স্যার আপনি কোথায়? / The Utsashree Files

উত্তর দিনাজপুরের করণদীঘি ব্লকের রসাখোয়া উচ্চ বিদ্যালয়। ছাত্র সংখ্যা ছয় হাজার। ঠিক শুনছেন ছয় হাজার। শিক্ষক শিক্ষিকা ২৩ জন। সাথে পাঁচজন পার্শ্ব শিক্ষক। পাশেই জুনিয়ার বালিকা বিদ্যালয়। মাত্র একজন শিক্ষিকা ও ২০০ জন ছাত্রী। সেই শিক্ষিকাও বদলি নিয়ে চলে গেলেন। চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন কাকে? একজন গেস্ট টিচারকে। ডালখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগ বন্ধ শিক্ষকের অভাবে। কানকি জুনিয়ার বালিকা বিদ্যালয়ের একই চিত্র। শুধু উত্তরবঙ্গ বা উত্তর দিনাজপুর নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলার গ্রামীণ হাইস্কুলগুলো এখন শিক্ষক শূন্য পান্থশালা। পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডি ব্লকে অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষকেরা হাইস্কুলে পড়াবেন।

এক সময় স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রচুর যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতে এসেছিলেন। অনেকে দীর্ঘ সময় গ্রামের স্কুলেই থেকে গেছেন। এসএসসি প্রথম দিকে শিক্ষক বদলি নিয়ম আনেনি। এক স্কুল থেকে নিজের পছন্দের স্কুলে বদলি নিতে হলে, পুনরায় এসএসসি পাশ করে নতুন চাকরি নিয়ে যেতে হত। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য জেনারেল ট্রান্সফার, মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ম এসেছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা, এর মাধ্যমে বদলি নিয়েছেন। এই বদলির সংখ্যাটা গণহারে ছিল না। গত একবছর ধরে, মাননীয়ার প্রিয় উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে গণহারে শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রামে স্কুল থেকে বদলি নিয়ে চলে গেছেন, যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ, উৎসশ্রী প্রকল্পে নিয়ম না মেনেই ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক শিক্ষিকাগণ অসুস্থতা সহ বিভিন্ন অজুহাতে স্কুলকে শিক্ষক শূন্য করে বদলি নিয়েছেন। অন্যদিকে গত প্রায় দশ বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। গ্রামের স্কুলগুলোতে শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না। এর ফলেই শিক্ষার বেহাল অবস্থা। স্কুলে শিক্ষক নেই।

রাজ্যের শাসক দল এসব নিয়ে মুখ খুলবে না জানা কথা। খাতায় কলমে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি আদৌ এসব নিয়ে ভাবে বলে জানা নেই। বাকি থাকলো বামপন্থী দল ও তাদের ছাত্র যুব সংগঠন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা হাইস্কুলে লেখাপড়া শিখুক এই ভেবে কি বামপন্থী ছাত্র যুব সংগঠনগুলি আন্দোলন সংগঠিত করবে? না কি পরের ছেলে পরমানন্দ যতই উচ্ছন্নে যায় ততই আনন্দ?

এখন দেখার গ্রামের বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা শোধরানোর প্রয়োজনে কেউ পথে নামে কি না?