারী ছিলেন, অথচ মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করতেই তিনি অপ্রয়োজনীয় বাতিলের তালিকায়!

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল আইটি সেক্টর এর হত্তাকত্তা ন্যাসকমের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোন কর্মচারী একবার কোন কারণে ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে যান, তাহলে আগামী দিনে তিনি কোন ন্যাসকম তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন না। তাই সাধারণ ভাবে সব কর্মচারীর মনেই একটা চিন্তা বা ভয় থেকেই যায়, যাতে কোন কারণে তাঁকে যেন অপসারিত না করা হয়। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠানেই তাই সরাসরি অপসারিত না করে পদত্যাগ করিয়ে নেওয়া হয়। আর এব্যাপারে ন্যাসকমের হত্তাকত্তারা সব কিছু জেনে বুঝেও চুপ থাকেন। হাজার হোক তাঁরাও তো এই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কোন না কোন সংস্থার সাথে কর্মসূত্রে যুক্ত। কেউ উচ্চপদস্থ কর্মচারী, কেউ বা সংস্থার মালিক। তারা কেন নিশ্চুপ থাকেন, তা পাঠকদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

এই ক্ষেত্রে মহিলা উপায়ন্তর না দেখে অগত্যা এআইআইটিইউ বা অল ইন্ডিয়া আইটি এন্ড আইটিএইএস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (AIITEU) দ্বারস্থ হন ও তাদের সবিস্তারে নিজের সমস্যার কথা জানান। এটি হল বাম মনোভাবাপন্ন তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কর্মীদের ইউনিয়ন। সবিস্তারে জেনে AIITEU এর পক্ষ থেকে তাঁদের আইনজীবীদের সাহায্য নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পাঠানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট নড়ে চড়ে বসে এবং সেই দিনই ই-মেল মারফত একটি ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে উনি হাসপাতালের খরচ রিইমবার্সমেন্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। আর তার একদিন পরেই ওনার মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করে দেওয়া হয়।

তাই সবশেষে কয়েকটা কথা বলে চলে যাব। ছোটবেলায় “একতাই বল” বা “দশের লাঠি একের বোঝা” ইত্যাদি দুলেদুলে পড়ে বড় হয়ে ভুলে গেলে চলবে! ইউনিয়ন মানে হল ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করবার একটা মঞ্চ। আর তার প্রয়োজনীয়তা যে ফুরিয়ে যায়নি, উপরের ঘটনাটি তার হাতেগরম প্রমাণ। কাজেই সেই সমস্ত সরীসৃপের দল যারা পার্টি-পলিটিক্স-ইউনিয়নবাজির তকমা চাপিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধা দেন এবং কর্মক্ষেত্রে স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত করেন তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজের অধিকার আদায় করতে ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন আমাদের দেশটাই সেই অর্থে “ইউনিয়নবাজ।” আমাদের সংবিধানের ধারা ৩০০ অনুযায়ী দেশটার নাম “ইউনিয়ন অফ ইণ্ডিয়া”। আদতে আমাদের দেশটা এই মুহুর্তে ২৮ টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ইউনিয়ন। কাজেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়তে পারলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজের জায়গায় নিজেদের অধিকার গুলো বুঝে নিতে পারব এবং এতে অন্যায়ের কিছু নেই।

আর পরিশেষে, AIITEU বা All India IT & ITES Employees’ Union, যা তৈরি হয়েছে আইটি সেক্টরে কর্মরত মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করবার জন্য যাতে এইভাবে কোন কর্মী সংস্থার উচ্চপদস্থদের দ্বারা আগামীদিনে আক্রান্ত না হন বা দুর্ব্যবহারের শিকার না হন। আপনাদের লড়াইকে কুর্নিশ! এই ধরণের লড়াইগুলোতে রাইজ অফ ভয়েসেস আপনাদের পাশে থাকবে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যপ্রযুক্তি কর্মচারী ইউনিয়নে যোগদানের লিঙ্ক: https://www.aiiteu.org/join-us/