“মোচা” কেস! / Cyclone Mocha
ঝড় আসছে মায়ানমারে, কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে আমাদের লালবাজারে। ঠিকই পড়লেন, ঠিক এমনটাই হতে চলেছে।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন তৈরি হতে চলেছে। যদিও এখনও আপাতত সেটা পোট ব্লেয়ারের থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপের গর্ভে। কিন্তু তাও তার নাম ঠিক হয়ে গেছে। সাইক্লোনের ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভে থাকতে থাকতেই নাম ঠিক হয়ে যাওয়াটাই দস্তুর। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোচা’। কেউ আবার বলছে ‘মোকা’। একটু আগেই নামের আরেকটা ভার্সন কানে এলো। ‘মওকা’।
কিন্তু নামে কি আসে যায়! আবহাওয়াবিদরা যতই বলুক বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজার ও কাউকপুর উপকূল অঞ্চলে এই ঝড় আছড়ে পড়বে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় তো ঘূর্ণিঝড়ই! ঘুরতে ঘুরতে কলকাতায় চলে এলে!
কাজেই বাম আমলে ‘আইলা আইলা/ সিপিএমের নাইলা’ টিটকিরি কাটা ‘পিএম টু ডিএম, উইদাউট সিএম’ ফেডারাল স্ট্রাকচারের প্রবক্তা আমাদের এখনকার সিএম খুবই সতর্ক। গতপরশু প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন, “ভয় বা আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, ‘গরমেন্ট’ সবটাই নজর রাখছে, যেভাবে আগের সাইক্লোনগুলো আমরা সামলেছি সেভাবেই সামলানো হবে”। এখন প্রশ্ন হল, বাংলার মানুষ খামোখা ‘ভয় বা আতঙ্কগ্রস্ত’ হতে যাবে কেন? কোথায় বাংলা আর কোথায় মায়ানমার! আতঙ্কের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ববান। বিপর্যয় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি সব সময়ই কাম্য। তিনি জানিয়েছেন জেলায় জেলায় কন্ট্রোলরুমও তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে ২৫ লক্ষ ত্রিপল এবং ৭১ লক্ষ পোশাক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে খুবই ভালো উদ্যোগ।
কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর কপালে ভ্রূকুটি! প্রশাসনের তরফে কেন এত আগাম তৎপরতা? ঝড় না এলে এই ত্রাণের ত্রিপল, পোশাক…. এগুলোর কি হবে? ফেরৎ আসবে? নাকি ঝেঁপে দেওয়া হবে? এটাই তাদের মূল প্রশ্ন! কারণ ত্রানের লাইনে দাঁড়ানো দুর্গত মানুষের এপ্রসঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আন্দামান পাশেই…. তাই এই আগাম প্রস্তুতি! সত্যি কি তাই!
আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের ভাবনাটা একটু আলাদা! দুর্নীতিতে বিধ্বস্ত রাজ্যের শাসক দলের একঝাঁক নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রী ইতিমধ্যেই জেল খাটছেন। যত দিন এগোচ্ছে তদন্তের ফাঁস যেন ক্রমশ শাসক দলের গলায় চেপে বসছে। আদালতের নির্দেশে আদালতের নজরদারিতে এই মুহুর্তে শিক্ষা দপ্তরে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যে গতিতে চলছে, কয়লা ও গরু পাচার কান্ডে যেভাবে সিবিআই/ইডির সক্রিয়তা বাড়ছে তাতে ক্রমশ কেন জানি না আমাদের মনে হচ্ছে চূড়ান্ত যবনিকা পতনের আগে একটা রফাসূত্রে পৌঁছানোর জন্য শেষবারের মত মরিয়া দর কষাকষি লড়ালড়ি চলছে! আর তাই শাসকের নম্বর টু’র রক্ষা কবচ চলে গেছে দশ দিন হয়ে গেলো, অথচ সিবিআই বা ইডি আর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাচ্ছে না। যদি আগামী দিনে সুপ্রিম কোর্টের থেকে কিছু স্বস্তি আদায় করা যায়, যদি বিচারকের পারিবারিক চিকিৎসার খরচ মিটিয়ে অথবা রাজ্যসভার টিকিট দিয়ে ‘সিঙ্গুর’ বা ‘রাম মন্দির’ টাইপের দিগন্তকারী রায় বার করা যায়, তাহলেই কেল্লাফতে!
আর এসব থেকে নজর ঘোরাতেই হয়তো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হলো, কেরালা স্টোরি কেরালাতে প্রেক্ষাগৃহে চললেও বাংলাতে নিষিদ্ধ হলো!
তাই রাইজ অফ ভয়েসেসের তরফ থেকে অনুরোধ, সামনের কয়দিন বাইরে বেরোলে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বেরোবেন, ঝড় আসবে কিনা তা আমাদের জানা নেই, কিন্তু প্রখর রোদ আপনাকে বিব্রত করতেই পারে। তবে আন্দামানে যারা আছেন, তারা ঝড় থেকে সতর্ক থাকবেন। কারণ কলকাতা থেকে আন্দামানের দূরত্ব ১,২৫০ কিলোমিটার, আর মোচার প্রভাব সেখানে কিন্তু পড়বে বা অলরেডি পড়ছে।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.