বাংলার বিপদ / The Biggest Threat Of Bengal

প্রতিদিন টিভি চ্যানেলে, খবরের কাগজে, দোকানে-বাজারে যে সব প্রতিবেদন, আলোচনা আমাদের চোখে পড়ে, তাতে অনেক মানুষের তীব্র ক্ষোভ আর নয়তো হতাশা। কেন জিজ্ঞাসা করলে, উঠে আসবে নানান কারণ। কোনোটা রাজনৈতিক, কোনোটা সামাজিক, কোনোটা আবার ধার্মিক । কিন্তু সব কারণের উৎসস্থল একটাই, আর সেটাই বাংলার বিপদ।

এক কথায় উত্তর চাইলে, ধর্মীয় আগ্রাসন। বাংলার সবচেয়ে বড় সমস্যা এই মুহূর্তে ধর্মীয় আগ্রাসন ছাড়া আর কিছু নয়, যেটা বাঙালির সংস্কৃতিকে গিলে ফেলতে উদ্যত।

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলা সহনশীলতা, সম্প্রীতি, সাম্যের স্থান। উচ্চ চিন্তার আড্ডা, ফুটবল, সুস্থ বিতর্ক সংস্কৃতির অংশ। একটা প্রবাদ আছে যে দুই বাঙালির বিতর্ক হলে, তিনটি উপসংহার হবে। প্রথম দুটি হল, দুটি লোকের নিজস্ব মতামত, এবং তৃতীয়টি বিতর্কের ফলাফল৷

রাজা রামমোহন রায় এখানেই “সতীদাহ” প্রথা রদের জন্যে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ করেছিলেন। বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষা, বিধবা পুনর্বিবাহের জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই লড়াইও ছিল সাংস্কৃতিক। আর রবীন্দ্রনাথ ধর্ম ভিত্তিক বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে ভারতের পূর্বপাড়ের এই ভূখণ্ডটি রাজনৈতিক মৌলবাদীদের কারণে গভীর সমস্যায় পড়েছে, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এই জমিতে কিছু রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। এখানে ধর্ম বা বর্ণের কোনও বৈষম্য যে একেবারে ছিল না তা নয়, কিন্তু সেসব বিবিধের মাঝেই হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান করে এসেছে। লালনের গানের ছত্রে ছত্রে যার মূল সুর ধরা আছে। অথচ সেই সুরটাকেই ভুলিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে।

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে যে বিভিন্ন ধর্মাচরণে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের ন্যুনতম হস্তক্ষেপও প্রয়োজন হয় না, সেটাই আজ ভুলতে বসেছে সবাই। আর তার ফলে রোপিত হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষটি। ইমাম ভাতা বা পুরোহিত ভাতা দেওয়া যে সরকারের কাজ নয়, রাজনীতির মঞ্চ থেকে যে ধর্মোন্মাদ উল্লাস ও হুঙ্কার বাঞ্ছনীয় নয় সেটাই মানা হচ্ছে না।

ব্রিটিশ রাজের সময়, শাসক ভারত শাসন করার জন্য “ডিভাইড অ্যান্ড রুল” গ্রহণ করেছিলেন। আর এই নীতির ফলাফল বাংলা ও পাঞ্জাবের ভাগ। যেটাকে দেশভাগ বলা হয়ে থাকে। আর এখন বাংলা কতিপয় রাজনৈতিক দলের “ভাগ করুন এবং শাসন করুন” নীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তুমি হিন্দু তো তোমার জন্য এই স্কিম গুলোর ব্যবস্থা করলাম। তুমি মুসলিম, তোমার জন্য এই প্রকল্প গুলো হাতে নেওয়া হল। এভাবে জনগণকে প্রতিমুহুর্তে মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তার নিজের নিজের জাত-ধর্মকে।

শেষ কয়েক বছরে এমনিতেই বাঙালির গর্ব করার বেশিরভাগ উপাদানগুলির পরিবর্তন সম্পন্ন, যাদের মধ্যে নতুন সংযোজন এই ভয়ানক ধর্মীয় আগ্রাসন, কোন ক্ষেত্রে তা সফট, কোনো ক্ষেত্রে হার্ড। এর থেকে মানুষ কবে পরিত্রাণ পাবেন, তা আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি না। কিন্তু সময় থাকতে এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমূহ বিপদ এটা বেশ ভালোই আঁচ করতে পারছি।