কতটা পথ হাঁটলে… / The Endless Wait

দুর্নীতির অন্ধকারে ডুবে থাকা এই সমাজে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারের আশা যেন ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদের নীরব সমঝোতার মধ্যে প্রতিটি দুর্নীতির ঘটনার বিচার প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। শাসকেরা ক্ষমতার আসনে টিকে থাকতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, যেখানে কামদুনি-পার্ক স্ট্রিট-আনিস থেকে হালফিলের তিলোত্তমা কাণ্ড থেকে শুরু করে ডিএ মামলা, আবাস কেলেঙ্কারি, শিক্ষা, বালি, গরু, খাদ্য, ডিসিআর গেট, কয়লা চুরির মতো অপরাধগুলো দিনের আলোর মতো প্রকাশ্য হলেও বিচারপ্রক্রিয়া বারবার ধীরগতিতে চলছে।

তিলোত্তমা কাণ্ড এই মুহূর্তে যেন এক প্রহসনময় নাটক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কাণ্ডে এখন পাওয়া যাচ্ছে তারিখের পর তারিখ। মাস তিনেক আগে, আমরা আর জি কর কান্ডের সাথে সম্পর্কত সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছিলাম, যে প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিক হলেও, আজও সেগুলোর উত্তর অধরা। তাই, জনগণ প্রশ্ন তুলছে, এই প্রভাবশালী দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য বিচার ব্যবস্থার চোখ কি অন্ধ হয়ে গেছে?

ডিএ মামলায়, রাজ্যের হাজার হাজার কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে ন্যায্য বেতনের জন্য লড়ছেন, কিন্তু ২৩ মাস ধরে চলা এই মামলার সমাধান এখনও অধরাই। একের পর এক শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেন কিছুই এসে যায় না। সাধারণ মানুষের মনের কথা, যখন কিছু মিনিটে সিদ্ধান্ত হওয়া সম্ভব ছিল, তখন কেন এভাবে প্রহসনের রাস্তা ধরা হচ্ছে?

আবাস কেলেঙ্কারিতে গরিব মানুষদের ঘর কেড়ে নিয়ে সরকারী ফান্ড তছরুপের এই চিত্র কি দুর্নীতির আরেকটি নিদর্শন নয়? প্রান্তিক মানুষের মাথা গোঁজার স্থান কেড়ে নেওয়া এই অন্যায়ের বিচারও থমকে আছে, দোষীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি আরও ন্যাক্কারজনক। হাজার হাজার শিক্ষকের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার অধিকারকে দুর্নীতির হাড়িকাঠে উৎসর্গ করা হয়েছে। যোগ্যতার বদলে ঘুষ আর প্রভাবই যেন নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, অথচ শতছিদ্র বিচারব্যাবস্থা এবং শাসকদের আশীর্বাদে প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

খাদ্য, বালি, গরু, কয়লা চুরি এবং কালোবাজারির মতো অপরাধে অভিযুক্তরা প্রতি মুহূর্তে প্রভাবশালী সংযোগের বলে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আর বাঘ সেজে নিজের ডেরায় ফিরে আসছে। জনগণের ক্ষোভ, কেন এই কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?

আজকের সমাজ এখন সারদা-নারদা কেলেঙ্কারি প্রায় ভুলেই গেছে। সংবাদপত্রের পাতায় মুড়ে টাকা নেওয়া নেতা আজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, আর হাতে টাকা নিয়ে “থ্যাঙ্ক ইউ” বলা নেতা এখন দেশের সাংসদ। দুর্নীতি যেন তাদের জন্য এক অদ্ভুত শক্তি জুগিয়েছে, যেখানে তারা আইনের ঊর্ধ্বে।

এই সমস্ত ঘটনায় রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার মাঝে মাঝে একে অপরকে দোষারোপ করে, তবে ক্ষমতায় টিকে থাকার এক অলিখিত সমঝোতার চিহ্ন সবসময় দৃশ্যমান। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরস্পরকে আড়াল করে, যার ফলে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যায়।

আমাদের প্রশ্ন: এর শেষ কোথায়? কতটা পথ হাঁটলে সাধারণ মানুষ এসবের থেকে নিস্তার পাবে?

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস