পা মেলানোর পালা / The Festival of Toghatherness

একটা নাগরিক মিছিল!

অবধারিত ভাবে মানুষ বুদ্ধিজীবীদের মাথা গুনবে! যাঁরা এলেন না তাঁদের ‘চটিচাটা’ বলে দাগিয়ে দেবে এক শ্রেণীর বাম অত্যুৎসাহী সমর্থক। তাদের সঙ্গে তাল দেবে একদল তথাকথিত ‘রামভক্ত’। আর অন্যদিকে যাঁরা পা মেলাবেন তাদেরকে প্রতিপক্ষ শিবির থেকে বলা হবে ‘মাকু’ বুদ্ধজীবী! সিউডোসেকু! আর আশ্চর্যের বিষয় এক্ষেত্রেও ‘সানাই’র পোঁ হবেন সেই ‘রামভক্ত’রা। আর এমনই বিতর্কের উষ্ণতায় সেঁকতে সেঁকতে আসল ‘চাকরি চুরি’র ইস্যুটা কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে যাবে একদিনের জন্য।

এতটা পড়ে আপনারা যদি ভাবেন আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস নাগরিক মিছিলের বিরোধী, তাহলে ভুল ভাবছেন। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। অন্যায়ের প্রতিবাদ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই আমাদের মিছিলে পা মেলানো উচিৎ সেই দায়বদ্ধতা থেকে। সেখানে কে এলো আর কে এলো না তা দিয়ে গলাবাজি না করে, বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে গলা ফাটানোটা জরুরি। আর তা না করতে পারলেই বাম-ডান রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!

বরং প্রতিবাদের জনসমুদ্র তৈরি করতে পারলে, কেউ আলাদা করে সুশীল-বুদ্ধিজীবী খুঁজতে যাবে না।

আপনারা হয়তো এর কাউন্টারে বলবেন এই মিছিলের উদ্যোক্তা তো বামেরা। কাজেই এই মিছিলে পা মেলালে আমি ‘বুদ্ধজীবী’ ‘সিউডোসেকু’ হয়ে যাব। তাই এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। কিন্তু তাবলে ঘরে বসে থেকে একটা নিরাপদ দূরত্ব থেকে ট্যুইট/ফেসবুক পোস্ট করে দায় সেরে ফেলাটা কাজের কথা নয়। ‘অরাজনৈতিক’ বা ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’র এই খেলাটা আদৌ কার্যকর নয়। আজকে বামেদের প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলালে, কালকে ডানপন্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলানো যাবে না, এমন দাসখত তো আর দিতে হচ্ছে না! শাসক কিন্তু এভাবেই ভাগ-বাটোয়ারা করে প্রতিবাদকে দুর্বল করে দিতে চায়। তাই ভেবে দেখবার অনুরোধ রইলো।

এরপরেও আমরা জানি বাঙালী একটি শিল্পী-সাহিত্যিক- বুদ্ধিজীবী অধ্যুষিত জাতি। তাই তাদেরকে অস্বীকার করা এক রকম বাতুলতা। অনেক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী যাঁরা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরা পরবর্তী পরিবর্তনের জমানায় যত শাসকের দুর্নীতি-চুরি-চিটিংবাজি-ভোটলুঠ উন্মোচিত হয়েছে, তত যেভাবে বাম কর্মী-সমর্থকদের হাতে আজকের সমাজমাধ্যমের ভাষায় ‘ট্রোলড’ হয়েছেন, তারপর তাঁরা যে আর বামেদের নাগরিক মিছিলে পা মেলাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এর দায় কিন্তু সেইসব বাম কর্মী সমর্থক থেকে বামনেতৃত্বকেই নিতে হবে। সাঁকোটা দুলছে। ছিঁড়ে যায়নি। কাজেই পায়ে-পা মিলিয়ে সাঁকো পেরিয়ে যাওয়ার কাজটা দু-পক্ষেকেই করতে হবে। আর সাঁকোটা পেরোতে পারলেই সামনে প্রতিবাদের জনসমুদ্র! স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে মুক্তিলাভের পথ। তাতে পা মেলানোর সুযোগ।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস