আন্তর্জাতিক নারী অধিকার সম্মেলনে কে? / Irony at Its Peak

খবরটা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। অ্যাইসা ভি হোতা হে! আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগামী ১৭ থেকে ২২ নভেম্বর নরওয়ে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে রয়্যাল নরওয়েজিয়ান এম্বাসি ও ইউনাইটেড নেশনস উইমেন। শুনলে মনে হবে, তিনি বোধহয় পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত! তবে বাস্তবতা? তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, একদা জারি হওয়া লুক আউট নোটিশ, পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি, আর জি করের ঘটনার সময়ে সম্পূর্ন নীরবতা অবলম্বনের অভূতপূর্ব নমুনা—সবকিছু ছাপিয়ে তিনি যেন নারীর ক্ষমতায়নের পোস্টার বয় হতে চলেছেন। ঠিক যেভাবে একদা তারই সতীর্থ শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় হয়েছেন।
আর জি করের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাত্রিকালীন কর্মরত মহিলাদের কর্মক্ষেত্র থেকে অব্যাহতির আদেশ দিতে গিয়েছিল, যদিও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এত বড় সিদ্ধান্তের সময়েও তিনি একবারও বিরোধিতার কথা তো দূরে থাক, প্রতিবাদের শব্দটুকুও উচ্চারণ করেননি। এমনকি তার অনুগামীরা একসময় সোনা পাচারের অভিযোগে তার স্ত্রীয়ের বিরুদ্ধে মামলা চলার সময় বিচারপতির নামেও পোস্টার লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ, তবুও তিনি সেই বিষয়ে মৌনব্রত পালন করেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নরওয়ের মঞ্চে তিনি কী বলতে যাচ্ছেন? বাংলার নির্যাতিতা নারীদের প্রতি তার দলের “ছোট ঘটনা” বলার ঐতিহ্য তুলে ধরবেন, নাকি তার স্ত্রী-শ্যালিকার সোনা পাচারের অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মহৎ বাণী ছড়াবেন? এমন একজনকে এই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো আদৌ কতটা যৌক্তিক? এটিই কি আর জি কর আবহে তৃণমূলের কালিমালিপ্ত ভাবমূর্তি মুছে ফেলার আরেকটি নাটকীয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা? আর এ সুযোগটি তার জন্য করে দিল কারা? কেন্দ্রীয় সরকার? কী অদ্ভুত দায়বদ্ধতা!
জনমনে এখন প্রবল সন্দেহ—এটি নারীর ক্ষমতায়নের উৎসব, নাকি রাজনৈতিক নাটক মঞ্চস্থ করার আন্তর্জাতিক প্রয়াস? যদি নারীর অধিকার রক্ষার জন্য এমন নেতাদেরই প্রতিনিধিত্ব করতে হয়, তবে সমাজের নারীরা আর নিরাপত্তা আশা করবে কোথায়?
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.