মানিক / Moral Victory

আজ হঠাৎই রাজ্যের শাসক দলের বেশ কিছু অনুগামী সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বসিত। অনেকেই আজকের সুপ্রিম কোর্টের বার্তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার আরো এক ধাপ এগিয়ে বাপ-বাপান্ত করছেন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্য্যের অপসারণে সুপ্রীম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে মঙ্গলবার। এটাই নাকি সামাজিক মাধ্যমের বেশ কিছু তৃণমূল সমার্থকদের কাছে নৈতিক জয়। তাই আমরাও হিসেব করতে বসলাম, ঠিক কতটা “নৈতিক জয়” হয়েছে মানিকবাবুর।

নৈতিক জয় : কারন ১

সিবিআই তদন্ত চালালেও এখনই মানিককে গ্রেফতার করতে পারবেনা।

কিন্তু বেশ কয়েকদিন আগে মানিকবাবু ইডি’র হাতে গ্রেফতার হয়ে গেছেন। আর সুপ্রীম কোর্ট ইডিকে কোনো নির্দেশই দেয়নি। মানে, এটা ধরে নেওয়া যায়, ইডি যা করেছে, ঠিক করেছে। যতদূর জানি, আর্থিক দুর্নীতির ক্ষেত্রেই আগমন হয় ইডি’র। কাজেই মানিকবাবু এখন জেল হেফাজতেই থাকবেন।‌ চিন্তার কিছুই নেই, মাননীয়া পুজোর আগেই এই ব্যাপারে অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বাড়িতে বসে ভাত খেতেন, না হয় জেলে বসে ভাত খাবেন। মনে রাখবেন, জেলের চালটাও আমরা দিই।”

আর হ্যাঁ, সিবিআই-ও তদন্ত প্রক্রিয়া নিজেদের মত চালিয়ে যেতে পারবে, ওতে কোনো স্টে নেই।

নৈতিক জয় : কারন ২

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্য্যের অপসারণে সুপ্রীম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে মঙ্গলবার।

কিন্তু তাকে পুরোনো পদে পুনর্বহাল করার কথাও বলা হচ্ছে না। কারণ, ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে নতুন সভাপতি বসে গেছেন। এক্ষেত্রে পুরোনো সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য্যকে সেই আসনে টেকনিক্যালি ফেরাতে পারেন একমাত্র রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই রিস্ক নেবে বলে কারোরই মনে হয় না।

নৈতিক জয় : কারন ৩

২৬৯ জন শিক্ষককের চাকরি বাতিল করতে হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ।

যাক স্বস্তি! কাজেই আপাতত “ব্যতিক্রমী”দের চাকরি বহাল থাকছে কিছুদিন।

ডাক্তারবাবুরা যেমন মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে ঔষধ দেন, ঠিক সেভাবেই ভারতের আইনে স্পষ্ট করে লেখা আছে, কোনভাবেই কোন নির্দোষ যেন সাজা না পায়। দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ নিষ্পাপ এবং নির্দোষ, ইংরেজিতে ইনোসেন্ট। তবে এখানে মাথায় রাখতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু বাকি থাকা বিচারের পথ বন্ধ করেননি।

তাই সুপ্রীম কোর্টের তরফে ২৬৯ জনকে একবার সুযোগ দেওয়া হল, তাদের নির্দোষ প্রমাণ করার। তাই সুযোগ আর স্বস্তি, এই দুটোর মানে পৃথিবীর সমস্ত ডিকশনারিতে আলাদা।

এরপর ২৬৯ জন কোর্ট-সিবিআই-ইডি’র কাছে গিয়ে কাদের টাকা দিয়েছেন তাদের নাম বলবেন, নাকি রাজসাক্ষী হবেন, নাকি বিকাশবাবুর কাছে আইনি সাহায্যের জন্যে যাবেন, তা তারাই ঠিক করবেন। কিন্তু এটা পরিষ্কার মানিকবাবুর ললাট লিখন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই জলের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তাই আজকে সুপ্রীম কোর্ট যা জানালো তার ভিত্তিতে একে “ব্যতিক্রমী” নৈতিক জয় বলাই যায়।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চ: “ব্যতিক্রমী” শব্দের সঠিক অর্থ আমরা রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর কাছে শিখেছি।