সংবাদ, সাংবাদিক ও স্বাধীনতা / Below the Belt Attack

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পোর্টাল। আমরা মানুষের আওয়াজ কলমে তুলে আলোচনা-সমালোচনা করি। প্রয়োজনে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করি, সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করি। সেটা তাদের একপেশে সংবাদ পরিবেশনের জন্য! খবরের নামে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের তরজা আর ট্যুইট নিয়ে সারাদিন ধরে লাফালাফি দাপাদাপি করার জন্য! নিরপেক্ষতার মোড়কে প্রতিদিন প্রাইম টাইমে সান্ধ্যকালীন তরজায় রাজ্য বা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শাসক দলের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করার জন্য! যে প্রশ্নগুলো তুললে এই দুই শাসকদলের পক্ষ থেকে উপস্থিত “গেস্ট” মুখপাত্ররা বেকায়দায় পড়ে যাবে সেইপ্রশ্ন গুলো কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। সর্বোপরি সারা বাংলার বহু সমস্যা ও গুরুত্বপূর্ণ খবরকে জাস্ট চেপে দেওয়ার জন্য। এমনকি রাজ্যে নেওয়া বামফ্রন্টের বহু বড় বড় কর্মসূচীকে এনারা নির্দ্বিধায় ব্ল্যাক আউট পর্যন্ত করে দেন। তাদের নামে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ান। আর এসবই এনারা করে থাকেন এডিটোরিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্সের নামে!
আর রাইজ অফ ভয়েসেস এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে। মুখ খোলে। কারণ, আমরা মনে করি সংবাদমাধ্যম হলো গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাদের ক্ষমতার কুর্সির চার নম্বর পায়া হওয়ার কোন অধিকার নেই।
কিন্তু আমরা কখনও সংবাদমাধ্যমের কোন সাংবাদিক কোন দেশনেতা বা মন্ত্রী-সান্ত্রীদের সাথে ‘পোজ’ দিয়ে ছবি বা সেলফি তুললে সেদিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে তাঁদের শাসক ঘনিষ্ঠতার উদাহরণ হিসেবে সেটিকে তুলে ধরে তাঁদের সমালোচনা করি না। একজন সাংবাদিক দেশের প্রধানমন্ত্রী বা কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অথবা রাজ্যপালের সাথে ছবি তুলতেই পারেন। তারপর সেই ছবি তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সমাজমাধ্যমের পাতায় বা হ্যান্ডল থেকে তা পোস্টও করতে পারেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত পরিসর। এবং চাইলে তারপরেও পেশাদারিত্বের তাগিদে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে প্রধানমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট সেই মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপালের কাজকর্মের সমালোচনাও তারা করতেই পারেন। যদিও সেটা তারা অনেকক্ষেত্রেই করে উঠতে পারেন না। আমাদের নজর থাক তাদের সেই ‘না-পারা’টার দিকে। তাদের পোজ দেওয়া ছবির দিকে নয়। সাংবাদিকদের কাজের সমালোচনা হোক, তাদের ছবি তোলার নয়। এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ তাদের সংবিধান প্রদত্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল!

কিন্তু এরপরেও বেশ কিছু অত্যুৎসাহী আমজনতা সেটা করছেন। হয়তো না জেনে না বুঝেই! কিন্তু তাদের সেই ‘না-জানা’ বা ‘না-বোঝা’টাকে আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস আর লঘু চোখে দেখতে পারছি না। কারণ আজ আমাদের নজরে এলো শাসক বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর থেকে জনৈক “প্রগতিশীল” “মুক্তমনা” দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সেই একই ভুল করে বসেছেন! আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস দেখে আঁতকে উঠেছি। মনে হলো এ নিয়ে দু-চার লাইন না লিখলেই নয়। আর তাই আজকের এই পঞ্চব্যঞ্জন।
কোন সাংবাদিক কার সাথে পোজ দিয়ে ছবি তুলবেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত পছন্দ বা পার্সোনাল প্রেফারেন্স। আমাদের কারও তাতে হস্তক্ষেপ করবার অধিকার নেই। কিন্তু কোন সাংবাদিক দিনের পর দিন এডিটোরিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্সের নামে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকলে সেটা নিয়ে সমালোচনা করবার অধিকার আমাদের সবার আছে। কাজেই সাংবাদিকের পার্সোনাল প্রেফারেন্স আর সংবাদমাধ্যমের এডিটোরিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স এই দুটো এক জিনিষ নয়। কাজেই এ দুটোকে গুলিয়ে ফেলবেন না।
যদিও আমরা সবাই জানি, শাসক লালিত সাংবাদিককূল ও সংবাদমাধ্যম যথাক্রমে তাদের পার্সোনাল প্রেফারেন্স এবং এডিটোরিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স দুটোকে গুলিয়ে ফেলেছে। সাংবাদিকতা এখন এদের শাসকের প্রতি ‘এডিটোরিয়াল প্রেফারেন্স’এ এসে ঠেকেছে!
কিন্তু তা বলে এদেরকে “below the belt” আক্রমণ করে অযথা এদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবেন না। পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে ভোঁতা করে দিতে এরা কিন্তু চায়, আমি আপনি ভুল করি।
আর এরপরেও যারা অযাচিতভাবে ‘স্টেপ আউট’ করবেন, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন, তাদের সেই কাজকে রাইজ অফ ভয়েসেস কোনভাবেই সমর্থন করবে না। প্রতিবাদ করবে।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.