ধারে মা ভবানী / Indebted State?

১৯৪৭ থেকে ২০১১ অবধি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাজারে ধার করেছিল ১লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা (কংগ্রেস+বামফ্রন্ট আমলে ৬৪ বছরে ধারের পরিমান), যার মূল কারণ শুধুমাত্র বাংলার রূপায়ণে পরিকাঠামো উন্নয়ন, শুরু হয়েছিল ডাক্তার বিধান রায় এর আমল থেকে বামফ্রন্ট আমল, যাকে আমরা কর্পোরেট ভাষায় “ক্যাপেক্স” বলে জানি অর্থাৎ “ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার”।

২০১১ থেকে ২০২২ অবধি সময়ে বর্তমান সরকারের আমলে সেই ধার পৌঁছেছে ৫ লক্ষ ৮১ হাজার কোটি টাকাতে।

গত ১১ বছরে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা ধার।
বর্তমান সরকার গত ১১ বছরে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তাতে বিগত ৬৪ বছরে করা ঋণ সুদ সমেত মিটে যাওয়ার কথা। কিন্তু মেটেনি। ঋণের পরিমাণেই স্পষ্ট এই সরকারের বিগত এক দশকের করা ঋণ তার আগের বিগত সাড়ে ছয় দশকের ঋণের দেড় গুণ। মানে সময়সীমা ধরে তুল্যমুল্য বিচার করলে আদতে দশ গুনেরও বেশি।

অথচ বর্তমান সরকার ডিএ বহুকাল ধরে দিতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে অবসরকালীন আর্থিক সুযোগ সুবিধা আটকে রয়েছে অনেকের। এক্ষেত্রে ৫.৫ লক্ষ শূন্যপদের নিয়োগ বন্ধ রাখায় অবশ্য সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ বাঁচে। তার পরেও সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কাজ চলছে। এইসব সিভিকদের মাইনে স্থায়ী কর্মচারীদের মাইনে ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা তারও কম। এইসব খাতে সবমিলিয়ে সরকারের সাশ্রয় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা।

তার ওপর চলছে দেদার দিশি-বিদেশী মদের দোকান খুলে দিয়ে তাতে ট্যাক্স চাপিয়ে বাড়তি আয়, বিদ্যুতের ট্যাক্স বৃদ্ধি কিম্বা মহামারীর দোহাই দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে পেট্রোল-ডিজেলে অত্যধিক ট্যাক্স চাপিয়ে তার থেকে অতিরিক্ত আয় যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে সর্বোচ্চ। মানে আয়ের কোন কমতি নেই।

অথচ বিরোধীদের বক্তব্য গত ১১ বছরে সরকারের তরফে রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে কোনো উদাহরণ নেই। শুধু সবকিছুর রং বদলেছে আর এই রং বদলের কারবারে, কে সবথেকে বেশি লাভবান হয়েছেন, আপনারা সব জানেন।

তাদের আরও বক্তব্য একমাত্র মাঝেরহাট সেতু, যা নিজে নিজেই ভেঙে পড়েছিল তৃণমূল আমলে, সেই কাজটা সম্পূর্ণ হয়েছে। টালা সেতু, যা ভেঙে পড়তে চলেছিল, তার মেরামতির কাজও এই সরকার এখনও শেষ করতে পারেনি।

তাহলে উন্নয়নের জোয়ারের নামে, ধার-দেনার এই জোয়ার এবং এতো লক্ষ্য কোটি টাকা যা দিয়ে সত্যি কলকাতাকে লন্ডন বানানো যেত সেই টাকা কোথায় গেলো?

শাসকঘনিষ্ঠদের বাড়ি-গাড়িতে খরচা হয়ে গেল কি?