এটা আগে করা হত? / Civic Sense

সাময়িক সমাধান না দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন, তা আমাদের জানা নেই, কিন্তু সূত্র মারফত জানা গেছে, কলকাতা পুলিশের লালবাজার কর্তৃপক্ষ মদ্যপ সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন নির্দেশনার আওতায়, কর্মরত অবস্থায় মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে এমন সিভিক ভলান্টিয়ারদের এবং যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

লালবাজারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পিছনে শুক্রবার রাতের বিটি রোডের ঘটনাটি প্রভাব ফেলেছে কিনা, এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সিঁথি এলাকায় বিটি রোডে একটি কর্মসূচির আয়োজন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ও প্রাক্তনীরা। সেখানে এক সিভিক ভলান্টিয়ার মত্ত অবস্থায় বাইক চালিয়ে তাদের ব্যারিকেডে ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ না করে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট তাকে ছেড়ে দেন। এর পর, আন্দোলনকারীরা ওই সার্জেন্টকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল পর্যন্ত ওই সার্জেন্ট রাস্তায় আটকে রাখা হয়। রাতের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতীর ছাত্রছাত্রীদের বচসা হচ্ছে।

তবে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে দীর্ঘকালীন সমস্যা রয়েছে তা উপেক্ষা করা যায় না। সিভিক ভলান্টিয়ারদের মদ্যপান সংক্রান্ত অভিযোগ বহুদিন ধরে চলছে, কিন্তু কেন এতদিন এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি? কেবলমাত্র নতুন নির্দেশনা প্রবর্তন করা কি প্রকৃত সমস্যার সমাধান করবে?

উল্লেখযোগ্য যে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্রীণ পুলিশ হিসেবে, যখন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কলকাতা মেয়র ছিলেন। তখন কলকাতা পুলিশের সাথে কলকাতা পুরসভার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে কলকাতা পুলিশ এই ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, অথচ মাইনে এবং পোশাকের খরচ বহন করবে কলকাতা পুরসভা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগের আগে নির্বাচিত যুবকদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা হত, যাতে তারা কোনো সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত না থাকে। কিন্তু বিকাশরঞ্জনের মেয়র পদ থেকে সরে যাওয়ার পর, পরবর্তী মেয়র শোভন চ্যাটার্জী বেশ কিছু প্রক্রিয়া সহজলভ্য করে দেন। ফলে, নিয়োগের আগে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই বন্ধ হয়ে যায় এবং এতে থানার বড়বাবুরা নিজেদের সুবিধার জন্য এলাকার অযোগ্য যুবকদের সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর ফলে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকেই সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। এই প্রেক্ষাপটে, যদি প্রশাসন সিভিক ভলান্টিয়ারদের মদ্যপানের বিরুদ্ধে এখন পদক্ষেপ নেন, তবে কেবল একটি সাময়িক সমাধান হতে পারে, পুরোটা নয়।

পাশাপাশি, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মিথ্যে কেস দিয়ে টাকা তোলা এবং চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও ব্যাপকভাবে উঠেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। প্রশাসন কি এসব অভিযোগের তদন্ত আগে করে দেখেছে? সিভিক ভলান্টিয়ারদের অসংযমিতা কেবল মদ্যপানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের অপরাধমূলক আচরণও ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে। সাম্প্রতিক আর জি কর কাণ্ড হোক, বা আনিস হত্যাকাণ্ড, দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিকেই।

অতএব, ৩১ আগস্টের রাতে রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াদের অভিযোগের ভিত্তিতে মদ্যপ সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্যে নতুন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন কেবল একটি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যদি না এটি সঠিকভাবে এবং কার্যকরভাবে সম্পাদিত হয়। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সমস্যার প্রকৃত সমাধান নিশ্চিত করতে হলে, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এবং আচরণের প্রতি গভীর নজরদারি প্রয়োজন। প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র একটি প্রদর্শনী পদক্ষেপ না হয়ে, প্রকৃত সমস্যার সমাধান করবে।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস