বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, ভারতে কৃষক: মিডিয়া কি দু’মুখো? / Bangladesh Obsession, Farmers’ Pain Unseen
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতন নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। কিন্তু বঙ্গ মিডিয়ার কাছে প্রশ্ন—দেশের কৃষকদের চোখের জল কি বাংলাদেশে পড়ছে? নাকি দিল্লির মাটিতে? শম্ভু সীমান্তে যখন টিয়ার গ্যাসে কৃষকের কান ফেটে যায়, তখন আপনারা কোথায়? দিল্লির দিকে এগিয়ে যাওয়া কৃষকদের হাঁটার আওয়াজ কি আপনাদের চিল-চিৎকারে চাপা পড়ে গেছে?
প্রথম প্রশ্ন: কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো কি অপরাধ?
বাংলাদেশের খবর প্রচার করছেন, ঠিক আছে। কিন্তু দেশের মাটির খবর কই? ১০১ জন কৃষক যখন দিল্লির দিকে হাঁটছেন, তাদের দাবি কি এতটাই অবান্তর? তারা চায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) নিয়ে আইন হোক। ২০২০-২১ সালের আন্দোলনে নিহত কৃষকদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাক। লখিমপুর খেরির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। এগুলো কি দায়িত্বজ্ঞানহীন দাবি?
অথচ, মিডিয়া এদের প্রশ্ন করার বদলে ব্যস্ত বাংলাদেশের দিকে তাকাতে। কেন? এদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিলে কি রাজ্যের গদি নড়ে যাবে! মিডিয়া কি শুধু সরকারের মুখপত্র? দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কৃষকের লড়াই এড়িয়ে বাংলাদেশে চোখ রেখে সত্যিই কি দেশীয় “জনস্বার্থ” রক্ষা হচ্ছে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন?
কৃষকদের দিকে টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, বার্তা পাঠানো বন্ধ। কৃষক নেতা অনশন করছেন, কেউ আট কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখে একটি শব্দও নেই। তিনি তো “কৃষকবন্ধু”! তবে বন্ধুরা পথে হাঁটছে কেন? বন্ধুডি টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন?
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে যখন নিজের “ভারত মডেল” প্রচার করছেন, তখন কি এই কৃষকদের বঞ্চনা সেই মডেলের অংশ? নাকি সেই মডেলের একমাত্র কাজ “ম্যানেজড মিডিয়া”?
তৃতীয় প্রশ্ন: মিডিয়ার একাংশ কি সরকারের দালাল?
ধরে নিলাম, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার আপনাদের কাছে অত্যন্ত “ট্রেন্ডিং” বিষয়। কিন্তু দেশের কৃষকদের রক্ত ঝরলে সেটাও তো ট্রেন্ডিং হওয়া উচিত, তাই না? কৃষকদের এই লড়াইয়ের গল্প কি আপনার চ্যানেলের “ডিবেট শো”র যোগ্য নয়? নাকি এখানে ট্র্যাজিক মিউজিক যোগ করে নাটকীয়তা বাড়ানো যায় না?
আরেকটা মজার ব্যাপার লক্ষ করুন—যখনই কৃষকরা দিল্লির পথে নামেন, তখনই সীমান্ত বন্ধ, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ। মিডিয়ার ক্যামেরাও বন্ধ। কে এই “অলৌকিক শক্তি” যিনি সব বন্ধ করতে পারেন? মিডিয়া কি এই শক্তির নাম জানে? নাকি জানার পরেও চুপ?
চতুর্থ প্রশ্ন: কৃষকরা মরলেও, তাতে কার লাভ?
২০২০-২১ সালের কৃষক আন্দোলনে ৭০০ জনের বেশি কৃষক মারা গেছেন। তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কি? সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? নাকি গণতন্ত্রের এই স্রোত শুধু ক্ষমতাশালীদের সুবিধা মেটানোর জন্য? মিডিয়া জানার চেষ্টা করেছে সেগুলো?
কৃষকরা দিল্লির দিকে হাঁটছেন। এই হাঁটা সহজ নয়। এটা তাদের অস্তিত্বের লড়াই। আর সেই লড়াইতে মিডিয়া বা সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। তারা শুধু বড় বড় টুইট করবে, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেই।
শেষ প্রশ্ন: ভারত কি এই পথেই এগোবে?
যে ভারত “বিশ্বগুরু” হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেই ভারতের মাটিতে কৃষকেরা টিয়ার গ্যাস খাচ্ছে, তাদের দাবি শুনতে কেউ দাঁড়িয়ে নেই সরকারের তরফে। এই অবস্থায় কি ভারত সত্যিই “আত্মনির্ভর” হতে পারবে? নাকি এভাবেই ক্ষমতাশালীরা ক্ষমতা ধরে রাখবে, আর সাধারণ মানুষ চুপচাপ কাঁদবে?
বাংলাদেশের দিকে তাকানোর সাথে সাথে নিজেদের দেশের দিকেও তাকান। কৃষকেরা হাঁটছে, আর এই হাঁটায় যদি আপনাদের চোখ না খোলে, তবে গণতন্ত্রের চোখও অচিরে বন্ধ হয়ে যাবে। মিডিয়া, আপনাদের দায়িত্ব মানুষকে সঠিক খবর দেওয়া। সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়া। আর সরকার – আপনাদের দায়িত্ব জনগণের দাবি মেটানো। চুপ করে বসে থাকলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। সাম্প্রতিক অতীত দেখলেই বুঝবেন, অযোধ্যাবাসী আপনাদের ক্ষমা করেনি, আগামীকাল ভারতও তা করতে পারে।
ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.