ভগবান খুঁজতে মসজিদে? / Faith Misused
ভারত এমন একটি দেশ যেখানে ধর্ম এক অনন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক। এখানে হিন্দু, মুসলিম, জৈন, শিখ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে জীবন যাপন করেছে। হিন্দুরা মন্দিরে যান ভগবানকে খুঁজতে—এটি ভক্তির এক নিঃস্বার্থ রূপ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বিজেপির রাজনীতিতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে ভগবান খুঁজতে মসজিদের নিচে কি আছে, তা দেখতে পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রবণতা একদিকে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অপমান করছে, অন্যদিকে ভারতের বহুজন সংস্কৃতির মূলে আঘাত করছে। প্রশ্ন হলো, এই ধর্মীয় জিগির তুলে কী লাভ?
বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্ক থেকে শুরু করে ‘জ্ঞানবাপী মসজিদ’, ‘মথুরার শাহী ইদগাহ’ ইত্যাদি নিয়ে বিজেপি বারবার মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে হিন্দু ভোটব্যাংকের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বেকারত্ব, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং শিক্ষা সংকটের মতো বাস্তব সমস্যাগুলি থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে বিজেপি বারে বারে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে। ভগবানকে মসজিদের কাঠামোর নীচে খুঁজতে পাঠানোর অর্থ হলো সাধারণ মানুষের কাছে বাস্তব সমস্যাগুলি গৌণ করে তোলা। সেটাই সাড়ম্বরে চলছে।
ভারতীয় সংস্কৃতি উদারতা, সহিষ্ণুতা এবং বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ধর্মীয় স্থাপনাগুলিকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি করা এই সংস্কৃতির মূল আদর্শকে নস্যাৎ করার শামিল। ভগবান যদি সর্বত্র বিরাজমান হন, তবে কেন তাঁকে নতুন করে মসজিদের নিচে খুঁজতে যেতে হবে?
এই ধরনের রাজনীতি সমাজে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলছে। এটি মানুষের মধ্যে ভয়, অসন্তোষ এবং বিদ্বেষের জন্ম দেয়, যা ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলিকে দুর্বল করে। ভারত, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু এই ধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করছে এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উদাহরণ তৈরি করছে।
ধর্মের মূল লক্ষ্য মানুষের নৈতিক উন্নতি এবং জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বিজেপির রাজনীতি ধর্মের এই গভীর তাৎপর্যকে ছোট করে কেবল মন্দির ও মসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে।
ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মেরুকরণ সৃষ্টি করা কোনো দেশ বা সমাজের উন্নতির পথ নয়। ভারতের মতো বহুত্ববাদী দেশে এই ধরনের বিভাজনের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ ভগবানকে খুঁজতে মন্দিরে যায় শান্তি ও আত্মোপলব্ধির জন্য, কিন্তু বিজেপি তাদের এই শান্তির পথকে সংকীর্ণ করে তুলছে।
রাজনৈতিক মুনাফার জন্য ধর্মের ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত। ঈশ্বর মন্দির, মসজিদ, গির্জা কিংবা গুরদুয়ারা—সবখানেই বিরাজমান। বিজেপির এই ধর্মীয় জিগির ভারতের প্রকৃত উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা এবং এর অবসান এখন সময়ের দাবি।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.