হা- হা-কার? / The Hidden ‘Setting’

প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নৈরাজ্য ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসবার পর থেকে রাজ্যজুড়ে একশ্রেণীর সংবাদমাধ্যম ও রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির প্রায় সমস্ত নেতা-বিধায়ক-সাংসদদের মধ্যে হঠাৎই ইদানীং দেখছি বাঙালী ‘হিন্দু’দের প্রতি প্রেম উথলে উঠেছে। তাই এই সুযোগে এনাদেরকে কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।

সারদা -রোজভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারির বেশিরভাগ প্রতারিতই কিন্তু বাঙালী হিন্দু ছিলেন। তারা কেউই বিচার পাননি। উলটে চক্রান্তকারীরা বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়ে নিজের মধ্যে সেটিং করে তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছে। আসল চক্রান্তকারীরা এখন বহাল তবিয়তে জামিন পেয়ে জেলের বাইরে।

রাজ্য সরকারের এসএসসি-টেট চাকরি চুরির কেসেও যে হাজার হাজার যোগ্য ছেলেমেয়েদের চাকরি চুরি গেছে তাদের অধিকাংশই বাঙালী হিন্দু। আর সেই কেসেও মানিক-জীবনকৃষ্ণ-কালীঘাটের কাকু-অর্পিতা বা কুন্তলরা একের পর এক জামিন পেয়ে চলেছে। আর এসবই হচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েক বছর ধরে তদন্ত চলার পর। এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর কোম্পানি লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসএ চাকরি চুরির টাকা ঢুকেছে প্রমাণ পেয়েও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোন এক অজ্ঞাত কারণে কোম্পানির কর্ণধার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জ্জীকে গ্রেপ্তার করছে না। লোকে বলছে সেটিং। তা এই বিজেপি -তৃণমূল সেটিং এর ফলে কি যোগ্য ‘বাঙালী’ ‘হিন্দু’ চাকরিপ্রার্থীরা সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না!

রেশন চুরির কেসেও একই অবস্থা। যাদের রেশন চুরি গেলো তাদের অধিকাংশই বাঙালী হিন্দু। অথচ খাদ্যমন্ত্রী বালুবাবু বাদে বাকি প্রায় সবাই যারা তার ডান হাত-বাম-পা ইত্যাদি ছিলেন সেই বাকিবুর-বিশ্বজিৎ-শঙ্কর আঢ্যরা এই মুহুর্তে জামিনে জেলের বাইরে। বাকিবুর তো বোধহয় দুবাইও যাবে বা অলরেডি চলে গেছে। কাজেই রেশনের চাল না পাওয়া প্রতারিত বাঙালী হিন্দুদের কি এক্ষেত্রেও সুবিচার অধরা থেকে যাবে!

সন্দেশখালির হিন্দু-মা বোনদের সাথেও ঘটে চলেছে একই ধরণের প্রতারণা। তাদের কারও ইজ্জত লুঠ হয়েছে কারও বা হয়নি! তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে ভিডিও চালাচালি, রাজনৈতিক তরজা। কিন্তু এদের প্রায় সবারই ক্ষেত্রে যেটা কমন সত্যি সেটা হলো এদের প্রায় প্রত্যেকেরই পারিবারিক জমি-জমা তৃণমূলী জমি হাঙররা নোনা জল ঢুকিয়ে কেড়ে নিয়ে পরিবারের রোজগেরে পুরুষ মানুষটিকে ঘরছাড়া করে পরিযায়ী শ্রমিক বানিয়ে ভিনরাজ্যে পাঠিয়ে ছেড়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অধীনস্থ তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করলেও সন্দেশখালির হিন্দু বাঙালীরাও আপাতত সুবিচার থেকে কয়েকশো যোজন দূরে। হয়তো বা কোনদিন সকালে উঠে দেখবো শাহজাহানও জামিন পেয়ে গেলো!

আর হ্যাঁ, আর জি কর কান্ডের নির্যাতিতাও কিন্তু বাঙালী ও হিন্দু ছিলেন। অভিযোগ এক্ষেত্রেও আসল কালপ্রিটদের কে আড়াল করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই এর তত্ত্বাবধানে একজন সামান্য সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বলির পাঁঠা বানাবার সব রকম চেষ্টা চলছে। সৌজন্যে সেই বিজেপি ও তৃণমূল সেটিং। মানুষ সেটাই বিশ্বাস করে।

তাই বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য কেঁদে ভাসানো বঙ্গ বিজেপির নেতা মন্ত্রী বিধায়ক সাংসদদের এপার বাংলার উপরে উল্লেখিত বাঙালী হিন্দুদের প্রতি “সেটিং” ঔদাসীন্য ছেড়ে তাদের সুবিচারের দাবীতে রাস্তায় নামাটা জরুরি। নচেৎ বাংলাদেশ ইস্কনের শ্রী শ্রী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে এপার বাংলার “নরেন্দ্র দামোদরদাস” এর অনুচরদের লম্ফঝম্পকে এপার বাংলার বাঙালী হিন্দুরা আদৌ পাত্তা দেবেন বলে মনে হয় না। এমনকি ইতিমধ্যেই বহু মানুষই এটাকে ‘কুমিরের কান্না’ ভাবতে শুরু করেছে।