যখন জন্ম নেয় বিরোধী / The Rise of the Opposition

সাইকেল আর গনতন্ত্র প্রায় একই রকমের। এর দুটো চাকা। সামনের চাকা শাসকের আর পিছনেরটা বিরোধীর। আমরা জনগণ সেই সাইকেল চেপে দিব্যি গণতন্ত্রের হাওয়া খেয়ে ঘুরে বেড়াই। আর হ্যান্ডেলটা যেহেতু আমাদেরই হাতে থাকে, তাই চেষ্টা করি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে এগিয়ে যেতে। কিন্তু সেখানেও সংখ্যালঘু মতকে মান্যতা দেওয়া হয়, কারণ পেছনের চাকা না ঘুরলে সাইকেল এগোয় না।

কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে শাসকেরও ইচ্ছে করে চাকা হয়ে শুধু শুধু না ঘুরে, আমাদেরকে মানে জনসাধারণকে হঠিয়ে দিয়ে, সাইকেলের সিটে চেপে বসতে। দখল নিতে হ্যান্ডেলের, যাতে বিরোধী মতামতকে গ্রাহ্য না করে ইচ্ছেমত যেদিকে খুশী যাওয়া যায়। চেষ্টা করে পেছনের চাকাটা খুলে ফেলে একচাকার সাইকেল বানাতে। আর এরই ফলশ্রুতি ভোটলুঠ বা ছাপ্পাভোট। আমদানী হয় “ওরা শূন্য” অথবা “দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না”, “সাইনবোর্ড হয়ে গেছে, এবার ছোট স্ট্যাম্প হয়ে যাবে” ইত্যাদি আপ্তবাক্যের।

তখন এঁদের মাথায় থাকে না “মানুষই ইতিহাস রচনা করে।”

কারণ সাইকেলের সিট থেকে মানুষকে জোর-জবরদস্তি নামিয়ে দিয়ে সিটে চেপে বসলেই বা পেছনের চাকাটা খুলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলেই, লড়াই লাগে।

না। এটা কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের লড়াই নয়। এ হল মানব সভ্যতার চলমান সাইকেল থেকে মানুষকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ।

মানুষ তখন নিজের তাগিদেই সাইকেলের পেছনের পুরানো ক্ষয়ে যাওয়া চাকা ফেলে দিয়ে নতুন চাকা লাগায়। আর এই “চাকা বদল”ই জন্ম দেয় নতুন নেতার। আর এই নেতা মানুষই খুঁজে আনে। শাসক যখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ইচ্ছেমত সাইকেল ছোটাতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎই সামনে এসে দাঁড়ায় মানুষের নেতা। তখন আর তাকে দেখবার জন্য পকেট থেকে দূরবীন বার করবার প্রয়োজন পড়ে না। বরং পুলিশ প্রশাসন থেকে মোসাহেব সব্বাইকে লেলিয়ে দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে।

কিন্তু নেতা বলেন “এভাবে পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না। ওঁরা ভুল করছেন। এ হল মানুষের লড়াই। লুঠে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়াদের লড়াই।”

আসলে নেতারা জানেন, সেই প্রস্তরযুগ থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত অস্তিত্বের লড়াই মানুষ জিতে এসেছে বলেই আজও টিকে আছে। মানুষ হারে না। মানুষ হারতে পারে না। শাসকরাই শুধু হারে। আর তাই মানব সভ্যতার সাইকেলটাও তড়তড়িয়ে এগোতে থাকে।

মানব সভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যায় এ হল লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। মানুষ লড়তে থাকে। নেতারা আসতে থাকেন। পতাকার রং বদলালেও এই গপ্পোটা চিরন্তন একই থাকে। আর “আমাকে আন্দোলন শেখাতে আসবেন না, আন্দোলন লগ্নে জন্ম আমার” এমন অনেক অর্বাচীন আস্ফালন হারিয়ে যেতে থাকে কালের গর্ভে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চঃ “নেতা” শব্দটা পুংলিঙ্গ, আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস বিশ্বাস করি না।