টিং টং! দুয়ারে “GIG” / Gigs Of Bengal
আমরা এগোচ্ছি। বাংলা এগোচ্ছে।
সারা দেশের সবকটি রাজ্যকে পিছনে ফেলে আমরা সগর্বে এক্কেবারে প্রথম স্থানে এই মুহুর্তে।
কিন্তু কিসে হয়েছি সেটা বলবার আগে একটু জেনে নিতে চাইছি আপনারা খবরটা জানেন কি না! সকাল বিকেল যে খবরের কাগজ- নিউজ চ্যানেল গুলো আপনাদেরকে সবজান্তা বানিয়ে ভোট দিতে পাঠাচ্ছে তারা আপনাদের কিছু জানালো কি না! সান্ধ্য বিতর্কে এলো কি না এই বিষয়টা! হাজার হোক বাংলা একদম ফার্স্ট হয়েছে বলে কথা!
আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেস এর সদস্যরা অবশ্য এমন খবর কাগজে পড়েছেন বা টিভিতে গুরুত্ব দিয়ে দেখিয়েছে বলে মনে করতে পারেননি। তাই ভাবলাম আপনাদের জানিয়ে রাখি।
শ্রমকোড ২০২০ এর অন্তর্গত সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অসংগঠিত গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কাসদের নথিভুক্তিকরণের কাজ চলছিল দেশ জুড়ে। “গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম” শ্রমিক হল সেই সমস্ত স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তি যারা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, প্ল্যাটফর্ম বা অ্যাপের মাধ্যমে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার পার্টনার বা সহযোগী হয়ে আমাদের দরজায় সেই সমস্ত সংস্থার সার্ভিস বা পরিষেবা পৌঁছে দেয়। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জোম্যাটো বা সুইগির মত ফুড ডেলিভারি অ্যাপের ডেলিভারি করা ছেলেমেয়েরা, তেমনই রয়েছে উবের কিম্বা ওলা’র মত অ্যাপক্যাবের ড্রাইভাররা অথবা গ্রফারস বা বিগবাষ্কেট’র মত অ্যাপ নির্ভর দোকান-বাজার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া ডেলিভারি এজেন্ট বা পার্টনাররা।
এই কাজের সাথে যুক্ত কর্মীরা প্রত্যেকেই কম-বেশি লেখাপড়া জানা হয়ে থাকেন, কারণ এদেরকে মূলত শহরাঞ্চলের মানুষদের পরিষেবা দিতে হয়। মূলত একটা বাইক আর স্মার্টফোন থাকলেই এই ধরণের কাজে যোগ দেওয়া যায়। এদের কোন স্থায়ী পারিশ্রমিক নেই। থাকে না সেই অর্থে কোন সামাজিক সুরক্ষা বা চিকিৎসা বিমার ব্যবস্থা।
সারাদিনে যতগুলি ডেলিভারি বা যতগুলি যত দুরত্বের ট্রিপ (ক্যাবের ক্ষেত্রে) দিতে পারবেন তারওপর এদের আয় নির্ভর করে। তাই এদেরকে সরকারের তরফে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নথিভুক্তিকরণের কাজ চলছিল।
গতকাল লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে তথ্য পেশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এই মুহুর্তে সারাদেশ থেকে ৭,১৭,৬৮৬ জন গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কাস নথিভুক্ত হয়েছেন ।
এরমধ্যে শুধু বাংলা থেকেই রয়েছেন ২,১৯,৪৪৩ জন। মানে দেশের ৩০% গিগ শ্রমিক আমাদের রাজ্যে বাস করেন । আর তাই আমরা একদম প্রথম স্থানে। এমনকি দ্বিতীয়স্থানে থাকা উত্তরপ্রদেশ, বাংলার চেয়ে দ্বিগুণ জনবহুল রাজ্য হলেও, সংখ্যার নিরিখে রয়েছে অনেক পেছনে । সেখানে এই সংখ্যাটা ১,২৮,২৪১। তৃতীয় স্থানে বিহার যেখানে এই শ্রমিকের সংখ্যা ৬৭,২৩৯।
তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের মত দক্ষিণ ভারতের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলিতে এই সংখ্যা ১০ হাজারের নীচে। মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে এই সংখ্যাটা যথাক্রমে মাত্র ১৮,৪৯৭ এবং ১২,৫০২।
আমাদের রাজ্যে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের জন্য একটা সুস্থ স্থায়ী চাকরির ঠিক কতটা আকাল চলছে, তা ওপরের পরিসংখ্যানটা স্পষ্ট করে। সরকারি হোক অথবা বেসরকারি কোন ক্ষেত্রেই যে সেভাবে আমাদের রাজ্যে স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
আর যেহেতু আমাদের রাজ্যে এই সংখ্যাটা বেশি তাই বাজারের যোগান-চাহিদার নিয়ম মেনে এই সমস্ত স্ব-নিযুক্ত শ্রমিকদের দৈনিক আয়ও হবে কম। কারণ কেউই দৈনিক যথেষ্ট সংখ্যক কাজ পাবেন না।
সিঙ্গুর -নন্দীগ্রাম থেকে শিল্প তাড়িয়ে মাছের ভেড়ি বানালে বা বাগদা চাষ করলে যেমনটা হওয়ার কথা ঠিক তেমনটাই হয়েছে আমাদের।
যদি নিজের বাড়ির শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের “কোন কাজই ছোট নয়” ভেবে গিগ ওয়ার্কার বানাতে চান তাহলে খেলা-মেলা-গান বাজনায় মেতে থাকুন। খাওয়া-দাওয়া থেকে বেড়াতে যাওয়া সব কিছুর ছবি দিন ফেসবুক-ট্যুইটার-ইন্সটাতে আর লাইক গুনুন।
আর যদি বাড়ির ছেলেটার-মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র দায়িত্ববোধ থেকে থাকে তাহলে সতর্ক হোন।
দিল্লীর ইন্ডিয়াগেটে আলো নিভে গেলে জানতে পারছি, অথচ নিজের সন্তানের ভবিষ্যতে যে পাকাপাকিভাবে লোডশেডিং নেমে এসেছে, সেটা কি জানতে পারছি আমরা!
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://www.moneycontrol.com/news/business/companies/india-registers-717686-gig-workers-58-are-from-bengal-up-and-bihar-8033061.html
b) https://epaper.anandabazar.com/imageview_61235_301732_4_71_31-01-2022_0_i_1_sf.html
c) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-01-31/202201302338283.jpg&category=0&date=2022-01-31&button=
d) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-01-31/202201302338285.jpg&category=0&date=2022-01-31&button=
Comments are closed.