এক্সট্রা ‘2ab’ র সন্ধানে বাংলা ভাগ / Extra 2AB

বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কি তবে বিলম্বিত বোধোদয় হলো! আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ হয় নিজেরাই অনুধাবন করতে পেরেছেন অথবা দিল্লির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছ থেকে স্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছেন যে, ভোট এলে যতই ইডি-সিবিআই লাফালাফি দাপাদাপি করুক তৃণমূল জমানার যাবতীয় দুর্নীতির আসল মাথারা অধরাই থেকেই যাবে। মানে শুভেন্দু অধিকারী ও তার স্যাঙাৎ’রা যতই মিডিয়ার বুম-ক্যামেরার সামনে ফুটেজ খেতে ‘পিসি-ভাইপো জেলের ভাত খাবে’ বলে হুঙ্কার ছাড়ুক, হাত-পা ছুঁড়ুক, কালীঘাটের কাকুই সঠিক! হাজারো সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলেও ইডি-সিবিআই কখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করবে না এবং এসবই হবে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব মানে মোদি-শাহ জুটির প্রত্যক্ষ মদতে বা প্রশ্রয়ে। যদিও নির্দিষ্ট সময় অন্তর চক্ষুলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে বা রাজ্যে কোন নির্বাচন এলে ‘হয় তৃণমূল নয় বিজেপি’ বাইনারি বজায় রাখতে পার্থ-কেষ্ট-বালুদের মত কাউকে কাউকে বলির পাঁঠা করা হবে, ব্যস ঐ পর্যন্তই। আর তাই স্বয়ং রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে সম্প্রতি বলতে শোনা গেছে এভাবে ইডি-সিবিআই দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে তৃণমূলকে হারানো যাবে না। সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। অর্থ্যাৎ বার্তা স্পষ্ট, মমতা বা অভিষেক অদূর ভবিষ্যতে গ্রেপ্তারির কোন সম্ভাবনা নেই। আর যত দিন যাবে আসল মাথারা ধরা না পড়ায় ইডি-সিবিআই দিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাইনারি তৈরির অপচেষ্টাটাও ক্রমশ ‘তামাদি’ হয়ে পড়বে।

আমাদের বিশ্বাস কয়লা পাচার, গরু পাচার বা নিয়োগ দুর্নীতির মত তদন্তেও চিটফান্ড কেলেঙ্কারি বা নারদ ঘুস কান্ডের তদন্তের মতই আগামী দিনে ঢিলেমি আসবে। ইতিমধ্যেই ইডি-সিবিআই মোটামুটি গায়েব হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এ যেন স্কুল কলেজে যেমন গরমের ছুটি পরে ঠিক তেমনই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কলকাতা অফিসে বর্ষার ছুটি পড়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস পূজোর পরে নিয়োগ দুর্নীতি বা গরু-কয়লা পাচারের তদন্ত নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্যই আর শোনা যাবে না, ঠিক এখন যেমন সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি বা নারদ ঘুসকাণ্ড নিয়ে তেমন কোন কথাবার্তা শোনা যায় না। এমনকি চিটফান্ড কাণ্ডের জেলখাটা খলনায়ক মদন-সুদীপ-কুনাল ঘোষ’দের মত পার্থ-কেষ্ট-বালু’রাও জেল থেকে বেরিয়ে এসে আমার আপনার নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালে অবাক হবেন না। মানে বামেদের কয়েনেজ করা ‘বিজেমূল’ আর ‘সেটিং’ শব্দবন্ধ দুটি যে ঘোর বাস্তব তা প্রমাণ হয়ে যাবে এবং ‘ডিসেম্বর ধামাকা’ কাঁথির অধিকারীবাবুদের ছেঁড়া কাঁথার স্বপ্ন হয়েই রয়ে যাবে।

কিন্তু তাহলে ‘হয় তৃণমূল নয় বিজেপি’ বাইনারি’টার কি হবে!
না! চিন্তার কোন কারণ নেই, ওটা থাকছে!

আর সেজন্যই বঙ্গ বিজেপি মুখ বাঁচাতে বাজারে এনেছে নতুন ইস্যু- বাংলা ভাগ। আমাদের বুঝতে হবে বাংলা ভাগ এমনই এক আবেগতারিত বিষয় যার তলায় তৃণমূলের দেদার দুর্নীতি ও লুঠপাট এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সেই দুর্নীতির সাথে যুক্ত প্রকৃত অপরাধী বা আসল মাথাদের ধরতে না চাওয়ার মত ঘটনাগুলো অনায়াসে চাপা পড়ে যাবে।

তাছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে ২০১৮ র পর থেকে বারংবার ভোটে প্রমাণিত হয়ে গেছে বঙ্গ বিজেপির পক্ষে মমতা ও অভিষেককে জেলের বাইরে রেখে তৃণমূলকে হারিয়ে বাংলার মসনদ দখল করা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু তারমধ্যেও উত্তরবঙ্গে গত ৭-৮ বছরে বিজেপির একটা শক্তপোক্ত জমি ও ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। দলের সিংহভাগ সাংসদ ও বিধায়কই উত্তরবঙ্গ থেকে নির্বাচিত। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের নির্বাচিত সাংসদ ও বিধায়কদের সংখ্যাগরিষ্ঠই বিজেপির। কাজেই উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়নকে সামনে রেখে স্থানীয় ভাবাবেগকে উস্কে নিজেদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তেলেঙ্গানার ধাঁচে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাকে দু-টুকরো করে মুর্শিদাবাদের ওপরে বাংলার উত্তরখন্ডকে আলাদা রাজ্য বানিয়ে তার ক্ষমতায় তারা জাঁকিয়ে বসতেই পারে। যদিও তা এখুনি সম্ভব নয়।

আমরা জানি মোদী শাহের বিজেপির রাজনীতিই হলো যে কোন উপায়ে ‘গদি’ দখল করা, তা সে ঘোঁড়া কেনা বেচা করেই হোক অথবা ‘দলদাস’ রাজ্যপালদেরকে দিয়ে ক্ষমতার ‘অপ’ব্যবহার করেই হোক, কোন কিছুতেই তারা পিছপা নয়। কাজেই সেই বিজেপি ক্ষমতায় বসতে কালনেমির লঙ্কাভাগের মত বাংলাভাগ করতে উদ্যত হলে আশ্চর্য্যের কিছু নেই। বাংলা দখল নাই বা হলো, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে উত্তর বাংলার মসনদে তো বসা যাবে! আর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কিন্তু উত্তরবঙ্গের সাংসদ। আর এই সুকান্তবাবুরা যা বলছেন এবং করছেন তার মর্মার্থ হলো ইডি-সিবিআই দিয়ে চোর-চিটিংবাজ তৃণমূল নেতানেত্রীদের গ্রেপ্তার করিয়ে বাংলার মসনদে বসা যাবে না, বাংলাকে দু-টুকরো বা তিন টুকরো করে বিজেপিকে বাংলার দখল নিতে হবে। মানে সোজা কথায় বঙ্গ বিজেপির একটা বড় অংশ এই মুহুর্তে শ্যামাপ্রসাদের বাংলা কে টুকরো টুকরো করবার মধ্যে মোদি কথিত সেই এক্সট্রা ‘2ab’ খুঁজছে। এটাকে বিজেপির বোধোদয় বলবো নাকি বাঙালীর ধ্বসা রোগ জানি না। কিন্তু এটাই বঙ্গ রাজনীতির এই মুহুর্তের বাস্তব পরিস্থিতি।

কাজেই বাংলা জনতাকে এবার আরও সতর্ক ও সচেতনতার সাথে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে, কারণ চাকরি চুরি, কয়লা চুরি, গরু পাচার, কাটমানি বা দেদার তোলাবাজির মত আগলখোলা তৃণমূলী দুর্নীতিগুলো বা শিল্পায়নের অভাব, রুটি-রুজির হাহাকার ইত্যাদি আর শুধু ভোটের ইস্যু নয়, তারসাথে বাংলা ভাগের মত স্পর্শকাতর ইস্যু এখন তাদের প্লেটে যা আগামী দিনে মেইন কোর্স হয়ে উঠতে চলেছে। কাজেই আজকের বাঙালীর প্রতিটা ভোট আগামীদিনে বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাস এবং ভূগোলের দিকনির্দেশ করবে।

আমাদের নজরে থাকবে আগামীদিনে বাংলার রাজনীতি কোনদিকে যায়।

আপনারা ভালো থাকুন এবং সঙ্গে থাকুন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস