আর কত নির্মান ভাঙলে… / Where is the end of corruption?

গতকাল রাত্তির সাড়ে নটা, ব্রিজি গাজিপুকুর এলাকায় পৌরনিগমের ১১০ নং ওয়ার্ড অফিসের পাশে ভেঙে পড়ল জলের রিজার্ভার, আহত তিনজন। তবে এই ভেঙে পড়া প্রথম নয়, এর আগেও এমন অনেক কিছুই ভেঙেছিল, আমরা তা শুনেওছিলাম। তারপর অনেকেই সেই বিষয়গুলো নিয়ে চারদিন খিল্লি করে, শাসকের প্রত্যাশা মতই বেমালুম ভুলে গেছি ঘটনাগুলো। সেই রকমই কয়েকটা ভুলে যাওয়া ঘটনার লিস্টি দেওয়া হল:

১) উল্টোডাঙা উড়ালপুল
স্থান
: বিধাননগর, কলকাতা
তারিখ: মার্চ ৩, ২০১৩
মৃত: নেই
আহত: ৩
সম্ভাব্য কারণ: বোল্ট সিস্টেমের টেকনিক্যাল সমস্যা
শাসকের প্রতিক্রিয়া: ২০১৩ তে সরাসরি দায় চাপানো হয়, পূর্বতন বাম সরকারের ওপর। এরপর ২০১৯-এ এই ব্রিজে ফাটল দেখা যাওয়ায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, প্যানিক করবেন না, এই ব্রিজ আরো ৩০ বছর পরিষেবা দেবে।

২) ভীমগড়-বিনুইঘাট রাস্তার উপরে কালভার্ট
স্থান: খয়রাশোল, বীরভূম
তারিখ: আগস্ট ২৮, ২০১৫
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং অতিরিক্ত ভারী যান চলাচল
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

৩) নির্মিয়মান পোস্তা উড়ালপুল
স্থান: পোস্তা, কলকাতা
তারিখ: মার্চ ৩১, ২০১৬
মৃত: ২৭
আহত: ৮০
সম্ভাব্য কারণ: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার
শাসকের প্রতিক্রিয়া: মুখ্যমন্ত্রী এই বিপর্যয়ের দায় পূর্বতন বাম সরকারের উপর চাপিয়েছিলেন।
বর্তমান অবস্থা: ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও, এখনো উড়ালপুল ভাঙার কাজ অসম্পূর্ণ

৪) মাঝেরহাট রেল উড়ালপুল
স্থান: মাঝেরহাট, কলকাতা
তারিখ: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮
মৃত: ৩
আহত: ২৫
সম্ভাব্য কারণ: উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
শাসকের প্রতিক্রিয়া: মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই বিপর্যয়ের দায় মেট্রো রেলের ভাইব্রেটরের উপর চাপিয়েছিলেন।
বর্তমান অবস্থা: যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন উড়ালপুল নির্মাণ সম্পন্ন।

৫) নবনির্মিত জলের ট্যাঙ্ক
স্থান: সারেঙ্গা, বাঁকুড়া
তারিখ: জানুয়ারি ২২, ২০২০
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, ভেঙে পড়ার সময় বয়স হয়েছিল ২ বছর
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

৬) নির্মীয়মাণ উড়ালপুল
স্থান
: বৈষ্ণবনগর, মালদহ
তারিখ: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
মৃত: ২
আহত: ৭
সম্ভাব্য কারণ: পিলার ১-২ এর গার্ডার যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন না করে প্রতিস্থাপন করার সময়ে দুর্ঘটনা।
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

৭) পুরাতন জলের ট্যাঙ্ক
স্থান: সল্টলেক, কলকাতা
তারিখ: মার্চ ১১, ২০২০
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

৮) নবনির্মিত জলের ট্যাঙ্ক
স্থান: গাংনাপুর, নদীয়া
তারিখ: জুন ২৫, ২০২২
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: উদ্বোধনের আগেই ভেঙে পড়ে জলের ট্যাঙ্ক, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

৯) নির্মিয়মান স্কুল ভবন
স্থান: পুন্ডিবাড়ি, কোচবিহার
তারিখ: জুন ৯, ২০২২
মৃত: ১
আহত: সঠিক জানা যায়নি
সম্ভাব্য কারণ: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

১০) ভগবতী বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন
স্থান
: বীরসিংহ, পশ্চিম মেদিনীপুর
তারিখ: জুলাই ৫, ২০২২
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: ভবনটিকে ২০১৯ সালে হেরিটেজ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ভবন সংস্কারের কাজ চলছি। চলাকালীন তার একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে। সঠিক কারণ জানা যায়নি।
শাসকের প্রতিক্রিয়া: পাওয়া যায়নি

১১) স্কুলবাড়ির ছাদের চাঙর খসে পড়া
স্থান: মগরাহাট, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
তারিখ: জুলাই ১৮, ২০২২
মৃত: নেই
আহত: ১০
সম্ভাব্য কারণ: রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

১২) নির্মিয়মান কালভার্ট
স্থান: দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
তারিখ: জুন ২৯, ২০২২
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াই চলছিল নির্মাণের কাজ
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

১৩) ক্যানেলের গার্ডওয়াল
স্থান: হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
তারিখ: জুলাই ২৫, ২০২২
মৃত: নেই
আহত: নেই
সম্ভাব্য কারণ: নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, ভেঙে পড়ার সময় বয়স হয়েছিল কয়েক মাস
শাসকের প্রতিক্রিয়া: খতিয়ে দেখার আশ্বাস

আজ আপাততঃ এই কটা থাকুক। নির্মাণগুলির ভেঙে পড়ার কারণ মোটামুটিভাবে পুরোনো নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, আর নতুন হলে দেখা যাচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিক্রিয়া হিসেবে শোনা যাচ্ছে শাসকদের আশ্বাস অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায় ঝেড়ে ফেলার প্রচেষ্টা।

আমার আপনার ট্যাক্সের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ বা নির্মাণের ক্ষেত্রে অ্যালোকেটেড টাকাগুলো তাহলে যাচ্ছে কোথায়? কাদের পকেটে? কাদের বাড়িতে? কাদের ডেরায়? এখন তো আবার এমনও অভিযোগ উঠছে যে, “বেনামী টাকা” যেখানে গচ্ছিত আছে বলে তদন্তকারী সংস্থার তরফে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেখানেই আবার চুরি হয়েছে, সেটা টাকা না নথি, তা আমরা জানি না। ঘটনাটি বারুইপুরের একটি বাগানবাড়িতে, যা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘সম্পত্তি’ হিসাবে পরিচিত। যে বাড়িতে চুরি হল, সেটাকে মিডিয়া দেখাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তাই, এই বাড়ি যদি ইডি’র কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে ইডি পাহারার ব্যবস্থা করল না কেনো? অনুপ্রাণিত মিডিয়া এই প্রশ্ন কি তুলবে না! তাহলে কোন প্রশ্ন তুলবে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন আজ খবরে দেখলাম, ইডি হেফাজতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গত রাতে ভাত, ডাল, তিনটি রুটি খেয়েছেন।

তাহলে কি এই চুরিকে আমাদের আইওয়াশ হিসেবে ধরে নিতে হবে? এই চুরি কি একটি বার “বাঁচার সুযোগ দেওয়া”? নাকি জনগণের মনে “চোর” এর ভাবমূর্তি গড়ে তোলা? মূল উদ্দেশ্য কি? এর উত্তর সহজেই অনুমেয়।

যাই হোক, আপনারাও আপনাদের এলাকায় ঘটে যাওয়া বা এমন কোন কাজ যা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বানানো হয়েছে বা হচ্ছে অথবা সরকারি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব দেখলে, তার ছবি এবং বর্ননাসহ আমাদের পাঠিয়ে দিন। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করব।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস