চাইলেন চাকরি, পেলেন অর্ধচন্দ্র / Deprived Jobseekers

“চাইলো ডাল-ভাত, পেলো কাকের পচা মৃত থকথকে লাশ”

মুর্শিদাবাদ, মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। ধান-গম বাদ দিয়ে, এখানকার চাষিরা মূলত তিল, তিসি, মুগ -মুসুর, পাট, গম ইত্যাদি চাষ করে সংসার চালান।

২০১৩-এর পর থেকে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের সমস্যায় ছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার এই সমস্যার আকাশকুসুম সমাধান করেন; বলেন পাট-গম চাষ না করলে পার্থেনিয়াম গাছ গজাবে না। তাই নাকি দীর্ঘ আট বছর ধরে মুর্শিদাবাদে পাট আর গম চাষ বন্ধ। এদিকে বেমরশুমি বৃষ্টির জন্য তিল, তিসি, মুগ -মসুর চাষ করে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বছরের পর বছর। তাই, কৃষিনির্ভর পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে চাকরির জন্য গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ছুটছিল ভিনরাজ্যে ভিন দেশে। চাষবাস করে সংসার চলছে না যে।

এরই মধ্যে, প্রাক্তন আইপিএস এবং বর্তমান মন্ত্রী হুমায়ুন কবির ঘোষণা করেন, এলঅ্যান্ডটি কোম্পানিতে বেশকিছু লোক নেওয়া হবে। বহরমপুর স্টেডিয়ামে এরজন্য ফর্ম ফিলাপ এবং সঙ্গে সঙ্গে চাকরি। শূন্যপদ ১২০০। নাহ্, সরকারি চাকরি নয়, পরিযায়ী শ্রমিকের চাকরি। আসলে লেবার ঠিকাদাররা সস্তার শ্রমিক খুঁজতে এই জেলায় আসে। এলএন্ডটি কোম্পানিও সিএসটিআই (কনস্ট্রাকশন স্কিলস্ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে কিছু স্কিল্ড/আনস্কিলড লেবারকে তাদের বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টে সস্তায় খাটায়। এদের না আছে, নূন্যতম বেতন, না আছে কাজের নিরাপত্তা। সোজা কথায় বললে, এরা অসংগঠিত পরিযায়ী শ্রমিকের ঠিকাদার। যেহেতু বিধানসভা নির্বাচনের আগে, মুখ্যমন্ত্রী “ডাবল ডাবল” চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে এত আয়োজন। ন্যুনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ।

বামেদের সময় মুর্শিদাবাদের প্রায় প্রতিটা গ্রামে একটা করে হাই স্কুল তৈরি হবার জন্য গড়ে প্রায় ৬০% ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করছে। তাদের বেশিরভাগ এখন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেও বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে। কারণ সরকারী চাকরীতে নিয়োগ প্রায় বন্ধ। যেগুলিতে হচ্ছে, তার বেশিরভাগে নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতির ভুড়িভুড়ি অভিযোগ। আদালতে তাই নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। কবে মিটবে কেউ জানে না। তাদের মুখ বন্ধ করতে ঘুরিয়ে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভাড়া খাটা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে বলানো হচ্ছে “চা-চপ” বিক্রি করো। কোন কাজই ছোট নয়। কাজেই বিএ/এমএ/বিএড/পিএইচডি করা যুবক-যুবতীরাও এক্ষেত্রে চলল বহরমপুর স্টেডিয়ামে, পরিযায়ী শ্রমিক হতে। প্রায় হাজার পঞ্চাশেক ছেলে মেয়ে হাজির ১২০০ পদের জন্য।

কিন্তু চাকরির ফর্ম ফিলাপ অনেক দূরের কথা, স্টেডিয়ামে ঢুকতেই শুরু হল পুলিশের লাঠিচার্জ। কারো কারো মনে পড়ল ছেলেবেলায় স্কুলের বইতে পড়া জেনারেল ডায়ার আর জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস।

কিন্তু যে সত্যিটা চাপা দিতে মুলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলি এই খবরটা এড়িয়ে গেল, সেটা হল এভাবেই বছরের পর বছর বহরমপুর থেকে কলকাতা, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক যুবতী গাঁ-উজিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছে অথবা বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে ; পাড়ার মোড়ে তাস-ক্যারম পেটাচ্ছে। আর এদের মায়েদের মুখ বন্ধ করে রাখতে সরকার বাহাদুর ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিয়ে দুয়ারে হাজিরা দিচ্ছে। তাই বেকার যুবকদের বুঝতে হবে, হকের দাবি কেউ উপহার দেয় না। ওটা রাস্তায় নেমে লড়াই আন্দোলনের নধ্যে দিয়ে ছিনিয়ে নিতে হয়। আর সে লড়াইয়ের সাথীদের চিনতে হলে, দাঁতকপাটি লেগে যাওয়া কুলীন সংবাদমাধ্যমের সাথে সাথে “রাইস অফ ভয়েসেস” এর মতন অনাম্নী অজ্ঞাতকুলশীল প্ল্যাটফর্ম গুলিতে চোখ রাখুন।

মূল লেখনী সায়নের, ওনার অনুমতি নিয়ে পরিমার্জিত সংস্করণ রাইজ অফ ভয়েসেসের দেওয়ালে দেওয়া হল।

আর যারা এই খবরটির কোন সংবাদমাধ্যম লিঙ্ক খুঁজছেন সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাদের জন্য অথ্যসূত্রে লিঙ্ক দেওয়া হল। আর তার সাথে দেওয়া হল ভিডিও ফুটেজের লিঙ্ক !

তথ্যসূত্র:
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/nadia-murshidabad/chaos-regarding-submission-of-application-for-job-in-berhampore/cid/1317019#.Yazl1kLejPE.whatsapp
b) https://www.msn.com/bn-in/news/westbengal/%E0%A6%AC-%E0%A6%B0-%E0%A6%B6-%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%AC-%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7-%E0%A6%A7-%E0%A6%95-%E0%A6%AD-%E0%A6%A1%E0%A6%BC-%E0%A6%B8-%E0%A6%AE%E0%A6%B2-%E0%A6%A4-%E0%A6%B2-%E0%A6%A0-%E0%A6%9A-%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%B6-%E0%A6%B0/ar-AARucnD?li=BB13mhxk
c) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2021-12-05/202112042347484.jpg&category=0&date=2021-12-05&button=
d) ভিডিও ফুটেজ: https://youtu.be/FXTjbV_iwV4