দেশে সম্রাট, বিদেশে অভিযুক্ত / From Billionaire to Bribery Accused
বর্তমান ভারতীয় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের এক অবিচ্ছেদ্য সম্রাটের নাম গৌতম আদানি। দেশীয় রাজনীতির সাথে জুড়ে থাকার সাথে সাথে মিডিয়া কন্ট্রোল এবং তার নেটওয়ার্কের গভীরতা প্রায়শই তাকে দেশের অর্থনৈতিক “উন্নয়নের প্রতীক” হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযোগে উঠে আসা তথ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, উন্নয়নের এই রূপকথার আড়ালেও থাকতে পারে দুর্নীতির গভীর কুয়াশা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদানি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি গুরুতর। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার অভিযোগ শুধু আদানি গ্রুপের নয়, বরং ভারতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশের স্বচ্ছতার ওপরও এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেয়।
আদানির উত্থান ও সম্প্রসারণের পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মদতপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার সাম্রাজ্যের বিস্তার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ—সবকিছুই যেন সরকারি অনুমোদনের ছাড়পত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে। এরকম পরিবেশে, মার্কিন অভিযোগের যথার্থতা কতটুকু, তা নিয়ে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও একথা স্পষ্ট যে, আদানি-সংশ্লিষ্ট কোনো বিতর্কে স্বচ্ছ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষের থেকে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা করা যায় না।
আসলে, আদানি সাম্রাজ্য কেবলমাত্র একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি ভারতীয় শাসকের ক্ষমতার এক প্রতীক। দেশীয় ব্যাংকিং সেক্টরের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে গিয়ে সরকার আদানির মতো কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। কিন্তু এই নির্ভরতা কেবল আদানির ব্যক্তিগত ক্ষমতাকে বাড়ায়নি, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানকেও দুর্বল করেছে।
মার্কিন অভিযোগে আদানি গ্রুপের দুর্নীতি প্রকাশ পেলেও এর প্রতিক্রিয়া স্বল্পমেয়াদী। আজ আদানি গ্রুপের শেয়ারের মূল্য পড়লেও কাল আবার সেটি উঠবে। কারণ, ভারতীয় শাসনযন্ত্রের মদতপ্রাপ্ত এই সাম্রাজ্যকে টলানোর মতো শক্তি এখনো খুব কম জনেরই আছে।
প্রশ্ন একটাই: আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ফেরানোর পথ দেখাবে, নাকি শুধুমাত্র ক্ষমতাবানের আরেকটি “অদৃশ্য” সুরক্ষা বলয়ের অংশ হয়ে থাকবে? সময়ই এর সঠিক উত্তর দেবে।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.