বই বিক্রি বারণ / Books Are Under Attack

বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপুজা। শুধু ঠাকুর দেখা নয়, নানান সংস্কৃতির মেলবন্ধন হয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে। হরেক রকমের ফুডস্টল, বেলুন, খেলনা, পুতুল, বিনোদনমূলক রাইড, ওয়েট মেশিন, হস্তশিল্প ছাড়াও একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে বুকস্টল। যার সর্বাগ্রে আসে বামপন্থীদের পরিচালিত উৎসবের সময়কার বুক স্টলগুলি। পুজোয় ঘুরতে বেড়িয়ে অসংখ্য মানুষ এখান থেকে সংগ্রহ করেন নানান বই।

বামপন্থা নিয়ে যতই দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকুক একথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই, বইকে যারা অত্যাবশ্যক সাংস্কৃতিক উপাদান হিসেবে মনে করেন, এই স্টলগুলো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। বহু মানুষের মুক্ত চিন্তা গড়ে ওঠার পেছনে এই ধরনের বইয়ের ভূমিকা প্রবল।

শাসক দল যে কোনোরকম মুক্ত চিন্তার ঘোরতর বিরোধী, তা গতকাল রাসবিহারীতে বুকস্টল ভাঙা যাওয়াতে বোঝা গিয়েছিল। আজ সেই বুকস্টল ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার হলেন কমলেশ্বর মুখার্জী। আর তারপর? নেটদুনিয়া তোলপাড়। সিনেমার সাথে যুক্ত লোকজন তো বটেই, সাথে সাধারণ মানুষও ক্ষোভ উগরে দিলেন। বিবৃতি এলো জয়েন্ট প্লাটফর্ম ওফ ডক্টরসের তরফেও। নিউজ চ্যানেলে পরপর চলল ব্রেকিং নিউজ।

কার জন্যে? কমলেশ্বর মুখার্জীর জন্যে? নাকি বইয়ের জন্যে? নাকি বাংলার সংস্কৃতি বাঁচানোর জন্যে?

আজকের এই প্রতিবাদ সভায় যদি কমলেশ্বরবাবু না থাকতেন, তবে কি সাধারণ মানুষ মুখ খুলতেন? একটাও পোস্ট কি বেরোতো শাসকের বিরুদ্ধে?

কে কি লিখত, তা আমরা জানি না, কিন্তু এই প্রতিবাদ সভায় কমলেশ্বর মুখার্জী উপস্থিত না থাকলেও, উনি প্রতিবাদ অবশ্যই করতেন। কারণ অখ্যাত বামকর্মী শুভদীপ যেদিন জনসমক্ষে মার খেয়েছিলেন, যেদিন শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে গুড়িয়ে গিয়েছিল একটা গোটা বুকস্টল, সেদিন কলম ধরেছিলেন ডাক্তারবাবু, কমলেশ্বর। অন্যেরা কিন্তু ধরেননি।

এই বঙ্গের প্রশাসন আজ মুক্ত চিন্তাকে ভয় পায়, তাই বইকে ভয় পায়, আর বিকৃত চিন্তাকে মাথায় তুলে রাখে। আজ সংস্কৃতি বঙ্গবাসীর কাছে আর নতুন নয়। বছরখানেক আগে চাকদা’য়, তারপর ২০২১ সালে বাগুইহাটিতে মুখ্যমন্ত্রীর আদলে তৈরি দুর্গা প্রতিমা অথবা এই বছর, ২০২২ সালে রুবি পার্কে গান্ধীজির অবয়বে অসুর মূর্তি তৈরি করলে, শুধু প্রশাসন নীরবতা পালন করেন, কেবল তাই না, অধিকাংশ মানুষও নীরবতা পালন করেন। কখনো ভয়ে, কখনো ভক্তিতে।

আগে একটা কথা খুব শোনা যেত, সেটা হল “দলদাস”, কিন্তু কালের কালচক্রে এই বঙ্গে আজ বিরাট মাত্রায় প্রশাসনিক কর্তা থেকে পুলিশ আজ “ক্রীতদাস” হয়েছে।

মহাষ্টমীর আলোর ঝলকানির মধ্যেও অনেক আঁধার জমে আছে। সেটা এড়িয়ে গেলে, এই বঙ্গসমাজও অতল আঁধারে তলিয়ে যাবে।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চ : শুধু রাসবিহারী নয়, এবারে বুকস্টল ভাঙা পরেছে দিনহাটাতেও।