অধীরবাবু, আমরা লজ্জিত / Adhir Biswas

চলছে কলকাতা বইমেলা। চারদিকে দেশ বিদেশের হরেক রকম বই নিয়ে হরেক রকম স্টল। তেমনই একটা স্টল ১৭৫। নাম গাংচিল। প্রতিবারের মত এবারেও অনেকে এসেছেন, আসছেন এবং আসবেন এখানে। এঁদের প্রকাশ করা নানান বই উল্টে পাল্টে দেখছেন, কিনছেন, ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। আবার কেউ কেউ আসছেন নেহাতই অভ্যেসের বশে, হাতড়াচ্ছেন স্মৃতি।

তেমনই সেদিন বইমেলা থেকে এক প্রবীণ করুণাময়ী থেকে সরকারি বাসে উঠেছিলেন বাড়ি ফিরবেন বলে। ফাঁকা সিট দেখে সেখানে বসতে যেতে, একদল যুবক-যুবতী বাধা দিলেন, সেখানে নাকি জায়গা রাখা আছে! তিন তিনটে সিট খালি ! আর সবকটাতেই নাকি “জায়গা রাখা আছে।”

তারপর!

নাহ্, সবাই ঝগড়া করেন না, কেউ কেউ নিজের মতো করে প্রতিবাদ করেন। এই প্রবীণ মানুষটিও বাসের মেঝেতে বসে পড়ে নীরব প্রতিবাদ করেন। কিন্তু হায়, কি অদ্ভুত দেশে আমরা বাস করি? বাসের মেঝেতে একজন প্রবীণ সহনাগরিক কে বসে থাকতে দেখেও, সরকারী বাসে বসে থাকা মানুষদের বিবেক জাগ্রত হয় না, লজ্জাও হয়না। কেন? কারণ তারা তো ‘সিট পেয়েছেন’! বাসের ড্রাইভার ও কন্ডাক্টর যাঁদের ওপরে এই বাস পরিচালনা ও সাধারণ শৃঙ্খলারক্ষার ভার দেওয়া থাকে তারাও ঘটনাটি দেখেও দেখলেন না !

এই প্রসঙ্গে বলা দরকার সবাই এরকম করেন না। অনেকেই আছেন যাঁরা নিজের থেকে বয়স্ক প্রবীণ -প্রবীণাদের জন্য সিট ছেড়ে দেন। গর্ভবতী মহিলা বা শিশুকোলে মায়েদের দেখে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। কিন্তু সেইসব মানুষরা আজ সংখ্যায় কমে যাচ্ছেন বলেই এই লেখা। মনুষ্যত্ব এভাবে বিরলপ্রজাতির ডোডো পাখি হয়ে উড়ে চলে গেলে, আমরা কোন খড়কুটো ঠোঁটে বাঁচবো !

কিন্তু যে মানুষটা কোন খেউর বা কটুবাক্য উচ্চারণ না করে বাসের মেঝেতে বসে বিকল্প প্রতিবাদের ভাষা লিখলেন, তার নাম অধীর বিশ্বাস। প্রখ্যাত লেখক এবং গাংচিলের কর্ণধার। আমরা কি শিখলাম কিছু?

ওনার যদি কোন বিশেষ পরিচয় নাও থাকে, তাহলেও বয়স্ক মানুষকে জায়গা ছেড়ে দেবার ভদ্রতাটুকু দেখাতে আমরা কেন হোঁচট খেলাম !

আমরা লজ্জিত অধীর দা। আমরা পারিনি আপনাকে “জায়গা রাখা আছে” সিটে বসতে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। আমরা এই বর্তমান সমাজের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এই সমাজ আমরা চাইনি, কিন্তু তাই বলে আমরা কলম থামাবো না। কলম দিয়েই সমাজকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যাব। হয়তো আপনার মত পারবো না। কিন্তু চেষ্টাটা থাকবে।

ভালো থাকবেন অধীর দা, আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে।

বইমেলা ২০২২ মানুষের মধ্যে “মনুষ্যত্ব” কে মেলে ধরুক এই আশা রইল।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস