ছ-এ ছাপ্পা! ধ-এ ধাপ্পা / The Art Of False Voting
আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস কথা রাখি। আগের প্রতিবেদনেই জানিয়েছিলাম ১২ ই ফ্রেব্রুয়ারীর পুরভোটে ছাপ্পা ভোট বা ভোট লুঠের নজরকাড়া দাপাদাপি নিয়ে প্রতিবেদন দেব। তাই আজ লিখতে বসা। আর লিখতে বসেই গা ছমছম করছে। কোথাও যেন অশরীরীর উপস্থিতি টের পাচ্ছি।
একটা গান শুনেছিলাম। মৃত্যুর পর, নিকষ নিথর …. কিন্তু এখন তো দেখছি মরে যাওয়ার পরেও সব কিছু নিথর হচ্ছে না। হাত-পা চলছে। আঙ্গুল নড়ছে। সে আঙ্গুল পায়ে পায়ে বুথ পর্যন্ত হেঁটে এসে দিব্যি ইভিএম যন্ত্রের বোতামও টিপছে। প্রিসাইডিং অফিসারও ভোটার তালিকাতে টিক মেরে জানাচ্ছেন “তেনার” ভোট গৃহীত। এরকম একটা দুটো নয়, ভোটের দিন বিধাননগরে এমন অজস্র উদাহরণ তৈরি হল। আর ঐ বুথগুলির যে সমস্ত আধিকারিকরা “তেনাদের” আঙ্গুলে কালি লাগালেন তাঁরা তো শুধু ত্রিকালদর্শী নয় ত্রিকালস্পর্শীও বটে! ওনাদেরকে সবার আগে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম!
তবে তার সাথে সংবাদ মাধ্যমকেও একটা পেন্নাম ঠুকতে হচ্ছে। কারণ তারাই প্রথম জানাল বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী স্বর্গীয় দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় বিধাননগরের এইচ-এ ব্লকের ভোটদান কেন্দ্রে ভোট দিয়ে গেছেন। কিন্তু ওনারা যেটা জানলেন না সেটা হল তার পাশেরই এইচ-বি ব্লকেও একগুচ্ছ প্রয়াত বাসিন্দা ভোট দিয়ে গেছেন। হয়ত দ্বিজেনবাবুর সাথেই একসাথে ওনারা এসেছিলেন ভোট দিতে! আবার একসাথে ফিরেও গেছেন ! ওনাদের পরিবারের ইহলোক বসবাসকারী নিকটজনদের অস্বস্তির কথা ভেবেই নামগুলি উল্লেখ করলাম না।
এমন উদাহরণ কমবেশি সল্টলেকের বহু ব্লকেই খুঁটিয়ে দেখলে হয়ত পাওয়া যাবে।
যে “অনুপ্রেরণা” র জোরে স্বর্গ থেকে স্বয়ং “তেনারা” নেমে এসে ভোটের লাইনে দাঁড়ান সেখানে মধ্যমগ্রাম থেকে লোকজন বিধাননগরে ভোট দিতে আসবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। অশরীরী যেখানে শরীর ধারণ করে ফেলছে সেখানে সামান্য ঘোষ পদবী দাস হতে পারবে না এমনটা ভাবাও পাগলামো। বরং “কাকু আপনার ভোট হয়ে গেছে বাড়ি যান” বা “মাসিমা আপনার আর কষ্ট করে ভোট দিতে গিয়ে কাজ নেই” প্রভৃতি “বিনম্র” আবেদনে সাড়া দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ!
কিন্তু রাইজ অফ ভয়েসেস হল একগুচ্ছ “পশ্চাদপক্ক” বেয়াড়া টাইপের ছেলেপুলে! এদের খপ্পরে পড়েই বুঝেছি আমার কপালে দুঃখ আছে! তেনাদের নিয়ে এই সব গুহ্যকথা ফাঁস করে এরপর যখন রাত্তিরে ঘরে আলো নিবিয়ে শুতে যাব, তখন তেনারা এলে কি হবে এই ভেবেই তো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে! আমি যদিও “শুঁটিয়ে লাল করে দেব” মন্ত্র জপা শুরু করে দিয়েছি! কম অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষও তো এক ধরণের অশরীরী! কি বলেন! কাজেই তেনাদের ঠেকাতে আপাতত এনার ডায়লগেই আস্থা রেখেছি।
কিন্তু “আস্থা” র কথা যখন উঠলই তখন যেতে যেতে একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে খচখচ করায় আপনাদের উদ্দেশ্যে রেখে গেলাম।
প্রতিবার বিধাননগরের পুরভোটে ভূত-পেত-দস্যি দানোদের আবির্ভাব ঘটিয়ে এই যারা ভোট বৈতরণী পার হচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক কাজকর্ম ও সাংগঠনিক দক্ষতার ওপর ওনাদের দলেরই উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আস্থা আছে কি?
কারণ রাইজ অফ ভয়েসেস এর পশ্চাদপক্কগুলোর ধারণা, আস্থা রাখতে পারছেন না বলেই অনুপ্রেরণার টানে বেলা গড়াতেই বিধাননগরের বুথে বুথে পরলোক, মধ্যমগ্রাম বা অন্যান্য আশপাশের এলাকা থেকে তেনাদের এত আসা যাওয়া শুরু হয়ে যায়!
তবে কি ভোটের দিন বুথে বুথে পরিযায়ী ভূতের নৃত্যই বিধান নগরের বিধিলিপিতে চিরতরে লেখা হয়ে গেল!
নাকি আগামী দিনে বিধাননগরবাসী ভোটের দিন বুথে বুথে লাইন দিয়ে “ধাপ্পা” দিয়ে ভূত ধরবেন! “ছাপ্পা” রুখবেন!
পুলিশ-প্রশাসন যখন নিরুপায়, তখন দায়িত্বটা বোধহয় নগরবাসীকেই নিতে হবে।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61463_43947567_4_71_13-02-2022_0_i_1_sf.html
b) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61474_44524190_4_71_13-02-2022_5_i_1_sf.html
c) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-13/202202122336365.png&category=0&date=2022-02-13&button=
d) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-02-13/202202122359135.jpg&category=0&date=2022-02-13&button=
Comments are closed.