ম্যায় হু হেরো / Loosers

১০০ দিনের কাজ করেও, যারা তাদের হকের টাকা এখনও পর্যন্ত পাননি, সেটা কি গুরুত্বপূর্ণ? নাকি পশ্চিমবঙ্গের দমকল মন্ত্রীর জুতো চুরি কিম্বা সাংসদের মোবাইল চুরি বেশী গুরুত্বপূর্ণ? তৃণমুলের দিল্লির বিক্ষোভে চার বঙ্গ বিজেপি বিধায়কের যোগদান গুরুত্বপূর্ন? নাকি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সওয়াল তোলা গুরুত্বপূর্ন? যে চাকরিপ্রার্থীরা যোগ্যতা অর্জন করেও চাকরি পাননি, তাদের দাবি গুরুত্বপূর্ন? নাকি বিজেপির মহিলা মোর্চার বিক্ষোভ সমাবেশে দুই বিজেপি বিধায়কের টাকার ব্যাগ খোয়ানো বেশী গুরুত্বপূর্ণ? হায়রে বঙ্গ মিডিয়া, তোমাদের কাহারা নিয়াছে কিনিয়া? এখানেও সমস্যা, কেউ কিনেছে নাকি নিজেই নিজেকে বেচে দিয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার শেষ নাই।

আজ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের ৮৩ লক্ষ বাতিল জব কার্ডের বদলে, প্রায় ৫৮ লক্ষ কমিয়ে ২৫ লক্ষের জালিয়াতি বলছেন কেন, তার হিসেব আজ কোন সাংবাদিক জানতে চেয়েছেন? উত্তর না। মাত্র কয়েকমাস আগে প্রবল বিক্রমে বঙ্গের এক কমবয়সী সাংসদ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা রাজ্য নিজের থেকেই দেবে, তা কি রাজ্য আদৌ কোনোদিন দিয়েছিল? সেই প্রশ্ন কি বঙ্গ মিডিয়া রাজ্য সরকারের কাছে করেছিলেন? উত্তর না।

আসলে দেশীয় মিডিয়ার মত বঙ্গ মিডিয়ারও সমাজের নানান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর প্রতি গয়ংগচ্ছ ভাব দিনে দিনে ক্রমবর্ধমান, ট্রেনে বাসে তাই বঙ্গ মিডিয়া আজ এক নাম উপহার পেয়েছে, ব্যঙ্গমিডিয়া। এরা দেশীয় গদি মিডিয়ার মতই, সমাজের নানাবিধ সমস্যা, দাবিকে বাইপাস করে, মন-প্রাণ সপে দিয়েছে সরকার পক্ষের শ্রীচরণে।

কখন কোন বড় নেতা, কোন ছোট গলিতে নেমে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ে আগে থেকে দাড়িয়ে থাকা জনগণের সাথে করমর্দন করবেন, সেটা তারা জানেন, কিন্তু কলকাতার রাজপথে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষেত মজুরদের সুবিশাল সমাবেশ তারা সম্পূর্ন ব্ল্যাক আউট করেন।

কেন্দ্র রাজ্যের টানাটানিতে প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছেন লাখো রাজ্যবাসী। তা নিয়ে ঘন্টাবাবু, ঠুঁটোশ্বরী, রায়বাঘিনী বা প্রতি সন্ধ্যায় জবাব চাওয়া বাংলাকাকু কিচুই বলেন না, হয় খালি মুষ্টিমেয় কিছু নেতা নেত্রীর জপনাম। এরা কৃষকদের খালিস্তানি, শ্রমিকদের ফাঁকিবাজ-ইউনিয়নবাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের এপিসেন্টার বানিয়ে ফেলেন, নেতাদের দলবদল এদের কাছে মাষ্টারস্ট্রোক, আর মানুষের অধিকার, চাওয়া পাওয়া?

ফুসস্.. ওসবে টিআরপি আসে না, মানুষ নিজেদের অভাব অভিযোগের খবর এক্কেবারেই গোগ্রাসে গেলেন না। আসলে সাধারণ মানুষ নিজেরাই জানেন না, ধর্ম-বর্ণ-জাত ব্যতিরেকে তারাই দেশের সবচেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাই সরকার-বিরোধী প্রত্যেকে তাদের ইচ্ছামত ব্যবহার করে থাকে এবং তাদের কেউ কেউ ব্যবহৃত হওয়ার জন্য মূখিয়ে থাকেন সল্প মেয়াদী লাভের আশায়। আর যত দিন যাচ্ছে, এই প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই বলাই যায় দেশের কোটি কোটি সাধারন মানুষ, আগামী দিনে বঞ্চিত ইয়েদের দলেই থাকবেন এবং রোজ রাতের প্রাইম টাইমে নিজেদের প্রাপ্য, আধিকার, চাওয়া-পাওয়ার কথা ছেড়ে গোদি মিডিয়া, ব্যঙ্গ মিডিয়ার আস্ফালন গিলবেন আর প্রতিদিন অজান্তেই খেলা শুরুর আগেই হেরে যাবেন।

রোজ তারা হারবেন, আরো হারবেন, হারাবেন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস