খাকিতে দাগ নেবো না / Protectionless Protectors

দাগ নেবো না বললেই চলে নাকি? দাগ আচ্ছে হ্যায়। যদি শাসক চায়, তবে দাগ আচ্ছে হ্যায়। আর আপনি সেই দাগ নিতে বাধ্য। নির্দেশ আপনাকে মানতেই হবে, কারণ আপনি নিষ্ঠাভরে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯১৯ সালে এপ্রিলের ১৩ তারিখ, জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে যেদিন জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার মানুষের শরীর এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার গুলি, আর “জেনারেল” ছিলেন নির্বিকার। সেদিনও গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল ব্রিটিশ সরকারে কর্মরত ভারতীয়রা। তারাও সেদিন নির্দেশ পালন করেছিল শাসকের। তবে সেদিন গুলি চালানোর সময় তাদের চোখ দিয়ে জল বেরিয়েছিল কিনা, সেটা কোন ইতিহাস বইতে লেখা নেই, আর লেখাও থাকে না। কারণ ইতিহাস তো লেখে শাসকই।

শিখ নিধন, কাশ্মীরের হিন্দু বিতড়ন থেকে সাম্প্রতিক গুজরাট দাঙ্গা, দিল্লী দাঙ্গা এই সবের ইতিহাস শাসকরাই লিখেছেন। ঠিক একই কারণে দয়া নদীর জল লাল করে দেওয়া শাসক, তার বর্বরচিত কাজের জন্যে বর্তমান সমাজে একটি বারের জন্যে নিন্দিত হন না।

ইতিহাস শাসকরা যেমন লেখেন, তেমনই পুরস্কার দেনও শাসকেরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরস্কার সাধারণত পান, তাদেরই অনুগতরা। আর অনুগত না হলে পান “দাগ”।

পুলিশের কাছে প্রাণসংশয় নিয়ে চিঠি দেওয়ার পর, একজনকে জাতীয় সড়কের ওপরে প্রকাশ্যে খুন হতে হয়, আর তার প্রতিক্রিয়ায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুলিশের সামনে পুড়ে মরতে হয় গ্রামের কিছু মহিলা এবং শিশুদের। অভিযোগ, শাসক দলের ব্লক প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দেননি বলে পুলিশ আতায়ীদের বাধা দেয়নি। কিন্তু দুই দিন পরে, সেই ব্লক প্রেসিডেন্টই, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়ার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয়। পুলিশই গ্রেফতার করে। যেখানে পুলিশ ব্লক প্রেসিডেন্ট, জেলা সভাপতি বা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া দোষীকে গ্রেফতার করতে পারেন না, সেটা দাগ না!

সেই পুলিশ অফিসার, যিনি নন্দীগ্রামের হেভিওয়েট প্রার্থীকে বলেছিলেন, “ম্যাডাম, খাকিতে দাগ নেবো না”, তিনিই তো বীরভূমের বর্তমান পুলিশ সুপার। দাগ নিলেন কি?

আপনি একা নন, আজ সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষক, পুলিশ, আমলা, লেখক, গায়ক, খেলোয়াড়, অভিনেতা বা সাংবাদিকদের অবস্থা অনেকটা আপনার মত। দাগ নেওয়ার ভয়ে তারা সলজ্জ দালালি করে চলছেন কিছু উচ্চাকাঙ্খী ক্ষমতালোভী শাসকশ্রেণীর এবং কিছু ক্ষেত্রে নিজ হিতার্থে। যদি আপনি তা না করেন, তবে অতি অবশ্যই বাড়তি দাগ নিতে হবে। কারণ এই মুহূর্তে রাজ্যে কর্মসংস্থানের যা বাজার, তাতে পেটের দায়ে চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় কি খুব একটা আছে?

ভয় আর ভরসার দন্দ্বে, উপায়ন্তর না পেয়ে অনেকেই ভয়কে “শাসক” বানাচ্ছেন। তা দেখেই কিছু অংশের শাসক শ্রেণী ভাবছে, তারা যা করছেন সব ঠিক করছেন। তবে চুপ করে থাকা সন্মতির লক্ষণ বলে বিবেচিত আগেও হয়নি, হতে পারে না আর হবেও না।

নিজের ক্ষমতায়নের স্বার্থে সাধারণ মানুষ থেকে কর্তব্যপরায়ন সরকারি কর্মচারীদের “বলির পাঁঠা” বানানোর প্রক্রিয়া কখনোই দীর্ঘজীবী হয় না।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র:
a) https://youtu.be/e9tcDvNdU-s
b) https://ommcomnews.com/india-news/bengal-ips-officer-nagendra-tripathi-conferred-ec-award
c) https://www.firstpost.com/politics/rampurhat-massacre-west-bengals-long-violent-night-without-end-10483921.html
d) https://indianexpress.com/article/cities/kolkata/west-bengal-birbhum-bodies-tmc-pradhan-death-7831084/
e) https://www.anandabazar.com/west-bengal/purulia-birbhum-bankura/i-am-innocent-says-anarul-allegedly-involved-in-rampurhat-incident-dgtld/cid/1334550
f) https://bangla.asianetnews.com/west-bengal/rampurhat-violence-does-mamata-banerjee-suspend-birbhum-sp-nagendra-tripathi-alb-r99944