মৃত্যু না হত্যা? / Howrah Death or Murder
হাওড়াতে জনৈক বাম ছাত্র নেতাকে রাতের অন্ধকারে ধরতে যাওয়ার নাম করে, তারই বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনই জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে। যদিও যতটা গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটিকে দেখানো বা সামনে আনা দরকার ততটা গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনা হচ্ছে না। আর তাই আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস আমাদের সাধ্যমত খবরটিকে আপনাদের সামনে চেষ্টা করছি।
মৃত ছাত্রের নাম আনিস খান। বয়স ২৬। বাড়ি হাওড়ার আমতা অঞ্চলে সারদা দক্ষিণপাড়ায়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র।
শুক্রবার রাত একটার সময় পুলিশের পরিচয় দিয়ে চারজন হাজির হয় তার বাড়িতে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশের খাঁকি উর্দিতে। তার সঙ্গে রাইফেল ছিল। অন্য তিনজন ছিলেন সিভিক পুলিশ। আনিস বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই এর একজন সক্রিয় কর্মী। বাগনান কলেজে পড়বার সময় থেকেই বাম ছাত্র আন্দোলনে হাতেখড়ি। সেই ছাত্র রাজনীতি সূত্রেই আনিসের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একটি চার বছরের পুরানো কেস রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর সেই কেস সুত্রেই পুলিশ এবং সিভিক পুলিশের একটি টিম রাতের অন্ধকারে আনিসকে গ্রেপ্তার করতে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশ পরিচয় পেয়েই বাধ্য হয়ে এত রাতে আনিস খানের বাবা দরজা খোলেন।
গতকাল ঐ এলাকায় একটি জলসা ছিল। আনিসের বাবা জানতেন ছেলে জলসা দেখতে গেছে এবং এখনও ফেরেনি। সেকথা তিনি জানান পুলিশের দলটিকে। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা জানান তারা বাড়ির ওপর নজর রাখছিলেন এবং তারা দেখেছেন আনিসকে আধঘন্টা আগে বাড়িতে ঢুকতে। এইসব কথার মাঝেই উর্দিধারী পুলিশকর্মীটি যখন আনিস খানের বাবার সাথে দরজায় দাঁড়িয়ে কথা চালাচালি করছিলেন তখন সঙ্গে থাকা সিভিক পুলিশের দলটি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে আনিস খানকে ধরতে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় ওপরে। আর তার মিনিট খানেকের মধ্যেই একটা বিকট ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান আনিসের বাবা। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিভিক পুলিশের দলটি দুদ্দার করে নেমে আসে ওপর থেকে। দরজায় দাঁড়ানো উর্দিধারি কে বলে “স্যার,চলে আসুন। কাজ হয়ে গেছে।”
পুলিশ ও সিভিক পুলিশের দলটি একপ্রকার পালিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। এদিকে পাড়ায় জলসা থাকায় পাড়া-প্রতিবেশীরাও প্রথমটায় জানতে পারেননি এমন মর্মান্তিক ঘটনাটির কথা।
এদিকে এর পরপরই আনিসের পরিবারের লোক গুরুতর আহত আনিসকে দেখতে পান ও উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পথে আনিসের মৃত্যু হয়।
স্বভাবতই পরিবারের তরফে এরপর পুলিশে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশ আসে অনেক দেরিতে। রাত কাবার করে সকালবেলা আটটার পর। দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ময়না তদন্তের জন্য। আর এসময় পরিবার ও পাড়া প্রতিবেশীদের তরফে পুলিশকে ব্যপক বিক্ষোভ দেখানো হয়।
এদিকে পুলিশের তরফ থেকে বিভিন্নসূত্র মারফত দুরকমের থিয়োরি সামনে আনা হয়।
প্রথমটায় পুলিশের একটি সূত্র বলছিল, রাতে পুলিশের তরফ থেকে কেউ আনিসকে ধরতে যায়নি। স্বভাবতই জনমানসে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি শেষটায় “ভুয়ো পুলিশ” এর হাতে প্রাণ গেল আনিসের! মানে আমাদের রাজ্যে ভুয়ো পুলিশ লোকের বাড়িতে ঢুকে নানা অছিলায় বাড়ির লোকদের ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খুন করছে! এমন ভয়াবহ ঘটনা এর আগে বাংলার বুকে কোনদিন ঘটেছিল বলে আমাদের জানা নেই!
এখন সেই প্রতিক্রিয়া ধামাচাপা দিতে পুলিশের তরফে অন্য একটি থিয়োরি সামনে আনবার চেষ্টা চলছে। তাদের তরফে বলা হচ্ছে পুলিশই গিয়েছিল আনিসকে ধরতে! কিন্তু পুলিশের হাত থেকে পালাতে আনিসই তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয়। এখন এই থিয়োরিতেও রয়েছে অসঙ্গতি!
প্রথমতঃ যদি তাই হবে তাহলে পুলিশ দুর্ঘটনার পর এমন দুদ্দার করে পালালো কেন! দ্বিতীয়তঃ আনিস তো কোন দাগী আসামি ছিল না। তাহলে তাকে রাতের অন্ধকারে এভাবে তার বাড়িতে ঢুকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার দরকার কি ছিল!
তৃতীয়তঃ আনিস যথেষ্ট পরিণত রাজনীতি সচেতন শিক্ষিত সংখ্যালঘু এক যুবক! সে খামোখা তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে যাবে কেন! সে কি জানত না এত উঁচু থেকে ঝাঁপ দিলে মৃত্যু অনিবার্য বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে যারপর তারপক্ষে পালানো সম্ভব নয়! আর পুলিশের লোকেরাই বা “স্যার কাজ হয়ে গেছে” বলতে, কোন কাজের কথা বলতে চেয়েছে! খুন! তবে কি আনিস কে মারতেই পুলিশ উর্দি পড়ে রাইফেল কাঁধে সিভিক পুলিশদের নিয়ে দল বানিয়ে এতরাতে হানা দিয়েছিল! তাহলে তা কার নির্দেশে! তাহলে কি বামপন্থী আনিসের মৃত্যু আদতে পুলিশ প্রশাসন কে ব্যবহার করে ঘটিয়ে ফেলা একটি রাজনৈতিক হত্যা! এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠে আসছে জনমানসে।
যদিও এই প্রতিবেদন দেওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিশের তরফ থেকে এই ঘটনা নিয়ে এখনও কোন অফিসিয়াল বয়ান সংবাদ মাধ্যমগুলি সামনে আনতে পারে নি। জেলার পুলিশ সুপারের সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে পুলিশ এখন জল মাপছে! জনমানসের প্রতিক্রিয়া দেখে বয়ান তৈরির চেষ্টা চলছে।
এদিকে স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, বামপন্থী আনিস শুধু একজন মেধাবী ছাত্র নয় পাড়ার মানুষের সুখ দুঃখের সাথীও। সবার বিপদে আপদে সর্বদা আনিসকে পাওয়া যেত। এমনকি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আনিস ছিলেন এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মুখ। কাজেই আনিসের এই আকস্মিক মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার নয়, তার পাড়া প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী প্রত্যেকে ক্ষুব্ধ।
এরা সকলেই আনিসের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং বিচার চাইছে।
এরই মধ্যে তার সহপাঠীদের তরফে পার্কসার্কাস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চত্বর থেকে আজ সন্ধ্যা ছ’টায় একটি মৌন মোমবাতি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আপাতত এপর্যন্তই! মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমের চোখ থাকুক বা না থাকুক আমাদের চোখ থাকবে এই খবরের ওপর। কোন আপডেট এলে আমরা জানাবো আপনাদেরকে ।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://zeenews.india.com/bengali/state/a-student-of-alia-university-allegedly-killed-in-amta_422316.html
b) https://www.anandabazar.com/west-bengal/howrah-hooghly/row-over-howrah-amta-student-leaders-unnatural-death-dgtld/cid/1329794
c) https://youtu.be/1RHqNeYax1g
d) https://pipanews.com/student-leader-murder-police-at-home-in-the-middle-of-the-night-isf-leader-accused-of-murder-by-pushing-from-the-roof-howrah-police-unnatural-death-of-isf-student-leader/
e) https://irshivideos.com/student-death-four-cops-entered-the-house-at-night-suddenly-fell-asleep-from-the-third-floor-mystery-surrounding-the-death-of-the-student-leader-howrah-student-leader-unnatural-death-mla-nawaz/
Comments are closed.