টাকা হাওয়া! / Rupee falls
টাকার দাম হুড়মুড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে এই মুহূর্তে তাবড় তাবড় রাজনৈতিক দল থেকে জনসাধারণ, কারোরই হেলদোল চোখে পড়ছে না সেইভাবে। চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার কথা ছেড়ে দিন, এরা এখন প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে। এই নিয়ে আপনার চারপাশেও প্রশ্ন ভেসে বেড়ায় না! কিন্তু কেন?
কারণটা খুব সহজ। আসলে টাকার মূল্যের পতনের ফলে দেশীয় অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়ে, তা সাধারণ মানুষকে বোঝানোই হয় না। আজ আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস অত্যন্ত সহজ উপায়ে টাকার মূল্যের পতন এবং দেশীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাবের অন্যতম একটা কারণ সহজভাবে বলার চেষ্টা করব।
আমাদের দেশ একটি জনবহুল দেশ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮% মানুষ বসবাস করেন এই দেশে। জীবনধারণের জন্যে আমরা প্রতিদিন যা যা ব্যবহার করি, তার সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না এই দেশে। তাই সেই পণ্যগুলো আমাদের আমদানী করতে হয় অন্য দেশ থেকে। যেমন আপনি যে মোবাইল ব্যবহার করেছেন হয়ত সেটা, কখনো আবার পেঁয়াজ, আর সবসময়ের জন্যে কফি থেকে পেট্রোল-ডিজেল তো আছেই।
এছাড়াও আরো অনেক পণ্যই আমদানী হয় এই দেশে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে আমাদের দেশ মোট কত টাকার পণ্য আমদানি হয়েছিল জানেন?
প্রায় ৪৮ লক্ষ কোটি টাকা।
আজ, জুনের ১৬, দেশে ১ ডলার পিছু টাকার মুল্য ৭৮.০৫ টাকা। আজ থেকে ঠিক দুই দিন আগে, জুনের ১৪ তারিখ টাকার দাম ছিল, ৭৭.৯৯ টাকা। আজকের চেয়ে ৬ পয়সা কম।
ধরুন, আজ আপনার ইচ্ছে হল আমেরিকার একখান কলম কিনবেন, যার দাম ১ ডলার। আপনি সেটা আজ কিনলে আপনাকে দিতে হচ্ছে ৭৮.০৫ টাকা, দুই দিন আগে কিনলে আপনাকে দিতে হত ৭৭.৯৯ টাকা।
মানে, মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে একই জিনিস আপনি কিনেছেন, ৬ পয়সা বেশি দাম দিয়ে। এবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন ৬ পয়সা এমন আর কি?
ভারতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানী হয়। আর টাকার দাম পড়ার ফলে, মাত্র দুই দিনে দেশকে প্রতি ডলারে ৬ পয়সা করে অতিরিক্ত খরচ করতে হলে, মোট কত টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে?
৯ কোটি, একদিনে।
এই টাকার তাহলে কি হবে? সরকার তো ইচ্ছেমত টাকা ছাপাতে পারে না। ভরপাই হবে তবে কিভাবে? গোল! নাহ্, গোল হতে যাবে কেন? আপনার আমার পকেট কেটেই ভরপাই হবে, সরকার নিজের গাঁট থেকে একটি পয়সাও দেবে না। যার ফলশ্রুতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। আজ একটা কারণ বললাম, অন্যদিন অন্য একটা কারণ বলব। তবে, ৯ কোটি অঙ্কটা নেহাত কম নয়।
ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন।
পুনশ্চ: আজ যখন প্রতিবেদন লেখা শুরু করেছিলাম, তখন ডলার পিছু টাকার দাম ছিল ৭৮.০৫ টাকা, এখন বিকেল ৩:৩৫, টাকার দাম দুই পয়সা বেড়ে ৭৮.০৭ টাকা। অর্থাৎ আমদের এই প্রতিবেদন লিখে শেষ করতে করতে দেশের মোট ৭৫ লক্ষ টাকা হাওয়া।
Subimal saha
এটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল কি?