লাগাম পড়ল কি! / Bulldozer Saga

গতকাল, দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় তথাকথিত ‘বুলডোজার জাস্টিসের‘ বিরুদ্ধে সাহসী রায় দিয়েছে, যেটি রাষ্ট্রযন্ত্রের চরম ক্ষমতার অপব্যবহারকে উন্মোচিত করেছে। যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত সংবিধান, নীতি-আদর্শকে পাশ কাটিয়ে এক শ্রেণির ‘বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন’ আধিকারিক নিজেদেরকে এই দেশ, সমাজ এবং বিচার ব্যবস্থার সর্বময় কর্তা হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছে। তাদের এই তাণ্ডব যেন মনে করিয়ে দেয় এক নয়া সামন্ততান্ত্রিক রীতির কথা, যেখানে ‘আইন নয়, শাসককে খুশি করতে, আমার খেয়ালই সত্য’—এটাই তাদের মূলমন্ত্র।

আমাদের সংবিধান, যার ভিত্তি আইনের শাসনে, তার প্রতি এমন অবমাননাকর আচরণ সরকারি আধিকারিকরা পায় কোথা থেকে? অভিযোগের আঙুল উঠলেই চলে আসে সেই পরিচিত কাঁঠালের আমসত্ত্ব— তা বিগত কয়েক বছরের বুলডোজারের আওয়াজেই স্পষ্ট!

দিল্লী

সুপ্রিম রায় আসার পর সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত মন্তব্য করেছেন, “আমি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই, যা বুলডোজার ব্যবস্থাকে অবৈধ এবং অসৎ বলে রায় দিয়েছে। এই রায় যদি আরও আগে আসত, তাহলে হয়তো বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে অসংখ্য ঘরবাড়ি এভাবে ধ্বংস হত না।” তার আরও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, “যদিও দেরিতে এসেছে, এই রায় একদিকে ভবিষ্যতে নিরীহ মানুষদের ওপর এমন রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে এবং সেই সব নিরীহ মানুষদের সুবিচার এনে দেবে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায় আক্রমণের শিকার হয়েছে।”

কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—কোন সমাজে আমরা বাস করছি? যে সমাজে একদিকে মুষ্টিমেয় ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছামত মানুষকে শাস্তি দেওয়ার এমন মনোবৃত্তি দিন দিন বাড়ছে? শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দরিদ্র ও সংখ্যালঘুদের উপর এক ধরনের ‘সামাজিক শুদ্ধিকরণের’ সূচনা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে অন্তত রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখোশ কিছুটা হলেও খুলে পড়েছে, তাদের বেআইনি তাণ্ডবকে সাময়িকভাবে থামানো গেছে। কিন্তু পুরোপুরি নয়, বহু ক্ষেত্রে এইরকম ঘটনা চাপা পড়ে যায় মাটির তলায়, কারণ বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ সরকারি ভাবে জমা পড়ে না, পড়লেও সরকার কোনোরকম ব্যবস্থা নেয় না।

রামপুরহাট

যখন আইন শাসনের খুঁটিনাটি নিয়ম-বিধি না মেনেই শাসনযন্ত্রের কোনো শীর্ষ কর্তা নিজেকে বিচারক এবং শাস্তিদাতা হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সেই ক্ষমতার অহংকার তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। আর এই নির্বিচার, দমনমূলক কার্যকলাপগুলো স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়ে উঠেছে। আশা করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তাদের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডে কিছুটা লাগাম দেবে। তবে, দুঃখের বিষয়, যতক্ষণ না এই গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রী শাসনযন্ত্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গণতন্ত্রের সত্যিকারের শিকড় রোপণ করা হবে, ততদিন পর্যন্ত এই আত্মম্ভরিতার বুলডোজার থামানো কঠিন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস