‘লুঠ’ গণনা নাকি ‘গণনা লুঠ’ / The Midnapur Files
আজ একটা খবর না দিলেই নয়!
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর -২ ব্লকের জোতঘনশ্যাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খবর।
মাস খানেক আগে হওয়া পঞ্চায়েত ভোটে এলাকার ২২ আসনের মধ্যে ১৩ টা আসন পায় তৃণমূল, ৬টি আসন পায় বিজেপি এবং ৩টি আসন যায় সিপিআই(এম) এর দখলে । ভোট শতাংশের বিচারে তৃণমূল পায় প্রায় ৫০% ভোট, বিজেপি পায় ৩৭% ভোট এবং সিপিআই(এম) পায় ১৩% ভোট।
এই ফলাফল দেখে যে কেউ ভাবতেই পারেন যে জোতঘনশ্যাম পঞ্চায়েত এলাকাতে শাসক তৃণমূলের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষজন প্রধান বিরোধী হিসেবে বিজেপিকেই মনে করে। এখানে মূল লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। বামেরা ৩টি আসন পেলেও সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি।
কিন্তু গত রবিবার হওয়া এলাকার একমাত্র কৃষি সমবায় সমিতির নির্বাচনের ফলাফল বিগত পঞ্চায়েত ভোটের সব ধারণাকে বলা যায় কার্যত ধূলিসাৎ করে দিল। এমনকি স্বচ্ছভাবে এলাকাতে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল কি না সে প্রশ্নও তুলে দিল। এর পাশাপাশি গণনাকেন্দ্রে গণনার সময় ব্যপক কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনাকেও উস্কে দিলো।
আমরা বলছি ডোঙাভাঙ্গা গোমোকপোতা সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনের কথা। এটি এই জোতঘনশ্যাম পঞ্চায়েত এলাকায়। রবিবার এখানে ভোট হয়। গণনা হয় সোমবার। মোট আসন ছিল ৬৭। গণনার শেষে দেখা যায় সিপিআই(এম) সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৯ টি আসনে। বিজেপিপন্থী প্রার্থীরা জয়ী হন ২৫ টি আসনে। আর মাস খানেক আগে পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাওয়া তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন মাত্র ২ টি আসনে। একটি আসনে সমান সমান ভোট পাওয়ায় টস হবে। আর এই অভাবনীয় ফলের পরেও বামেদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয় যে সমবায় সমিতির একদল আধিকারিক অতিরিক্ত নকল জাল ব্যালট ঢুকিয়ে বিজেপিকে ২৫ টা আসনে জিতিয়েছে।
কিন্তু এসব রাজনৈতিক আকচা-আকচিতে না ঢুকেও যে প্রশ্ন গুলো অবধারিত ভাবে উঠছে তা হলো মাত্র মাস খানেক-মাস দেড়েকের ব্যবধানে কোন পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের এতটা রাজনৈতিক ভোল বদল কি সম্ভব? তবে কি পঞ্চায়েত ভোটের নামে এলাকায় প্রহসন হয়েছিল? নাকি গণনার সময় বামেদের ছাপ দেওয়া ব্যালট গুলো খালে বিলে ফেলে দিয়ে তার জায়গায় তৃণমূলে ছাপ মারা নকল জাল ব্যালট ঢুকিয়ে গুনে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে! আর তাই যদি হবে তাহলে আরও একটা প্রশ্ন আমাদের মনের মধ্যে খচখচ করছে যেটা না করলেই নয়। পঞ্চায়েত ভোটে বেছে বেছে কেন শুধু সিপিআই(এম)র ছাপ মারা ব্যালট গুলোই সরিয়ে ফেলা হলো? কেন বিজেপিতে ছাপ মারা ব্যালট গুলো সরানো হলো না? তবে কি বামেদের তরফে যে চিরাচরিত “বিজেমূল” বাইনারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার কথা বারংবার বলা হয় সেটা সত্যি? পরপর এই প্রশ্ন গুলো কিন্তু এরপর উঠবেই।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশন ও সরকারি আধিকারিকরা মিলে জোতঘনশ্যাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেমন নির্বাচন সংগঠিত করলেন যা মাত্র একমাসের ব্যবধানে উলটে পালটে যায়! তাঁরা ‘লুঠ’ হওয়া ভোট গুনেছেন নাকি ভোট গণনার নামে আস্ত গণনা পদ্ধতিটাই লুঠ করেছেন এলাকার মানুষ অবশ্যই তার কৈফিয়ত চাইবেন।
শাসক ও নির্বাচন আধিকারিকরা তৈরি তো!
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্রঃ-
a) http://portal.wbsec.org/
b) https://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2023-08-22/202308220022145.jpg&category=0&date=2023-08-22&button=
Comments are closed.