দেওয়ানদিঘিতে দুষ্কৃতীরাজ / The Dewandighi Story

আমরা অপেক্ষা করছিলাম। বাংলার সংবাদমাধ্যমের যাদবপুর হ্যাংওভার কাটবে কবে? কিন্তু না। কাটেনি। খুব শিগগিরি কাটবে বলে মনেও হচ্ছে না!

আর তাই ফের একটা খবর যেটা নিয়ে ন্যুনতম হইচই বা আগ্রহও দেখালো না বঙ্গ মিডিয়া সেটাকে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে হচ্ছে।

তুহিনা খাতুনকে মনে আছে কি আপনাদের! কেন মনে থাকবে? সে হতভাগিনী ও তার পরিবারের করুণ কাহিনী তো বঙ্গ মিডিয়া দেখায়নি। এমনকি মুসলমান হওয়ায় রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির সিলেবাসের বাইরে, ফলে শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদার-দিলীপ ঘোষেরা তুহিনা খাতুন ও তার পরিবারের দুর্দশার কথা ট্যুইটও করেননি, পাশে দাঁড়ানো তো দূরে থাক! আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস সীমিত ক্ষমতা ও পরিধির মধ্যেই প্রতিবেদন করে চেষ্টা করেছিলাম মূলস্রোতের মিডিয়া ও মানুষজনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে। লিখেছিলাম একাধিক প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদন গুলোর লিঙ্ক নীচে দেওয়া হলো। ইচ্ছুক পাঠক চাইলে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন।

১) মার্চ ৬, ২০২২: অনুপ্রাণিত বাদশা https://riseofvoices.com/bengal-trifles/tuhina-case/

২) মার্চ ২৫, ২০২২: “নীল-সাদা”-খাঁকি
https://riseofvoices.com/pentagony/blue-white-and/

৩) মে ২৭, ২০২২: সেইসব মৃতদেহগুলিhttps://riseofvoices.com/pentagony/the-sigh-of-the-corpse/

২০২২ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। তুহিনা খাতুন ও তার দুই বোনকে স্থানীয় তৃণমূল দুষ্কৃতী ও এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর বসির আহমেদ ওরফে বাদশা বেশ কিছুদিন ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তাঘাটে দফায় দফায় কু-প্রস্তাব ও শ্লীলতাহানি করে। নিজের অনুগামীদের দিয়ে তুহিনাদের বাড়ির দেওয়ালেই তুহিনাদের তিন বোনের কুরুচিকর ছবি এঁকে দিয়ে যায়। তুহিনার পরিবারের পক্ষ থেকে বারংবার পুলিশকে জানানো হলেও স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে দিন কে দিন বাড়তে থাকে বাদশা বাহিনীর সাহস। আর এসবের মধ্যেই যখন বর্ধমান পরসভার লুঠের ভোটে সেই কুখ্যাত বাদশা ফের একবার কাউন্সিলর হিসেবে জিতে যায়, তখন ভয়ে ও লজ্জায় তুহিনা খাতুন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে। আর আত্মঘাতী তুহিনা ও তার তৃণমূল সমর্থক পরিবারকে হেনস্থা করা দুষ্কৃতী বসির আহমেদ ওরফে বাদশা আজ পুলিশের খাতায় ফেরার হয়েও বর্ধমান পুরসভার তৃণমূলী কাউন্সিলর। শোনা যায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের অনুগামী সে। আর তাই মিডিয়া চুপ। ‘টুঁ’ শব্দ করেনি। পুলিশও হাত গুটিয়ে বসে। বার্তা স্পষ্ট। শাসকদলের জামা পড়ে যা খুশি করেও পার পাওয়া যায়। সে বার্তা ছড়িয়ে যায় দিকে দিকে।

ফলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেরী হয় না।। এবারও সেই বর্ধমান। এবার দেওয়ানদিঘি থানার মির্জাপুর গ্রাম। স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী তথা বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র চেয়ারম্যান কাকলী তা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে গ্রামের জনৈকা মহিলা ও তার পরিবারের একটি জমি নিয়ে ঝামেলা চলছিল। মহিলা ‘জমি হাঙর’ তৃণমূলীদের সামনে নতি স্বীকার করেননি। বারে বারে তাই তাঁকে স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়ে হেনস্থা করা হয়। চলে লাগাতার হুমকি-মারধর। শেষে একদিন স্বামী ও সন্তানের অনুপস্থিতিতে মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করে তৃণমূল নেত্রী তথা বর্ধমান ডেভলাপমেন্ট অথরিটি’র চেয়ারম্যান কাকলী তা’র এক অনুগামী মাতব্বর। মহিলা থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরিবর্তে তার পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছে বসত বাড়ি বেচে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে! এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাকলী তা বা তাঁর অনুগামী ধর্ষক গ্রেপ্তার হয়েছে বলে আমাদের কাছে কোন খবর নেই। আপাতত ধর্ষনের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য শাসকদলের তরফে চলছে লাগাতার হুমকি। এমন কি ঐ মহিলাকে পরিবারের লোকদের সামনেই নগ্ন করে মারধর পর্যন্ত করা হয় বলে অভিযোগ।

এদিকে বঙ্গ মিডিয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চত্বরে বিয়ারের বোতল আর ব্যবহৃত কন্ডোম খুঁজতে ব্যস্ত। যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের স্টুডিওতে ডেকে রোজ চলছে মিডিয়া ট্রায়াল। ঘটনাচক্রে র‍্যাগিং কান্ড আপাতত ব্যাকসিটে। এখন এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে যেন যাদবপুর মানেই মদ-গাঁজা-কন্ডোম! দিনরাত বলা হচ্ছে সিসিটিভি লাগালেই এই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! সিসিটিভি লাগানো হবে কি না সেটা এই মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন। কাজেই তাদের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যদিও যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেইন হোস্টেলে র‍্যাগিং এর বাড়বাড়ন্ত জেনেও চুপ করে বসেছিল তারা ‘সিসিটিভি’ ফুটেজ দেখেও আদৌ কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না বা নিতেন কি না তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।

কিন্তু রাইজ অফ ভয়েসেস যেটা নিশ্চিত ভাবে জানতে চায় সেটা হলো বঙ্গ মিডিয়ার হাতের বুম ক্যামেরাগুলো কেন তুহিনা খাতুনকে দেখতে পায়নি? কেন দেওয়ানদিঘির এমন স্পর্শকাতর ঘটনার খবরও ফুটেজ আমরা পাই না আপনাদের থেকে? এমন সব নারকীয় ঘটনাকে ঘিরে চোখে চোখ রেখে ঘন্টাখানেক ধরে আপনাদের রায় কেন দেখতে পাই না আমরা, জানতে বড় ইচ্ছে করে।

বিরোধী দলনেতা ট্যুইট করলো না বলে এবং শাসকদলের জেলখাটা মুখপাত্র তার প্রত্যুত্তরে বাজার গরম করলো না বলেই কি তুহিনা খাতুন বা দেওয়ানদিঘির প্রতিবাদী মহিলারা আপনাদের বুম-ক্যামেরার ‘সু’নজরে পড়ছে না! নাকি সিসিটিভির মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ছাপ্পা দেওয়ার মতই আপনারাও হাতের বুম- ক্যামেরার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে পেইড নিউজ ছাপছেন আর আসল খবর চাপছেন।

জানতে চায় জনতা।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চঃ রাজ্যের বাম শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু দেওয়ানদিঘির ঘটনা নিয়ে ট্যুইট করেছিলেন। সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার মুখ কি অন্যদিকে ঘোরানো!

তথ্যসূত্রঃ-
a) https://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2023-08-20/202308192343332.jpg&category=0&date=2023-08-20&button=
b) https://www.peoplesreporter.in/news/news-from-state/in-the-last-two-weeks-2-women-were-killed-and-many-raped-in-purba-burdhaman