বিচার নাকি বাছাই? / Bye Bye Bye!

গত এক দশকে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে একটি অস্বস্তিকর পরিবর্তন অনুভূত হচ্ছে। জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ধারণা, যে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে, এবং এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সাহসী ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তখন মানুষ আশাবাদী ছিল যে, তিনি পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন। তবে বাস্তবে তিনি যে কতটুকু সাফল্য পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বহু মানুষ বিনা বিচারে কারাগারে আটকে আছেন, অথচ তাদের অধিকারের সুরক্ষায় তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। আদালতে বছরের পর বছর ধরে হেবিয়াস করপাস ও জামিন সংক্রান্ত আবেদনগুলি ঝুলে রয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব প্রকট হয়েছে। একদিকে একটি মামলায় ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে জামিন মঞ্জুর করা হয়, অন্যদিকে আরও অনেক মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্নে এই দ্বৈত নীতি কি ন্যায়বিচারের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

জ্ঞানবাপী মসজিদের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন যেখানে সমস্ত ধর্মীয় স্থান নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়েছিল, সেখানে এই ধরনের রায় ভবিষ্যতে আরও অনুরূপ দাবির ভিত্তি গড়তে পারে।

মহারাষ্ট্র বিধানসভার ঘটনাতেও বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি সরকার, যা রাজনৈতিক কারসাজি ও কৌশলে গঠিত, তা বহাল থাকার অনুমতি পাওয়ার ঘটনাটি কি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

অপরদিকে, চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে একটি স্পষ্ট দুর্নীতির ঘটনায় রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে কেবল একটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটিকে “গণতন্ত্রের হত্যা” বলে অভিহিত করা হলেও কার্যত কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তিলোত্তমা খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের নিরবতা ও সুও মোটো কার্যক্রমের ধীর গতি নিয়ে এখানে মন্তব্য না করাই শ্রেয়। কারণ এটি বিচারব্যবস্থার একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়, যা বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরও ক্ষুণ্ণ করেছে।

প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতিরা যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামাজিক মেলামেশা করেন, তা হলে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা কীভাবে বজায় থাকবে? জনগণ ন্যায়বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আদালতকে দেখেন। কিন্তু যদি সেই আস্থাই টলমল করে, তবে কীভাবে গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড অটুট থাকবে?

অবশেষে, অযোধ্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ রায় লেখা নিয়ে ধর্মীয় “প্রেরণা”র কথা স্বীকার করার ঘটনা কি আমাদের সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি আস্থা জাগায়, নাকি সেটিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর হয়তো ভবিষ্যৎই দেবে।

ধন্যবদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস