ফাঁকা মাঠে ‘ঝোল’ / The Colourful Corner
গীতা হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। হিন্দুরা গীতাকে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী বলে মনে করেন। আমরা বাঙালীরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ঠাকুরঘরে দেবতার আসনের পাশে গীতা রাখা থাকে। ধার্মিক মানুষজন ভক্তি ভরে তা পাঠ করেন। যারা শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পড়েছেন এবং আত্মস্থ করেছেন তারা গীতার প্রতিটি শ্লোকের দার্শনিক গভীরতা সম্পর্কে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আজ সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কে নিয়ে অযথা রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। তা না হলে যে ‘গীতা’র ছত্রে ছত্রে জাগতিক মোহ মায়া ত্যাগ করে ফলের আশা না করে কাজ করে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে সেই গীতাপাঠ ‘লক্ষ কন্ঠে’ করে ‘বিশ্বরেকর্ড’ গড়বার এমন জাগতিক হাতছানি আমাদের কাছে সত্যি বিস্ময়কর ঠেকেছে। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের এমন অবিমিশ্রকারিতায় আমরা হতবাক!
আর এমন অনুষ্ঠান তাঁরা স্বেচ্ছায় আয়োজন করেছেন নাকি বিজেপির বঙ্গ শাখা তাদের দিয়ে করিয়েছেন মনে প্রশ্ন জাগে। কারণ যে ভাবে ‘গীতাপাঠ’কে সামনে রেখে রাজ্য জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ধর্মীয় আবেগ উস্কে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জমায়েত করে বিজেপির লোকবল ও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা দেখানোর চেষ্টা করলেন তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। যদিও তাতে যে দুজনেই ডাহা ‘ফেল’ করেছেন তা ব্রিগেডের ‘ফাঁকা’ মাঠই বলে দিচ্ছে। আর ফ্লপ শো হতে চলেছে আগাম আঁচ করেই প্রধানমন্ত্রীও সঙ্গত কারণেই আর এদিকে পা বাড়াননি। দিল্লি থেকে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে নিজের ও দলের মুখরক্ষা করেছেন।
খুব জোর হাজার দশেক লোক হাজির হয়েছিলেন ব্রিগেডে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে। ইনফ্যাক্ট ড্রোন ভিউ’তে জনসমাগম এতটাই খারাপ দেখিয়েছে যে দশ হাজার বলছি বলে আমাদের কে লোকজন বিজেপির ‘দলদাস’ বলে দাগিয়ে দিতেও পারে । এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক আছেন ৭৭ জন। প্রত্যেক বিধায়ক নিজের নিজের বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে গড়ে শ’তিনেক লোক জোগাড় করলেও তো হাজার বিশেক জনসমাগম হত! সেই ক্ষমতাও যে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত বিধায়কদের নেই তা আজ প্রমাণিত। মাঝাখান থেকে গীতা নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে বঙ্গ মিডিয়ার আগলখোলা ফুটেজ পেয়ে ও খেয়ে বেঁচে থাকা বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতা জনসমক্ষে বেআব্রু হয়ে পড়লো। তার ওপর মূল মঞ্চের বক্তৃতায় জিভ টেনে ছিঁড়ে নেওয়ার হুমকি থেকে হিন্দুদের বেশী বেশী সন্তান উৎপাদনের প্রিমিটিভ পরামর্শ শুনে কখনই মনে হয়নি আয়োজকরা আদৌ ‘ভাগবত গীতা’র দর্শন ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবহিত! ফলে ধার্মিক, বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক কোন চাহিদাই পূরণ করতে পারেনি ‘লক্ষ কন্ঠে’ গীতাপাঠ।
সত্যি কথা বলতে কি মাস দেড়েক আগে ‘লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ’ আয়োজনের শুরু থেকে সাধু-সন্তদের আড়ালে পাঠিয়ে শুভেন্দু-সুকান্তদের ভোটবাক্সে সংখ্যাগুরু ঝোল টানবার প্রয়াস এতটাই প্রকট ছিল যে বাঙালীর সেটা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। গীতাপাঠের নামে যে ‘বিজেপি পাঠ’ হতে চলেছে, উগ্র হিন্দুত্বের আস্ফালন ও প্রদর্শন হতে চলেছে মানুষ সেটা আগেই ধরে ফেলেছিলেন। আর তাই মাঠও ভরেনি।
মাস খানেকের ব্যবধানে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অমিত শাহের ‘ফ্লপ শো’র পর ব্যাক-টু-ব্যাক ফ্লপ ব্রিগেড।
বিজেপিকে বুঝতে হবে এভাবে হয় না। এভাবে আর হবে না।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.