SIT ডাউন / SIT Down

আর মাত্র দুদিন। আনিস খান হত্যার পর দু-মাস পেরিয়ে যাবে।

অথচ মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং নবান্নে বসে সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য অভিজ্ঞ সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের নিয়ে যে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিলেন, তারা এখনও পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডর পেছনে কারা যুক্ত ছিল তাদেরকে খুঁজে বার করতে পারেনি।

আনিস খানকে হত্যা করা হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারি। মুখ্যমন্ত্রী সিট গঠন করেন ২১শে ফেব্রুয়ারি। কথা ছিল ১৫ দিনের মধ্যে সিট তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেবে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু তারপর প্রায় দুমাস পেরোতে চলল। সিট এখনও আসল খুনী কারা তাদের সামনে আনতে পারেনি।

আমরা সবাই জানি আনিস খানকে কিভাবে হত্যা করা হয়। তবুও ছোট করে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই। কারণ আনিস খানের হত্যাকারী আর কেউ নয়, স্বয়ং পুলিশ নিজে। ঘটনার দিন রাত সাড়ে বারোটার নাগাদ পুলিশেরই একটি দল গ্রেপ্তার করবার নাম করে আনিস খানের বাড়িতে চড়াও হয় এবং তাকে তার বাড়িরই তিনতলার ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ঠেলে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এমনকি পালাবার সময় নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের সময় জনৈক পুলিশকর্মী অকুস্থলে উপস্থিত তার সিনিয়রকে একথাও বলেন “স্যার, চলে আসুন। কাজ হয়ে গেছে।” মানে যাকে বলে একদম পরিকল্পনা করে বাড়িতে ঢুকে খুন করা। সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

সে সময় বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা সূত্রে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মোট আটজনের নাম পাওয়া যাচ্ছিল। তিনজন পুলিশ কর্মী এবং পাঁচজন সিভিক পুলিশ। উর্দিধারি পুলিশ কর্মীরা হলেন এএসআই নির্মল দাস, কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রম ও হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা। আর পাঁচজন সিভিক পুলিশ হল কৌশিক চক্রবর্ত্তী, প্রীতম ভট্টাচার্য, সৌরভ খাঁড়া, অরিজিত পোল্লে এবং কার্তিক প্রামাণিক।

অথচ “সিট” এখনও পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরেছে বলে আমাদের কাছে কোন খবর নেই। আর মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের ডিজি অথবা সিট, কারোর তরফেই তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে কেন এত গড়িমসি বা সময় লাগছে তা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কোন সদুত্তর দেওয়া হয়নি। যদিও সিট গঠনের সময় রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি আমাদের জানিয়েছিলেন এবং ১৫ দিন সময়সীমার মধ্যে তদন্ত শেষ করবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু আজ তারপর ৫০ দিনের বেশি পেরিয়ে গেলেও এব্যাপারে প্রশাসক/কর্তৃপক্ষের আর কেন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি ও বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। তবে কি সেদিনের সেই সাংবাদিক সম্মেলন ও প্রতিশ্রুতি আনিস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শহরজুড়ে প্রতিবাদে ফেটেপড়া মানুষকে তাৎক্ষনিক ভাবে শান্ত করবার জন্য আয়োজিত নাটক ছিল, উঠছে প্রশ্ন। নাটক বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ এ হল সেই সিট, যেখানে হত্যার পর ৫০ দিন পেরিয়ে গেলেও একদল সিনিয়র উর্দিধারী পুলিশ তাঁদেরই অধস্তন আরেকদল খুনী পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করে চার্জ গঠন করতে পারছেন না। একে বোধহয় অপদার্থতা বললেও কম বলা হয়। খাঁকি উর্দির একটা সম্মান আছে। কিন্তু আনিস হত্যাকাণ্ডে সিট পুলিশের নেতৃত্বে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবার হাসাহাসির পর্যায় চলে যাচ্ছে।
কাজেই সিট পুলিশকে আমাদের বিনীত অনুরোধ আর ঘুম নয়, উঠুন! জাগুন!

তদন্ত শেষ করে প্রকৃত খুনীদের জেলে ভরুন।

ভাববেন না আমরা ভুলে গেছি। বাংলার মানুষ কিন্ত জেগে আছে, নজর রাখছে আপনাদের ওপর।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস