ময়না কথা কও / What About the Postmortem?

আনিস হত্যাকান্ডে প্রথম ময়নাতদন্ত যে নিয়মমাফিক পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হয়নি তা আজ সবার জানা।

কিন্তু সেই রিপোর্ট কেন সরকারের তরফে সামনে আনা হল না, তা নিয়ে আনিসের পরিবারের মত অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আনিসের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছিল যে, যদিও ময়নাতদন্তের সময় তাঁদের তরফে কেউ উপস্থিত ছিল না, তবুও যদি সেই রিপোর্ট সন্তোষজনক হয়, তাহলে তাদের পরিবারের তরফে কবর থেকে আনিসের মৃতদেহ তুলে ফের একবার ময়নাতদন্তের দাবি থেকে তারা সরে আসবে। পরিবারের এই ভাবাবেগ কে যেকোন মানুষই বুঝবেন এবং সম্মান করবেন।

কিন্তু আমরা যা দেখলাম তা হল আনিস হত্যাকান্ড নিয়ে রাস্তাঘাটে, রাজনৈতিক মহলে এবং প্রশাসনের ওপরতলায় হইচই শুরু হতেই এবং আদালত নিয়ম মাফিক দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিতেই আর প্রথমবারের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে সরকারের তরফে কোন উচ্চবাচ্চ্য নেই।

আমরা রাইস অফ ভয়েসেস বিনীতভাবে প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ঠিক কি ছিল তা জনসমক্ষে আনবার দাবী জানাচ্ছি। আমরা চাইছি সেই রিপোর্টের সাথে দ্বিতীয়বার আদালতের নির্দেশে আগামী সোমবার কবর থেকে মৃতদেহ তুলে, যে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হতে চলেছে তার রিপোর্টের সাথে মিলিয়ে দেখা হোক। এর উদ্দেশ্য মূলতঃ দুটি।

প্রথম, যদি দেখা যায় দুটি রিপোর্ট মোটামুটি এক, সেক্ষত্রে পুলিশ-প্রশাসন এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সবারই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এই মুহুর্তে আনিসকান্ডে কার্যত কোনঠাসা পুলিশ প্রশাসনের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা কিছুটা হলেও পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে, যা এই মুহুর্তে খুবই জরুরি।

আর যদি দেখা যায় দুটি রিপোর্টের মধ্যে শুধু পদ্ধতিগত ত্রুটি নয়, বয়ানেও বিস্তর ফারাক, সেক্ষেত্রে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যদি প্রথমবারের ময়নাতদন্ত যথাযথ গুরুত্ব সহকারে সবদিক খুঁটিনাটি বিচার না করে করা হয়ে থাকে এবং গাফিলতি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে এর সাথে যুক্ত সমস্ত পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক এমনকি সংশ্লিষ্ট ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরও শাস্তি হওয়া দরকার।

কারণ আগামীকাল বা তারপরের দিনও এমন অনেক ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়বে। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও যথাযথ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করবার জন্য এই সমস্ত দোষী ও সাজাপ্রাপ্ত আধিকারিকদের দৃষ্টান্ত কাজে আসবে।

আর আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে সব অস্বাভাবিক মৃত্যুর সাথে রাজনৈতিক যোগ থাকবে এমনটা নাও হতে পারে। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থও জড়িত থাকতে পারে। আর যারা রাজনৈতিক স্বার্থে বা চাপে শিরদাঁড়া বিক্রি করে ফেলেন, তারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিকস্বার্থে শিরদাঁড়া সোজা রেখে কর্তব্য পালন করবেন, এমনটা ভাববার কোন কারণ নেই। কাজেই কোন রাজনৈতিক স্বার্থে নয়, আপনার আমার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থেই এই সমস্ত আধিকারিকদের চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে এঁরা ভবিষ্যতে এই ধরণের ময়নাতদন্ত পদ্ধতির সাথে যুক্ত থাকতে না পারেন।

আর এই প্রথম ময়না তদন্তের রিপোর্ট জনসমক্ষে আনবার কাজটা প্রশাসনের তরফে আজ রোববার বা আগামীকাল সোমবার দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হওয়ার আগেই করতে হবে। কারণ একবার দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়ে গেলে, তারপর প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করলে রিপোর্টটির কোন বিশুদ্ধতা থাকবে না। কারণ সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের সাথে যুক্ত আধিকারিকেরা প্রথমবারের সাথে যুক্ত তাঁদের সহকর্মী আধিকারিকদের জানিয়ে দিতে পারেন ঠিক কি পাওয়া গেছে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে এবং সেইমত প্রথম পোস্টমর্টেম রিপোর্টটির পরিমার্জন বা সংশোধন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

যদিও আনিস হত্যাকান্ডে “না হওয়া ময়নাতদন্ত”ই অনেক কথা বলে ফেলছে! যেভাবে নজিরবিহীন ভাবে পরিবারের অগোচরে কাকভোরে ঠিকমত দিনের আলো ফোটবার আগেই বা কার্যত বলা যায় রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের তরফে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুলিশ ও র‍্যাফ নিয়ে কবর থেকে আনিসের মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হল, তাতে “নিরপেক্ষ” তদন্তের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করা সিটও বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো।

একদিকে ভবানীভবন থেকে পুলিশের তরফে ট্যুইট করে গতকাল জানালো হল, তারা সকালবেলা দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে দেহ তুলতে গেলে পরিবার ও গ্রামবাসীদের প্রবল বাধার মুখে পড়েন এবং ফিরে আসতে বাধ্য হন। সেইসঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালত অবমাননা এবং তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয় গ্রামবাসী ও আনিসের পরিবারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সন্ধ্যের দিকে যে বিডিও সকালবেলা পুলিশকে নিয়ে এসেছিলেন কবর থেকে মৃতদেহ তুলতে, তিনি জানান তাঁরা মৃতদেহ তুলতে যাননি, আসলে তারা সদলবলে জায়গাটা চিনতে এসেছিলেন।

ফলে জনমানসে বিভ্রান্তি বাড়ছে! কেউ কেউ দাবি করছেন প্রথম ময়নাতদন্তের সাথে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা জানেন, আনিসের দেহে হত্যার স্বপক্ষে ঠিক কি কি প্রমাণাদি উপস্থিত। আর তাই সেসব “ঠিকঠাক” করে আড়াল করতেই মৃতদেহ কে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হল।

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস বলছি অন্যকথা। আমরা জানতে চাইছি কে সত্যি বলছে! ভবানীভবন না বিডিও! যাদের একটা মিথ্যা ধরা পড়েছে তাদেরকে আর ঠিক কতটা বিশ্বাস করা যায়?

রাজ্যপুলিশ, সিআইডি বা সিটের আধিকারিকদের রাজ্যের শাসকদলের দাঁড়ে পোষা “ময়না”র মত এই রকম বিভ্রান্তিমূলক আচরণই তো আমাদের কে কেন্দ্রের খাঁচাবন্দি তোতাপাখির দিকে ঠেলে দিচ্ছে!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61776_53250194_4_71_27-02-2022_0_i_1_sf.html
b) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61787_54935329_4_71_27-02-2022_5_i_1_sf.html
c) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-27/202202270006495.jpg&category=0&date=2022-02-27&button=
d) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-27/202202270003383.jpg&category=0&date=2022-02-27&button=