দুয়ারে আদিবাসী / Knock Knock

আপনি আমি হলাম শহুরে বা আধাশহুরে মধ্যবিত্ত।

সকাল বেলা নাকে মুখে গুঁজে ভিড় ঠেলে ট্রেনে-বাসে চেপে চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে বা বাদুরঝোলা ঝুলতে ঝুলতে অফিস যাই! ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার সময়ও একই হাল! তারপর বাড়ি ফিরে প্রাইম টাইমে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিভিন্ন খবরের চ্যানেলে অনুষ্ঠিত কলতলার ঝগড়া দেখতে দেখতে নিজের মত একটা ওপিনিয়ন তৈরি করে বিজ্ঞ বনে যাই। দিদি-মোদী/পাপ্পু-মাকুদের অভিরুচি অনুযায়ী বাপ-বাপান্ত করে সবশেষে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুমাই, আবার পরদিন সকালে অফিস ছুটবো বলে।

গতকালও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটলো আজ সকালে অফিস যেতে গিয়ে। হাওড়া স্টেশনে নেমে বাস ধরতে যাব, ব্যস হাওড়া ব্রিজের জ্যামে গেলাম আটকে। পরে শুনলাম সেই যানজট হাওড়া সংলগ্ন মধ্য কলকাতার একটা বিস্তীর্ণ অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। তা কি ব্যাপার! কিসের নাকি মিটিং মিছিল অবরোধ হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল পতাকার রংটা দেখে অনেকেই ঠিকঠাক বুঝতে পারছে না, কোন পার্টি!

কারণ লাল/গেরুয়া বা তেরঙ্গা নয়, এ পতাকার রং হলুদ-সবুজ।
কি ব্যাপার দাদা!

একজন বলল ও কিসব সাঁওতালদের মিছিল….

পাশ থেকে একজন বললেন কালকেও তো ওদের কিসব ট্রেন অবরোধ ছিল!

আসলে আমাদের শহুরে মধ্যবিত্তের বেশিরভাগই মনে করেন আদিবাসী মানেই সাঁওতাল। কাজেই এমন মন্তব্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

পেছন থেকে একজন ফুট কাটলো “জঙ্গলমহল কাঁদছে”!

আমি বুঝলাম এইবার এদের কথাবার্তা একটা পলিটিক্যাল টার্ন নেবে। কাজেই এসবে না জড়িয়ে পকেট থেকে মোবাইল বার করে স্ক্রিনে চোখ রাখতেই দেখি ‘হাওড়া ব্রিজ স্তব্ধ’ এলার্ট চলে এসেছে।

‘এরা আবার কারা’ অথবা ‘এদের আবার কি চাই’ গোছের একরাশ শহুরে বিরক্তি মাখা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম এলার্টে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই। সংবাদমাধ্যমের হেডিং “অযোধ্যা পাহাড়ে নির্মাণের প্রতিবাদে আদিবাসী মিছিল, বন্ধ হাওড়া ব্রিজ, যানজটে নাভিশ্বাস মধ্য কলকাতার”। আরেকটু স্ক্রল করে নীচে নামতেই জানা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের নেতৃত্বে এই আদিবাসীরা পথে নেমেছেন তাঁদের ধর্মীয় উপাসনার অধিকার চেয়ে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে তাঁদের দেবতা মারানবুড়ুর উপাসনাস্থল। সেখানে ওই ধর্মীয় স্থলটি ধ্বংস করে টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থা, বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই শুক্রবার সকালে ডেপুটেশন জমা দিতে তাঁরা প্রথমে এসে হাজির হন হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে রানি রাসমনি রোডে মিছিল করে গিয়ে সংস্থার দপ্তরে ডেপুটেশন জমা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।
ব্যস আর আমায় পায় কে! আমি জেনে গেলাম ব্যাপারটা। পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে গন্ডগোল! যত জমি-জমা কেড়ে নেওয়া শুধু ‘হিন্দু’ আদিবাসীদের থেকে! একটা দুধেল গাইদের ধর্ম চর্চার জায়গায় হাত দিয়ে দেখাক তো ফুফা!

এটাই তো প্রোপ্যাগান্ডার পদ্ধতি। আদিবাসীরা হিন্দু নয়। তাও তাদেরকে রাজনীতির স্বার্থে হিন্দু বলে দাগিয়ে দিয়ে বেশ একটা গরম সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরি করা। তবে না কম্যুনাল পলিটিক্স। বাইনারি। এখন যেটা খুব ‘ইন’।

কিন্তু না! আমি করিনি। কারণ ওপরের খবরের টুকরো থেকে আমি কিছুই জানলাম না। মানে আমাকে সচেতনভাবে জানালো হল না। আপনাকেও তাই। একটা সস্তা ধর্মীয় আবেগ উসকে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হল শুধু। কারণ আমি আপনি আদতে দাবার বোড়ে! রাজনীতির যূপকাষ্ঠে সর্বদা বলি প্রদত্ত! আর সেটা আটকাতেই রাইজ অফ ভয়েসেস প্ল্যাটফর্মটির জন্ম। এখানে নিয়মিত লেখা হচ্ছে ‘বাংলার খুঁটিনাটি’, যেখানে আমরা আলো না পড়া রাজ্যের খুঁটিনাটি খবরের খোঁজ দিয়ে থাকি, আলোচনা করি এমন কিছু বিষয় নিয়ে যা সাধারণত মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম ছুঁয়েও দেখে না। আর সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আজকের প্রতিবেদনটির অবতারণা যেখানে আমরা সংক্ষেপে টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টের কিছু খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করবো। তথ্যসূত্রও দেওয়া হয়েছে নীচে আপনাদের অনুসন্ধিৎসা উসকে দিতে।

Image: Abir Roy Barman / Alamy
টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পটা ঠিক কি?

এই প্রকল্পটির ভাবনা শুরু ১৯৭৯ সালে ভারত সরকারের অধীনস্থ Central Electricity Authority (CEA)-র উদ্যোগে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের ওপর ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প এটি। সাধারণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের থেকে গঠন ও প্রযুক্তিগত ভাবে এটির সামান্য তফাৎ আছে। পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পে সাধারণত পাহাড়ের ওপরে এবং নীচে দুটি জলাধার বানানো হয়। তারপর রিভার্সিবল পাম্প/টারবাইনের সাহায্যে পর্যায়ক্রমে চক্রাকারে একবার নীচের জলাধারের জল ওপরের জলাধারে এবং তারপর ওপরের জলাধারের জল নীচের জলাধারে ফেলা হয়। আর এই জলস্রোতের সাহায্যেই টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। জল সাধারণত নেওয়া হয় নিকটবর্তী নদী বা হ্রদ থেকে। কাজেই এই প্রকল্পের জন্য আদর্শ স্থান হল পাহাড় ও নদীর যুগলবন্দী উপস্থিতি।

আর অযোধ্যা পাহাড় হল সেরকমই একটি এলাকা। এখানে এই প্রকল্পের জল নেওয়া হচ্ছে উপরের জলাধারে, টুরগা নালা থেকে যেটি আদতে সুবর্ণরেখা নদীর উপনদী। এরই নাম অনুসারে প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে। ৪ টি ২৫০ মেগাওয়াটের রিভার্সিবল পাম্প/টারবাইন এখানে ব্যবহৃত হবে।

ঠিক কতটা জমি লাগবে?

জমি লাগবে ২৯২ হেক্টর বা ৭২১ একরের মত। এরমধ্যে ২৩৪ হেক্টর বা ৫৭৮ একর হল বনাঞ্চল। বাকি ৫৮ হেক্টর বা ১৪৩ একর রয়েছে রাজ্য সরকারের রাজস্ব দপ্তর ও ব্যক্তিগত মালিকানায় মিলিয়ে মিশিয়ে।

প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট এলাকা আয়তন ১২ বর্গ কিলোমিটারের বেশি।

কেন দরকার এই টুরগা স্টোরেজ প্রকল্প?

রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থার দাবি হল এই প্রকল্পের সাহাযে দিন ও রাতের বেলা সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এই বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। কারণ এটিতে চাহিদা মত চালু ও বন্ধ করবার ব্যবস্থা রয়েছে। মানে উপরের জলাধারে জল ভরে রেখে চাহিদার সময় সেই জল ছাড়লে তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে এবং চাহিদা মিটে গেলে ওপরের জলাধারের লকগেট বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এমন প্রযুক্তিগত সুবিধা তাপবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুত বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাওয়া সম্ভব নয়। তারওপর এটি অচিরাচরিত শক্তি হওয়ায় পরিবেশ দূষণ কম বা নেই বললেই চলে। কাজেই প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।

সরকারী অনুমোদন আছে কি?

যদিও ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে CEA এই প্রকল্পের ডিটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট (DPR) অনুমোদন করে। ঠিক হয় West Bengal State Electricity Distribution Company Limited (WBSEDCL) প্রকল্পটি রূপায়িত করবে। আর এজন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রকল্পটির সম্মতি মেলে ২০১৭ সালের মে মাসে।

এমন কি প্রকল্পটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন দপ্তরের ছাড়পত্রও রয়েছে। অনুমোদন এসেছে ২০১৮ সালে।

এই প্রকল্পে ঠিক কতজন মানুষের কর্মসংস্থান হবে?

সরাসরি বা প্রত্যক্ষ স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে ১৬৯ জনের। আর অস্থায়ী বা পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও মেরে কেটে ৪০০-৫০০ জনের। এঁদের কাজ থাকবে প্রকল্প নির্মানের কাজ যদ্দিন চলবে ততদিন। তারপর এঁদেরকেও কর্মসংস্থানের জন্য অন্যত্র চলে যেতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন?

দুজন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক চক্রবর্ত্তী এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌমেন্দ্যু চট্টোপাধ্যায়, তাদের গবেষনাপত্রে দেখিয়েছেন যে সামাজিক ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হিসেবের মধ্যে নিলে এই প্রকল্পের বার্ষিক আয় বার্ষিক খরচের তুলনায় ৬ গুণ কম। কাজেই এমন একটি প্রকল্পকে কিভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ছাড়পত্র দিল প্রশ্ন উঠবেই।

শুধুমাত্র পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ বা পরিবেশ দূষণমুক্ত প্রকল্প এই দুই বাস্তবতার নিরিখে এমন একটি অলাভজনক প্রকল্প করতে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?

এমনকি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনাও এই প্রকল্পটি থেকে মোটেই আশাপ্রদ নয়।

কতজন মানুষের জীবন-জীবিকায় এই প্রকল্পের প্রভাব পড়বে?
১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৩৬টি গ্রামের ৩১০০০ আদিবাসী মানুষজন এই প্রকল্পটির জন্য সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অনুমান।

এলাকাটি মূলতঃ বনাঞ্চল। আদিবাসীদের একটা বড় অংশের জীবন-জীবিকা এই বনজসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। আগেই বলেছি এই প্রকল্পের জন্য ২৩৪ হেক্টর বা ৫৭৮ একর বনাঞ্চল নেওয়া হবে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে এই প্রকল্পের কারণে বনাঞ্চলের কম বেশি ৩ লক্ষাধিক গাছ কাটা পড়বে। এদিকে ক্ষতিপূরণের জন্য যে বনাঞ্চল পুনর্গঠনের প্রস্তাব রয়েছে তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। ফলে এলাকার আদিবাসী সমাজের জীবন-জীবিকার ওপর প্রকল্পের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এমনকি প্রকল্পের কারণে বহু মানুষের চাষের জমি বা ঘরবাড়ি জলের তলায় ডুবে যাবে। ফলে তাদের অন্যত্র সরে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের নির্ভরশীল হতে হবে সরকারি ক্ষতিপূরণের অর্থের ওপর। অথচ সেই ক্ষতিপূরণ বহু ক্ষেত্রেই অমিল থাকে বলে অভিযোগ। কথাবার্তা শুনলেই বুঝবেন এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সরকারের ওপর বিশ্বাসটাই নেই।

কারণ এমনিতেই বন ও পরিবেশ দপ্তরের সরকারি অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনানুগ পদ্ধতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ২০০৬ সালে আইন পাশ করে আদিবাসীদের বনাঞ্চলে জল-জঙ্গল-জমির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী বনাঞ্চলে কোন শিল্পস্থাপন করতে হলে এবং আদিবাসীদের পুনর্বাসনের প্রসঙ্গ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্রামসভার মিটিং ডেকে ঐ প্রকল্পের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হয় না, সরকারের তরফে লিখিতভাবে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন প্যাকেজ গ্রামসভাকে জানাতে হয় এবং সেই পুনর্বাসনের সমস্ত ব্যবস্থা সম্পুর্ণ না করা পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ বা উচ্ছেদ করা যায় না। কিন্তু স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অভিযোগ এসবের কিছুই করা হয়নি। যা জানা যাচ্ছে তা হল, প্রকল্পের জন্য কতৃপক্ষ মাত্র ২১ জন স্থানীয় আদিবাসির সম্মতিপত্র আদায় করতে পেরেছে।

যদিও স্থানীয় আদিবাসীরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন ২০১৭ সাল থেকেই। সেই মত তারা আইন-আদালতের দারস্থ পর্যন্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল জাজ বেঞ্চ বনাঞ্চল আইন, ২০০৬ মেনে জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না বলে প্রকল্পের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এমনকি বনাঞ্চল আইন মোতাবেক গ্রামসভার অনুমতি বিনা কিভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র পেল তা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন।

রাজ্য সরকারের তরফে তখন সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া হয়। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মসংস্থান তৈরির নিরিখে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে খারিজ করে দেয়, যদিও সেইসঙ্গে এটাও বলে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রামসভার অনুমতির বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় দপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব ছাড়পত্র এসে যাওয়ায় এবং ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে হাতিয়ার করে WBSEDCL কতৃপক্ষ ফের প্রকল্পের জন্য এলাকায় জমি জরিপের কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু গ্রামসভার অনুমতির বিষয়টি যেহেতু এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, তাই স্থানীয় আদিবাসী সমাজ প্রতিবাদ প্রতিরোধ জারি রেখেছে। দুপক্ষের নানা বাদানুবাদ ও সংঘর্ষের খবরও এসেছে। সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই আজকে কলকাতায় আদিবাসী সমাজের এই মিছিল। তাদের দেবতা মারানবুড়ুর উপাসনা স্থল ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়টি সম্ভবত এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। কারণ গত জুলাই মাসেও যখন জমি জরিপ করতে এসে সমীক্ষক দলকে আদিবাসী প্রতিরোধের মুখে পড়ে ফিরে যেতে হয় তখনও একথা শোনা যায়নি।

এখন এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারই অনুমোদন যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছে। মানে রাজ্যের শাসক ও খাতায় কলমে প্রধানবিরোধী দলের পক্ষে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়।

তবে কি আদিবাসীদের এই আন্দোলনের বিধি ‘বাম’! সময় বলবে।

আপাতত দুয়ারে আদিবাসী হাজির হওয়ার আসল কারণটায় সময়মত আলোকপাত করতে পেরে আমরা খুশি।

ধন্যবাদান্তে
সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

তথ্যসূত্র:
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/jam-in-howrah-bridge-and-central-kolkata-as-adibasi-starts-rally-in-demand-of-their-right-to-wprship-dgtld/cid/1372038
b) https://eisamay.com/west-bengal-news/howrah-news/articlelist/15991767.cms
c) https://www.anandabazar.com/west-bengal/surveyors-faced-protests-in-proposed-turga-pumped-storage-project-dgtld/cid/1358646
d) https://www.wbsedcl.in/irj/go/km/docs/internet/new_website/TPSP.html
e) https://www.thethirdpole.net/en/energy/turga-pumped-hydro-project-india-resurrected-despite-threats-forests-livelihoods/
f) https://www.nsenergybusiness.com/projects/turga-pumped-storage-hydroelectric-project/