পুলিশ তুমি কি পথ হারাইয়াছ? / Where is the Problem?

গত শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটা-একটা নাগাদ কাঁধে বন্দুক নিয়ে এক উর্দিধারী পুলিশ এবং তিনজন সিভিক পুলিশই যে আনিসের বাড়িতে গিয়ে তাকে তিনতলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করে, তা এখন বলা যায় প্রায় জলের মত পরিষ্কার। এমনকি এই পুলিশকর্মীরা প্রত্যেকেই যে আমতা থানার সাথে যুক্ত তাও, এক প্রকার প্রমাণিত। কারণ এই কান্ডের সাথে জড়িত থাকবার জন্য হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা এবং সিভিক পুলিশ প্রীতম ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হওয়া বিশেষ তদন্তকারী দল, সিট গ্রেপ্তার করছে। আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্ত্তীকেও ভবানী ভবনে তলব করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর অনির্দ্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এমনকি সিট গঠনের পর শুরুতেই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ঐ আমতা থানারই এএসআই নির্মল দাস এবং কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রমকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এঁরা দুজন ঐদিন রাতে এলাকায় টহলধারি ভ্যানের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।

অথচ, এই পুলিশের তরফ থেকেই প্রথম বাহাত্তর ঘন্টায় কিছুই প্রায় জানানো হচ্ছিল না। আমতা থানার তরফে তো হত্যাকান্ডের পরপর আনিসের বাবা আমতা থানায় ফোন করলে, স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়ে পর্যন্ত দেওয়া হয় যে তাদের তরফ থেকে কেউ আনিসের বাড়িতে যায়নি। এরপর সৌম্য দর্শন পুলিশ সুপারের তরফ থেকেও বাজছিল ভাঙ্গা রেকর্ড। খুনের কেস হওয়ায় এবং তাতে পুলিশের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সেদিন রাতে সত্যিই পুলিশের তরফে কেউ আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল কি না, এমন সব কিছুই তদন্তের আওতায় রয়েছে এবং সেজন্য “তৃণমূল বিধায়িকা”র পুলিশ সুপার স্বামী নাকি মুখ খুলতে পারবেন না। মানে, এসপি সাহেব যা বলতে চাইলেন, তা হল তাঁর অধীনে থাকা চার-পাঁচটি থানার মধ্যে একটি থানার পুলিশকর্মীরা রাতের অন্ধকারে একজনের বাড়িতে ঢুকে কাউকে খুন করে দিয়ে এল, অথচ ৭২ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরও ওনার কাছে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কোন সুনির্দ্দিষ্ট তথ্য নেই! এমনকি, আকারে ইঙ্গিতে তিনি যা বলছিলেন তা হল, সেদিন রাতে আমতা থানা থেকে কেউ আনিসের বাড়িতে যাননি। অথচ সিট গঠনের ২৪ গন্টার মধ্যেই আনিস খুনে আমতা থানার যোগ দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়। সামনে আসতে থাকে আমতা থানার একের পর এক পুলিশকর্মীর শাস্তির খবর। কাজেই যে সমস্ত লোকজন টিভির পর্দায়, কাগজের পাতায়, সমাজ মাধ্যমে কিম্বা চায়ের দোকানে সিট গঠনের আগে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারের “লাভলি” পেশাদারী দক্ষতা নিয়ে গলা ফাটাছিলেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে বলে মানুষকে আস্বস্ত করবার চেষ্টা করছিলেন, তাঁরা আপাতত বিশ্রাম নিন। রিল্যাক্স করুন! খোচর আর খচ্চরের তফাৎটা বুঝুন। তফাৎটা বুঝতে পারলেই নিজেদেরকে “খাপে খাপ” পরাতে পারবেন।

কিন্তু, এই সিট গঠনের পরেও আনিস হত্যাকান্ডে সত্যিটা সামনে আসছে ঠিকই, তবে খুবই ধীর গতিতে। কারণ পুলিশের তরফ থেকেও মুখ খোলা হচ্ছে সেভাবেই। মনে হচ্ছে যেহেতু পুলিশই আনিসের খুনী তাই একটা অনিচ্ছাকৃত খুনের গল্প জাতীয় কিছু লেখবার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশমন্ত্রী অবশ্য প্রথম দিনই তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই আমাদের জানিয়েছিলেন “ইচ্ছা করে” হয়নি। স্বভাবতই খুনীদের মনের ইচ্ছার কথা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তথা পুলিশমন্ত্রী জানলেন কি করে এ প্রশ্ন সেদিনই ঊঠেছিল! এখন পুলিশ যদি সেই মত গপ্পো ফাঁদবার চেষ্টা করে, তাহলে আগামী দিনে প্রশাসনের ওপর চাপ আরও বাড়বে, এই সতর্কবার্তা আগাম জানিয়ে রাখা হল রাইস অফ ভয়েসেস এর তরফে। কারণ মনে রাখবেন “পাপ বাপকেও ছাড়ে না।” কাজেই আপনারা যতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন, আমরা সাধারণ মানুষও ততটা নিরপাদ ভাববো নিজেদেরকে। ফলে প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক হবে কম।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছিল ঘটনার পরদিন থেকেই আমতা থানা এবং পাশের তাজপুর ফাঁড়ির সাথে যুক্ত এলাকার চারজন সিভিক পুলিশ বেপাত্তা হয়ে গেছেন। এঁদের নাম গুলি হল যথাক্রমে – কৌশিক চক্রবর্ত্তী, প্রীতম ভট্টাচার্য, সৌরভ খাঁড়া এবং অরিজিত পোল্লে। প্রথমটায় এদের চারজনের মোবাইল বন্ধ ছিল। অসমর্থিত সূত্রের খবর ভবানী ভবনে সিট এঁদেরকে একদফা জেরা করেছে। এমনকি ঘটনার দিন রাতের বেলা, কার্তিক প্রামাণিক নামের একজন ভিলেজ পুলিশকে (গ্রামাঞ্চলের সিভিক পুলিশ) ঘটনার দিন রাতে ছুটে পালাতে দেখছে এলাকার লোকজন। এরা প্রত্যেকেই কিন্তু এলাকার প্রথমসারির তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। অরিজিত পোল্লে তো স্বয়ং স্থানীয় একটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলী উপপ্রধানের ছেলে। আর এরা প্রত্যেকেই আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত পালের ঘনিষ্ঠ। এমনকি বিধায়কের সাথে এই সব পলাতক সিভিক পুলিশদের ছবিও এসেছে বিভিন্ন খবরের কাগজে এবং ঘোরাফেরা করছে সমাজ মাধ্যমে। আর এই হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আনিসের বাবা এবং বাকি পরিবারের সমস্ত সদস্য জানিয়েছেন সেদিন রাতে আনিসকে খুন করতে যে চারজন হাজির হয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন সিভিক পুলিশ। আর এরাই আনিসকে পাকড়াও করতে তিনতলায় উঠেছিল। এরাই মূলতঃ আনিস হত্যার আগের মুহুর্তে আনিসের সামনে উপস্থিত ছিল। মানে আনিস হত্যাকান্ডে আমতা থানা এলাকায় কর্তব্যরত সিভিক পুলিশদের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে।

যদিও এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি সিভিক পুলিশ বা ভিলেজ পুলিশ কিন্তু আইন অনুযায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না, জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে না, কারোর বাড়ি গিয়ে বা রাস্তায় কাউকে ধরতেও পারে না। তাদের কাজ শুধুমাত্র উর্দিধারী পুলিশকে সাহায্য করা। এখন সাহায্য করবার মানে কি এই, যে উর্দিধারী পুলিশ বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সিভিক পুলিশের দল মাঝরাতে লোকের বাড়িতে ঢুকে কাউকে পাকড়াও করবে? অন্তত “আনিস হত্যাকান্ড” সিভিক পুলিশের ব্যবহারিক প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ নিয়ে বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিল বলেই আমাদের মনে হয়েছে! আর তাছাড়া যেভাবে সিভিক পুলিশে শাসক দলের কর্মী-সদস্যদের রমরমা ও মাতব্বরি দেখা যাচ্ছে, তাতে যারা একসময় “চটি-পুলিশ” নিয়ে গগনবিদারী চিৎকার জুড়তেন, তাঁরা কেন আজ পর্যন্ত মুখ খুলছেন না সেদিকটাও আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ আমাদের মনে হচ্ছে এই সিভিক পুলিসের ভুলভুলাইয়েতেই শুধু আমতা থানা নয়, রাজ্যের বেশিরভাগ থানাই পথ হারিয়ে ফেলছে! নইলে একদল সিভিক পুলিশের কু-কীর্তি ঢাকতে হাওড়া গ্রামীণের এসপি সৌম্য রায় ৭২ ঘন্টা ধরে যেরকম চেষ্টা চালালে, তা থেকে সত্যি মনে প্রশ্ন জাগে রাজ্যে এখন কাদের শাসন চলছে? পুলিশ প্রশাসনের, নাকি সিভিক পুলিশ আররাজনৈতিক দলের নেক্সাসের?

