গৃহহারা অর্জুন? / Coach Samaresh
সমরেশ জঙ্গ, তিনি ২০২৪ অলিম্পিকের মঞ্চে ভারতের হয়ে ব্রোঞ্জ জেতা মনু ভাকরের কোচ।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের গর্বিত মুখ, অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃতি খেলোয়াড় এবং বর্তমানে দেশের এয়ার রাইফেল কোচ সমরেশ জঙ্গ, এখন একটি নতুন রূপে পরিচিতি পাচ্ছেন—অলিম্পিকের মঞ্চে ক্রীড়া মিশন ছেড়ে, বাড়ি ফিরে আসার মিশনে, সৌজন্য আমাদের দেশ, আমাদের দেশের বিচার। কেননা, তাঁর বাড়ি ভাঙার জন্য তাকে একটি স্পেশাল ৪৮ ঘণ্টার নোটিস দেওয়া হয়েছে। আমরা কি ভাবতে পারি, এভাবে ৪৮ ঘণ্টায় একটি বাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব—এটি নিশ্চয়ই নতুন ভারতের চমক! হয়তো এটি আমাদের নতুন ‘ক্লিক-এন্ড-ডেমোলিশ’ সার্ভিস।
আমাদের অন্যতম সেরা ক্রীড়া কোচ, যিনি দেশের জন্য বড় গর্বের প্রতীক, কিন্তু তিনি এখন কেবল অলিম্পিক নয়, নিজের বসতবাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত। গত পঁচাত্তর বছর ধরে ওনার পরিবার ওই বাড়িতে বসবাস করছেন, তারপরেও এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত যেন একেবারে ‘অবিশ্বাস্য’— তথা বিকশিত ভারতের নতুন সংজ্ঞা!
এখন, প্রশ্ন জাগে, সরকার বা দেশীয় বিচারব্যবস্থা কি এই নতুন ভারত ‘ভাঙার ভিত্তি’ পরিকল্পনার জন্য একটি নতুন ক্যাম্পেইন চালু করেছে? ৪৮ ঘণ্টায় বাড়ি ভাঙা কিভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের অংশ হতে পারে? হয়তো, তাদের ‘সাহসিকতা’ ও ‘বিশ্বনাথ’ ক্ষমতা প্রমাণের জন্যই এত তাড়াহুড়ো।
মনু ভাকর, যিনি সমরেশ জঙ্গের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন এবং ২৫ মিটারের ইভেন্টেও কোয়ালিফাই করেছেন, এখন একটি অস্থিতিশীল অবস্থায় পড়েছেন। কোচের অনুপস্থিতি তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মান ‘বুলডোজার’ হয়ে গুড়িয়ে দিতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে:
জমি সংক্রান্ত সমস্যা:
সমরেশ জঙ্গের পরিবারের বাড়ি যদি কোনো জমি বিতর্কের কারণে ভাঙা হয়, তাহলে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিস কতটা যুক্তিসঙ্গত? দেশের দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের জন্য এত কম সময়ের মধ্যে তাদের বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত কতটা মানবিক এবং যুক্তিযুক্ত?
বিকল্প ব্যবস্থা:
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি? সমরেশ জঙ্গের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া কোচের জন্য স্থানান্তরের ব্যবস্থার পাশাপাশি তার পরিবারের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে কি পরিকল্পনা করা হয়েছে?
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি:
কোচ সমরেশ জঙ্গের অনুপস্থিতি ভারতের ক্রীড়া দলের প্রস্তুতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে? বিশেষত, যখন আমাদের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মান রক্ষা করতে প্রস্তুত, তখন এই ধরনের পরিস্থিতির প্রতিকার হিসেবে সরকারের কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
আইন ও ন্যায়বিচার:
জমির মালিকানা এবং বিতর্কের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কী হবে? শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কী ধরনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে যাতে দেশের খেলোয়াড় এবং তাদের প্রশিক্ষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে?
এই প্রশ্নগুলির সঠিক এবং স্বচ্ছ উত্তর প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র সমরেশ জঙ্গের পরিবারের জন্য নয়, বরং দেশের বহু সাধারণ মানুষের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এই পরিস্থিতির দ্রুত ও সঠিক সমাধান প্রদান করা এবং নিশ্চিত করা যে, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও তার সাথে মানবিকতা বজায় থাকে। হয়ত অলিম্পিকে মনু ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ার পর, জনমানসে হৈ চৈ হওয়ার পর, “কোনো এক অলৌকিক সরকারী সিদ্ধান্তে” সমরেশের বাড়ি রক্ষা পেতে পারে, কিন্তু দেশের কোনায় কোনায় ছাড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষরা? তারা তো কেউ ব্রোঞ্জ জেতেননি, তারা অর্জুন পুরস্কারও পাননি, তাদের সাথে এমনটা হলে কিভাবে রক্ষা করবেন তাদের বসতবাড়ি?
সব শেষে একটাই কথা, দেশটা কার? দেশের মানুষের নাকি বুলডোজার হ্যাপি সরকার, আমলা, বিচারকদের? পুছতা হে ভারত।
ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.