আমাদের বুথে, ভোট দেবে ভূতে / Presidential Election

গত পরশু, মানে সোমবার ১৮ই জুলাই, ২০২২, কয়েকটা ছবি বিশেষতঃ বাংলার সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুনভাবে ভাইরাল হল। উপলক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।

আমরা দেখলাম তথাকথিত বাকি দেশনেতাদের মত আমাদের রাজ্যেও নির্বাচিত সাংসদ এবং বিধায়করা হাসিমুখে লাইন দিয়ে সেলফি/গ্রুপফি তুলতে তুলতে বিধানসভায় লাইন দিয়ে ভোট দিলেন।

অথচ একটাও বোমা পড়ল না। কোথাও কোন ঝুট ঝামেলা হল না। পুরোটাই শান্তিতে নির্বিঘ্নে মিটে গেল।
বাংলার নির্বাচনী ইতিহাসে এমন দৃশ্য শেষ কবে দেখা গেছে, বলতে গেলে মনে প্রায় পড়েই না। এ বোধহয় শুধু বিধানসভার চৌহদ্দিতেই সম্ভব। সেইভাবে দেখতে গেলে দেশ পরিচালনায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বা এক্তিয়ার খুবই সীমিত। সরাসরি জনগণের টাকার বিভিন্ন খাতে বিলি-বল্টনেও রাষ্ট্রপতির কোন হাত থাকে না। এজন্যেই কি না জানি না, এই পদের নির্বাচন নিয়ে পপুলিজমের তাস খেলাখেলি চললেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আকচা-আকচিটা কম।

বরং শাসক বা বিরোধীপক্ষের কোন বয়ঃজ্যেষ্ঠ নেতাকে স্বসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় জানাবার (অন্যমতে দলের সর্বোচ্চস্তরে জায়গা খালি করতে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলবার) একটা নিশ্চিত ঠিকানা হল রাইসিনা হিলস। অনেক ক্ষেত্রেই এর সাথে অতিরিক্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয় দলিত, সংখ্যালঘু ইত্যাদি! এবার যেমন বলা হচ্ছে আদিবাসী! এসব যে নেহাতই দেশের অন্য সাধারণ নির্বাচনগুলোতে আমাদের মন ভিজিয়ে ফায়দা তোলবার প্যাঁচ-পয়জার, তা আমরা অনেকেই জানি। কারণ এর আগে সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপতির কার্যকালে দেশজোড়া দাঙ্গা হয়েছে। দলিত রাষ্ট্রপতির কার্যকালে খোদ রাষ্ট্রপতির নিজের রাজ্যেই নির্বিচারে দলিত নির্যাতন ও হত্যা সংগঠিত হয়েছে। সেভাবে দেখতে গেলে স্বাধীনতার পর থেকে এতজন “পিছড়েবর্গে” র রাষ্ট্রপতি আমরা পেয়েছি যে আজ ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে আমাদের দেশে পিছড়ে বর্গের কোন মানুষেরই থাকবার কথা নয়! কিন্তু বাস্তব কি, আমরা জানি। তাই খুঁচিয়ে ঘা করতে চাই না।

শুধু এটুকুই বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলে রাজনৈতিক অবসর জীবনের শুরুটা বেশ জাঁকিয়ে করা যায়। এলাহি থাকা খাওয়ার ব্যন্দোবস্ত! “এলাহি” শব্দটাও বোধহয় কম পড়ে যাবে জাঁকজমকের বহরের সামনে। দু-একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে শুধু ঘরই আছে ৩৪০ টা। করিডরের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। বাগানের আয়তন ১৯০ একর। এই বিশাল প্যালেসটি এবং প্যালেসের বাসিন্দা মানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির ও তার পরিবারের দেখভালের জন্য সরকারী কর্মচারী আছেন ৫৪৫ জন। যার মধ্যে রান্নার লোক আছেন ২৮ জন, গাড়িচালক ৩৭ জন, সাফাইকর্মী ৫৭ জন এবং বাগান রক্ষণাবেক্ষনের মালী আছেন ১৮৪ জন। আশাকরি এরপর আর কিছু বলতে হবে না। শুধু জানবেন একজন রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের পেছনে এবং রাষ্ট্রপতি ভবনটির রক্ষনাবেক্ষনের পেছনে বাৎসরিক আনুমানিক ৭০ কোটি টাকার আশপাশে খরচ করা হয়, যার পুরোটাই আসে আমার আপনার করের টাকা থেকে।

আর এজন্যেই আমাদের জানবার অধিকার আছে বৈকি ঠিক কোন জাদুবলে, যে ব্যক্তির পেছনে বাৎসরিক খরচ কমবেশি মাত্র ৭০ কোটি টাকা, তার নির্বাচনে এত আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা! এত হাসিখুশি উৎসবের মেজাজ। অথচ সরসারি জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনের দিন, নির্বাচিত হলে যারা জনগণের দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এমন ঢিলেঢালা ভাব থেকে কেন! ভোটদাতা অথবা প্রার্থীদের ঠোঁটের কোণের এমন নির্লিপ্ত হাসি, যা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন দেখা গেল, তা মিলিয়ে গিয়ে কচুবনের গপ্পো সামনে চলে আসে কেন! একটু বোমা পড়বে না, বুথের সিসিটিভির মুখ ঘুরিয়ে দেদার ছাপ্পা পড়বে না, কয়েকজন অত্যুৎসাহী টিভি সাংবাদিক বুম-ক্যামেরা নিয়ে তাড়া করে ভুয়ো ভোটার ধরবেন না, এমন সব অবশ্যম্ভাবী দৃশ্য ছাড়া বাংলার ভোট বা নির্বাচন ভাবা যায় না। এমনকি পরলোক থেকে তেনারা নেমে এসেও বুথে বুথে ভোট দিয়ে যান এমন অনন্য নজিরও এই বাংলার নেতা-পুলিশ-নির্বাচন কমিশনের মিলি ভগত তৈরি করে ফেলেছে।

আর এইসব অভিজ্ঞতায় ভর করে আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের বেশ কিছু পাঠক এমন নিরামিষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের “হাসিমুখ ছবি” বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বিধানসভার মধ্যে বলে তবু বোম পড়েনি, দরজা বন্ধ করে ছাপ্পা পড়েনি বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু বিগত একদশকে বিধানসভা অধিবেশন চলাকালে হাতাহাতি লাঠালাঠি বা বিধানসভা ভাংচুরের যেসব নজির রয়েছে সেসব মনে করলে, আমাদের রাজ্যের বিধায়ক সাংসদরা নিজেদের মধ্যে ভোট দিতে এসে একটুও খিস্তি-খাস্তা বা ধাক্কাধাক্কি করেননি এটা অনেকেই মানতে চাইছেন না।

পাশাপাশি আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন ঠিক করে খোঁজ খবর করতে, তাদের দাবী পরলোকগত কোন বিধায়কের ভোট পড়েনি এটা নাকি হতেই পারে না! কারণ আমাদের রাজ্যে সকাল সকাল মৃত ব্যক্তির ছাপ্পা পড়ে যাওয়াটাই দস্তুর!
ফলে বিধানসভার “দ্বিজেনবাবু” কে খুঁজে না পেলে আমাদেরকে অনেকেই আর সিরিয়াসলি নিতে চাইছে না!

কাজেই পরামর্শ চাই। পরামর্শ দিন কমেন্ট বাক্সে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চঃ এসব দেখে “শূন্য বাম” বা “ফুটকি বাম” সমর্থকদের অনেকে ফুট কাটছেন, বিজেমূল কি আর এমনি এমনি বলি! আসলে চোরে চোরে সব মাসতুতো-পিসতুতো ভাইবোন! ভাব-ভালোবাসা কি শুধু “ফিশফ্রাই” হবে! ফল-মিষ্টি-আম-কুর্তা হয়ে এখন নাকি চা-বিস্কুটে নেমে এসেছে!

আমরা অবশ্য শূন্যকে পাত্তা দিইনি, মাছি তাড়ানোর মত ভাগিয়ে দিয়েছি।