অনু-প্রাণী তো!

গত কয়েকদিন ধরে মাথার মধ্যে কিছু কথা, ভাবনা ঘোরাফেরা করছে। যখনই সেগুলো সাজিয়ে নিয়ে লিখতে বসি, ঠিক তখনই কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে যায়। কিছুতেই কাবু করে উঠতেপারছিলাম না। মুশকিলটা হচ্ছে, আমি তো আর মনীষী নই, যে খাতা কলম নিয়ে বসবো, আর ভেতর থেকে গলগল করে বাঁধ ভাঙা নদীর মতো লেখা বেরিয়ে আসবে। তাই ঠিক করলাম টুকলি করব। সমাজে উপাদান তো আর কম নেই।
এবার আসি গল্পের প্রেক্ষাপটে। একটা প্রচলিত জাপানি গল্প আছে হাচিকো বলে একটি কুকুরের জীবন নিয়ে।
হাচিকো কুকুরটি ভালোবেসে মালিকের জন্যে প্রাণ দিয়েছিল। সেই গল্পটা বললাম না আর, করব তো টুকলি। যাই হোক, এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। যদি ভুল করে কেউ আঘাত পান ক্ষমা করে দেবেন।
এই গল্পটাও একটি কুকুরের। মোলায়ম লোমওয়ালা একটি “গোল্ডেন” রিট্রিভারের। ওর মালকিন ওকে আদর করে ডাকে ছাগল। ছোটবেলা থেকে খুবই আদরের এই ছাগল।
রোজ সকালে পরিপাটি করে ছাগলকে স্নান করিয়ে দুপুরের খাওয়ার সাজিয়ে মালকিন চলে যান তার কর্মস্থলে। মালকিনের কর্মস্থল বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায়, ছাগল বেচারাকে দিনের অনেকটা সময় একাই থাকতে হয়। তারপর সন্ধ্যাবেলা মালকিন এলে ছাগল অনেকক্ষন আদর খায়, খেলা করে আর সারাদিনের সমস্ত মান অভিমান পূরণ করে নেয়।
এরকম করে দিন যায়। ছাগল আস্তে আস্তে বড় হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সে কেমন যেন মনমরা হতে শুরুকরে। প্রতিদিনের রুটিনটা আর ভালো লাগে না ওর।
যতক্ষণ ছাগলের মালকিন বাড়ি থাকে ততক্ষন সে ভাল থাকে, তারপর তো সারাদিন একলা। তারও ইচ্ছে করেসে বাইরে গিয়ে বাকি সবার মত খেলা করবে, ঘাসে গড়াগড়ি খাবে, খোলা মাঠে দৌড়বে। কিন্তু কিছুই হয় না।
যাই হোক, এভাবে দিন চলছিল।একদিন ছাগলের মনে হল, না আর না.. এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না। কিছু একটা করতে হবে।
সেদিন মালকিন অফিসে বেরিয়ে গেলে কোথাও ঘুরে আসবে বলে ভাবল ছাগল। তারপর খুজতে লাগলো কি করে বাড়িরবাইরে যাওয়া যায়। হঠাৎ করে ওর চোখে পড়ল বাড়ির পিছনের পাঁচিলের ভাঙা জায়গা। বাহ্, খাসা তো! লাফ দিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে আবার ঘুরে ফিরে সময় মত বাড়িতে চলেও আসতে পারবে ।
ভাবা মাত্রই কাজ। দে লাফ। ছাগল চলল বাইরের পৃথিবী দেখতে। একেবারে ছাড়া গরুর মত। বাইরের পৃথিবীর আনন্দে মশগুলহয়ে ছাগল এপাড়া সেপাড়া হয়ে বড় রাস্তা পেরিয়ে চলল অনেক দূরে। যত সে ঘুরছে তত তার আনন্দ বেড়ে যাচ্ছে।
অনেক ঘোরাঘুরির পর ছাগলের খেয়াল হল খিদে পাচ্ছে, তবে এবার বাড়ি ফেরা যাক। কিন্তু ফিরবে কোথা দিয়ে? সে তো রাস্তা চেনেনা। এদিকে খুব খিদে পেয়েছে। কি আর করা যায়। মনের দুঃখে সে একটা পার্কের ভিতর ঢুকে শুয়ে পড়ল। আর সারাদিনের ক্লান্তিতে অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।
এরপর কেটে গেছে অনেকদিন। ছাগল এখন রাস্তাতেই থাকে। ফেলে দেওয়া খাবার খায়। তার চেহারায় সেই জেল্লাওআর নেই। খুব মনমরা হয়ে থাকে, আর ভাবে বেশতো ছিলাম, কেন যে পালাতে গেলাম। না হয় একটু দমবন্ধ হত।কিন্তু খাওয়া দাওয়া, আরাম সবই ছিল। এখন সে সব কোথায় আর?
এই ভাবে আরও কয়েকদিন কাটল। একদিন সে পার্কে শুয়ে আছে, হঠাৎ করে একটা চেনা গলার আওয়াজ তার কানে গেলো। বুকে এক রাশ আশা নিয়ে, আওয়াজ লক্ষ্য করেএগোতে লাগল ছাগল। দূর থেকে দেখতে পেল তার মালকিনকে। উনি তখন একজনকে বলছে, যারা ভুল স্বীকার করে ফিরে আসতে চায়, তাদের ফিরিয়ে নেওয়া উচিৎ। শুনে, দৌড়ে গিয়ে মালকিনের পা ধরে শুয়ে পড়ল ছাগল। কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, আমি ভুল করে আপনাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আমি আপনার পায়ের তলাতেই থাকতে চাই আজীবন। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
তারপর আর কি? ছাগলকে কোলে তুলে নিলো মালকিন।
তাই তো বলি, কুকুরের গল্প পড়তে পড়তে কখন যে ছাগলের গল্প পড়ে ফেলবেন, তা ধরতে পারবেন না। সবই গল্পকুশলীর কৌশল।
Comments are closed.