কিন্তু সিট তৈরির আগে যারা রাজ্য পুলিশ তথা হাওড়া গ্রামীণের এসপি’র হয়ে গলা কাঁপাচ্ছিলেন, তারা আমরা রিল্যাক্স বললেও কি আর বিশ্রাম নিতে পারেন! তাদের কাজ হল সরকার বাহাদুরের হয়ে ঢাক-ঢোল পেটানো। এখন তারা আবার সিট-এর হয়ে গলা মেলাচ্ছেন। বলা হচ্ছে সিটকে নাকি যথাযথ ভাবে আনিসের পরিবারের তরফে তদন্তে সাহায্য করা হচ্ছে না। উলটে সিবিআই চাই বলে দাবী জানাচ্ছেন।

কিন্তু আসল সত্যিটা হল এই যে তদন্তের স্বার্থে আনিসের মোবাইলটা সিট কে হস্তান্তর না করা ছাড়া, আর কোন ব্যাপারেই তদন্তে অসহযোগিতা করা হয়নি। আর আনিসের মৃতদেহ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করবার ক্ষেত্রে পরিবারের তরফে কোন আপত্তি জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল যদিও প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ম মেনে করা হয়নি, তবুও তার রিপোর্টটা তাঁদেরকে দেওয়া হোক। যদি সেই রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আর দ্বিতীয়বার কবর দেওয়া মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়না তদন্তের প্রয়োজন নেই। পারিবারিক ভাবাবেগের কথা ভেবে ওনাদের এই দাবি যথেষ্ট ন্যায্য বলেই আমাদের মনে হয়েছে। কিন্তু পুলিশের তরফে প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি। উপরন্তু বিভিন্ন মহল থেকে যেভাবে আনিসের পরিবারের কাছে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের অনুরোধ আসছে, তাতে অনেকেরই মনে হয়েছে প্রথমবার ময়নাতদন্তের নামে যা হয়েছে তা নিছকই ছলনা। কিন্তু এখন চারিদিকে খুন নিয়ে ঢি-ঢি পরে যাওয়ায় পুলিশ লজ্জায় আর সে রিপোর্ট সামনে আনতে পারছে না। এর থেকে যেটা স্পষ্ট হয় সেটা হল আনিস কাণ্ডে পুলিশ ইচ্ছে করেই পথ হারিয়েছিল। পুলিশ চাইছিল না পথ খুঁজে পেতে।

যদিও শেষ পর্যন্ত কোর্টের নির্দেশে আজ আনিসের পরিবার সিটের হাতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য তার মোবাইলটা তুলে দিয়েছে। এমনকি কোর্টের নির্দেশেই আনিসের বাবা অসুস্থ থাকায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য পরিবারের তরফে একদিন সময় চাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানাই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বা মোবাইল ফোনের তথ্য ইত্যাদি হল মূলত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি যা অপরাধ প্রমাণে কাজে লাগবে।

কিন্তু অপরাধী কই!

আনিস খুনের পর এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত! খুনের পরপর যে প্রশ্নটা সারা রাজ্যের মানুষ জানতে চেয়েছে তা হল, কারা সেদিন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল। সিট গঠনের পর চারদিন কেটে গেছে। আমরা এখনও পর্যন্ত শুধু এটুকুই জানতে পেরেছি, যে চারজন সেদিন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল তারা আদতে সত্যিই পুলিশ ছিল। কিন্তু তাদের নাম-ধাম কিছুই এখনও সামনে আসেনি। মানে পুলিশ এখনও পুলিশকে খুজছে! সিটও গত চারদিন ধরে খুঁজে পায়নি এই চারজন কে! তাদের নাম-পরিচয় সামনে আনেনি।

এদিকে হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা এবং সিভিক পুলিশ প্রীতম ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করবার পর কিছু পেটোয়া সংবাদ মাধ্যমে গলা-তুলে আনিস হত্যাকান্ডে “মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি সিট / সুপারহিট সুপারহিট” কোরাস গাইবার যে চেষ্টা হচ্ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে, সেটা আজ দিনের শেষে ফের বিশবাঁও জলে। কারণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনিসের বাবা এঁদের দুজনকে টিআই প্যারেডে সনাক্ত করতে পারেননি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন এদেরকে তিনি চিনতে পারছেন না। এমনকি গ্রেপ্তার হওয়া দুই অভিযুক্তও জানিয়ে দেয় তাঁরা থানার বড়বাবুর আদেশ মত সেদিন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তারা জানেন না আনিসের সাথে ঠিক কি হয়েছিল। এমনকি সাংবাদিকদের সামনে পেয়ে তারা চিৎকার করে এও জানান ওপর মহলকে বাঁচাতে তাদের কে বলির পাঁঠা বানাবার চেষ্টা চলছে। এমনকি কানাঘুঁষো শোনাযাচ্ছে জেলাস্তরের পুলিশ আধিকারিকদেরও যোগসাজশ রয়েছে এরমধ্যে।

আবার পুলিশেরই একটি বিশেষসূত্রে আমরা জানতে পারছি সেদিন ৪ জন নয় আদতে গিয়েছিল ৬ জন। দুটি মোটরসাইকেল করে। কারণ আনিসদের বাড়ির রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি ঢোকে না। দুজন বাড়ি থেকে একটু দূরে মটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাকি চারজন হেঁটে গিয়ে আনিসের বাড়ির কড়া নেড়েছিল। আর পুলিশের রাতের টহলদারি ভ্যান গ্রামের মুখটাতে দাঁড়িয়ে এদের পাহারা দিচ্ছিল। সেখানে ছিল আরও দুজন। মানে সব মিলিয়ে মোট আটজন।

সেক্ষেত্রে যা দাঁড়াচ্ছে তা হল সিট তদন্ত ভার পাওয়ার চারদিন পরও এখনও প্রর্যন্ত যে চারজন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল এবং যারা প্রত্যক্ষভাবে আনিস হত্যাকান্ডে জড়িত তাদের কাউকে ধরতে বা সামনে আনতে পারেনি। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সম্ভবত সেই দুজন, যারা আনিসের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে মটরসাইকেলে অপেক্ষা করছিল অথবা রাতের টহলদারি ভানে ছিল।
এদিকে আমরা রাইজ অফ ভয়েসেসও গুনে দেখলাম এখনও পর্যন্ত মোট আটজনের নাম পাওয়া গেছে। তিনজন পুলিশ কর্মী এবং পাঁচজন সিভিক পুলিশ। উর্দিধারি পুলিশ কর্মীরা হলেন এএসআই নির্মল দাস, কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রম ও হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা। আর পাঁচজন সিভিক পুলিশ হল কৌশিক চক্রবর্ত্তী, প্রীতম ভট্টাচার্য, সৌরভ খাঁড়া, অরিজিত পোল্লে এবং কার্তিক প্রামাণিক। যদিও আনিস খুনের সময় এই আটজনের কে কোথায় ছিল তা এখনও সিট বার করতে পারেনি বা তারা নিজেরা জেনে গেলেও এখনও আমাদের সামনে আনেনি।

আর আটজন পুলিশের একটি দল মধ্যরাতে বিশেষ অভিযানে বের হল, অথচ লোকাল আমতা থানার বড়বাবু দেবব্রত চক্রবর্ত্তী কিছুই জানতেন না, এটা কি আদৌ হওয়া সম্ভব! এমনকি সিভিক পুলিশের যে দলটি এই অভিযানে পুলিশকে সঙ্গ দিল তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত পালের ঘনিষ্ঠ এবং কার্যত বিধায়ক মশাইয়ের বাড়ির নাকের ডগায় অভিযান সংগঠিত হইয়েছিল। কাজেই দুধে মেশা জলের মত যেখানে পুলিশ আর রাজনৈতিক নেতারা একে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন, সেখানে বিধায়ক মহাশয় এই অভিযান সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, এটাও কি আদৌ সম্ভব এমন প্রশ্নই জনমানসে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফলে কান টানলে মাথা আসে আমরা জানি! কিন্তু ঘটনার পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও পুলিশ এখনও ঠিক মত কানটা ধরতে পেরেছে কি না, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। নাকি এখনও হাতের সামনে কানকে ছেড়ে রেখে, নাক যাতে না কাটা যায় তার চেষ্টা চালাচ্ছে!

আমাদের জানাশোনার মধ্যে লোকজন ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, পুলিশ যদি পুলিশকেই খুঁজে না পায় বা খুঁজে বার করতে এদ্দিন সময় নেয়, তাহলে সাধারণ চোর-ডাকাত-গুন্ডা-বদমাশ ধরবে কি করে?

আর তাই আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস এখনও বুঝতে পারছি না পুলিশ পথ হারিয়ে ফেলেছে, নাকি পুলিশ নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে!

পরিশেষে এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাইজ অফ ভয়েসেসের তরফে সিভিক পুলিশের নামে শাসক দলের বাহুবলী পোষবার এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করবার দাবি জানানো হচ্ছে। কেন বাহুবলি বলা হল তা আপনারা নিজেদের পাড়ায় এই সমস্ত সিভিক পুলিশের রাজনৈতিক ও অসামাজিক কাজকর্ম দেখলেই বুঝতে পারবেন। আগামী দিনে অন্যকোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসলে, তারাও এই একই কাজ করাবে এদের দিয়ে বা তাদের করাবার সুযোগ থাকবে।

যদিও শাসকদলের তাঁবেদারি করা ছাড়াও, এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সামনে এসেছে যেখানে এই সিভিক পুলিশদের দাদাগিরি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং নির্মমতা ধরা পড়েছে। তার কয়েকটা উদাহরণ আমরা উল্লেখ করলাম এখানে।
যেমন বছর চারেক আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে মধ্যমগ্রাম অঞ্চলে হেলমেট না পড়বার অপরাধে সৌমেন দেবনাথ নামক জনৈক বাইক চালককে একদল সিভিক পুলিশ রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আবার গতবছর মানে ২০২১ এর জানুয়ারী মাসে শেখ আকবর নামক জনৈক সিভিক পুলিশকে কলকাতা পুলিশ বড়বাজার এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার করে। এর মাস পাঁচেক পর গত বছরেরই জুন মাসে হাওড়া ময়দান এলাকায় সান্ধ্যভ্রমণরত ৬৮ বছরের সমীরবরণ বসুকে কোভিড বিধি ভাঙবার অপরাধে, সুরজিত দে নামক জনৈক সিভিক পুলিশ হাতের ব্যাটন দিয়ে বেধরক মারধর করে। স্নায়ুরোগী সমীরবাবু যদিও ডাক্তারের পরামর্শ মতই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন এবং এই মারধরের চোটে তাঁর রীতিমত প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। এছাড়াও মাস তিন-চার আগে ২০২১ এর নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে জনৈক ব্যাগ ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করে এক্সাইড মোড়ের ওপর রাস্তায় ফেলে তন্ময় বিশ্বাস নামক জনৈক সিভিক পুলিশ বেধড়ক পেটায়। উপরের প্রতিক্ষেত্রেই (বিশদে জানতে তথ্যসূত্র দেখুন) পুলিশের তরফে মার্জনা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন দাদাগিরি এখনও যে চলছেই তা আনিস খুনের ঘটনায় আবার প্রমাণিত।

আমরা নিশ্চিত এমন ঘটনা আরও বহু ঘটেছে যা মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমগুলিতে না আসায় আমরা জানতে পারি নি।

আমরা জানি এই মুহুর্তে রাজ্য জুড়ে এই পদে কম বেশি ১লক্ষ ৩০ হাজার যুবক-যুবতী এই পেশার সাথে যুক্ত। হয়ত সবাই বাহুবলী নন। কিন্তু আবার অনেকেই তাই। অসামাজিক অপরাধ মূলক কাজ করে বেড়ান। আর তাই বেকার ছেলে-মেয়েদেরকে অস্থায়ী সিভিক পুলিশের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাহুবলী তৈরী করা বন্ধ করতে হবে। কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতীকে অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার নামে গোটা রাজ্যের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এব্যাপারে আপনাদের অভিজ্ঞতা ও কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম ।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61740_3628713_4_71_25-02-2022_0_i_1_sf.html
b) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61751_31327172_4_71_25-02-2022_5_i_1_sf.html
c) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61661_32711244_4_71_22-02-2022_0_i_1_sf.html
d) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-25/202202250003521.jpg&category=0&date=2022-02-25&button=
e) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-25/202202250021542.jpg&category=0&date=2022-02-25&button=
f) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-24/202202232328096.jpg&category=0&date=2022-02-24&button=
g) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-24/202202232337259.jpg&category=0&date=2022-02-24&button=
h) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-23/202202222344083.jpg&category=0&date=2022-02-23&button=
i) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-23/202202222347533.jpg&category=0&date=2022-02-23&button=
j) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-26/202202252340481.jpg&category=0&date=2022-02-26&button=
k) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-26/202202252350427.jpg&category=0&date=2022-02-26&button=
l) https://www.financialexpress.com/auto/bike-news/man-beaten-to-death-for-not-wearing-helmet-by-kolkata-police-appointed-civic-officers/1027169/
m) https://www.news18.com/news/india/civic-volunteer-brutally-thrash-man-in-kolkata-over-suspicion-of-snatching-bag-police-apologise-4416653.html
n) https://m.timesofindia.com/city/kolkata/68-yr-old-howrah-man-out-on-evening-walk-assaulted-by-civic-volunteer/articleshow/83267318.cms
o) https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/civic-cop-driver-in-net-for-strand-road-robbery/articleshow/89027638.cms