বাংলা ও বাঙালীর গভীর ‘অসুখ’ / One-Woman Show

পশ্চিমবঙ্গের এখন গভীর অসুখ। অসুখের নামটা এখনও আমরা সেভাবে ঠিক দিয়ে উঠতে পারি নি। কিন্তু অসুখটা মনে হয় ধরতে পেরেছি।

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা অসুখটার কথা আমরা সবাই শুনেছি বা জানি।

এটা কিভাবে সনাক্ত করা হয়?

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষা করে দেখা হয় রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বা হিমোগ্লবিনের পরিমাণ ঠিকঠাক আছে কি না। এগুলো কমে গেলে অ্যানিমিয়া হয়।

আমাদের রাজ্যের অসুখটাও অনেকটা এই অ্যানিমিয়া অসুখের মত। এটার নাম ডেমোক্রেটিক ডেফিজিট বা গণতান্ত্রিক স্বল্পতা।

এটা কিভাবে সনাক্ত করা হয়?

গণতন্ত্রের যখন উপযুক্ত বিরোধী দলের অভাব বা স্বল্পতা দেখা দেয়। আর ঠিক এটাই ঘটেছে আমাদের রাজ্যে। তবে আমাদের সমস্যাটা খুবই জটিল। কারণ এক্ষেত্রে ‘স্বল্পতা’ শব্দটা ঠিক নয়। সত্যিটা হলো আমাদের রাজ্যে এই মুহুর্তে কোন বিরোধী দল নেই। নেই কোন উপযুক্ত নেতা-নেত্রীও। ফলে অ্যানিমিয়া হলে যেমন রোগীর নিজেকে দুর্বল বলে মনে হয়, ক্লান্তি আসে বা ঘুম পায়, আমাদের রাজ্যটাও দেখুন এক কথায় জাস্ট শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাজ্যবাসী এই তৃণমূলী অনাচার-অত্যাচারকেই অদৃষ্ট ভবিতব্য বলে মেনে নিতে শুরু করেছে। হ্যাঁ এটাই সত্যি।

এই মুহুর্তে খাতায় কলমে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।

বিধানসভায় এই দলের মুখ শুভেন্দু অধিকারী। ইনি হলেন বঙ্গ বিজেপির সবথেকে বেশি আলোচিত মুখ। বছর পাঁচেক আগেও এই শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন বর্তমান শাসকের অগ্রগণ্য নেতা। সবাই জানে যে তৃণমুলে থাকাকালীন ঐ দলের এদ্দিন ধরে করে আসা যাবতীয় দুর্নীতির সাথে তিনি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি, নারদ স্টিং কেলেঙ্কারি, নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার বা কয়লা পাচার…. সব ক্ষেত্রেই তদন্তের খাতিরে একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই অধুনা প্রয়াত মুকুল রায়ের মতই আর পাঁচজন জড়িত তৃণমূল নেতার সাথে যার নাম সামনে উঠে আসবে বা আসে তিনি হলেন এই শুভেন্দু অধিকারী। তাই কেউ বলেন শুভেন্দু অধিকারী ইডি-সিবিআই তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে দল বদলে বিজেপিতে গেছেন। কেউ আবার বলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নিজেকে ও তার দুর্নীতির সাংগপাংগদের তদন্তের হাত থেকে বাঁচাতে মুকুল রায়ের মতই শুভেন্দুকেও বিজেপিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন যাতে বিজেপি হাইকম্যান্ড বাধ্য হন এই সমস্ত দুর্নীতির তদন্তে রাশ টেনে ধামাচাপা দিতে। মানে সোজা কথায় শুভেন্দু অধিকারী হলেন বিজেপিতে মমতা ব্যানার্জ্জীর পাঠানো ট্রজার্ন হর্স।

অবশ্য এগুলো ছাড়াও শুভেন্দু অধিকারীর দল বদলের আরও একটা কারণ বাতাসে ঘুরপাক খায়। সেটা হলো লুঠের মালের ভাগাভাগি নিয়ে কাঁথি ও কালীঘাটের দ্বন্দ্ব। দলের দু-নম্বর চেয়ারটা নিয়ে কাঁথির মেজোখোকা ও কালীঘাটের ভাইপোর মধ্যে দড়ি টানাটানি। কিন্তু কারণ এরমধ্যে যেটাই হোক, তা টিম শুভেন্দু বা বাংলার বিজেপির পক্ষে যে মোটেই সুখকর নয় তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। এবার আসা যাক বঙ্গ বিজেপির দ্বিতীয় পরিচিত মুখে। তিনি হলেন সুকান্ত মজুমদার। সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া এই বঙ্গ বিজেপির সভাপতির মূল বা শিকড়ও সেই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ইনি ছিলেন শাসক তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের উত্তরবঙ্গের নেতা। তবে সেখানে খুব একটা পাত্তা পেতেন না। আর এরাজ্যে বিজেপির তিন নম্বর ও সর্বশেষ মুখ হলেন বঙ্গ বিজেপির ইতিহাসে সবথেকে সফল রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক এই বিজেপি নেতা ইদানিং যেভাবে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধায়কে সততার দরাজ শংসাপত্র বিলি করছেন তাতে মনে হচ্ছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা ‘সততার প্রতীক’ ব্যানারগুলো লজ্জায় ঘরে ঢুকিয়ে ফেললেও এবার মাননীয়ার ছবি সমন্বিত সেই ব্যানারগুলো বিজেপির সদর দপ্তর থেকে বের হলো বলে! সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির তরফে একটি চতুর্থ মুখকে রাজ্য সভাপতি বানিয়ে মিডিয়াকে দিয়ে গ্যাস বলুনের মত গ্যাস খাইয়ে খাড়া করবার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তিনি আপাতত বঙ্গ রাজনীতিতে অর্বাচীন। উনি সাম্প্রতিক অতীতে সেভাবে রাস্তায় নেমে শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলন করেছেন বলে অতি বড় বিজেপি ভক্তও দাবি করবেন না। বরঞ্চ বলা যায়, বিগত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় একটি মহিলাঘটিত কেচ্ছাতে ফেঁসে যাওয়ার জন্য এবং একদা তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং এর কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় ‘খিস্তি’ খাওয়ার কারণে বঙ্গ জনমানসে তিনি ভেসে ছিলেন। কাজেই এমন একদল নেতাদের দিয়ে বানানো প্রধান বিরোধী দলকে যে তৃণমূল বা মমতা ব্যানার্জ্জী ল্যাজে খেলাবে ও পায়ে ঠেলবে তা বলাই বাহুল্য। এদের পক্ষে যে মমতা ব্যানার্জ্জীকে হারানো সম্ভব না এটা বাংলার একটা বাচ্চা ছেলেও বোঝে। উলটে কেন্দ্রীয় এজেন্সির একের পর এক তদন্তে দুর্নীতিতে জড়িত শাসকদলের আসল রাঘববোয়ালদের একে একে ছাড় পেয়ে যাওয়া এবং মমতা ব্যান্যার্জ্জীর পরিবারের বিরুদ্ধে গাদাগাদা অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্বেও একজনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিজেপি -তৃণমূলের মধ্যেকার “সেটিং” তত্ত্ব জনমানসে ট্র্যাকশন পেতে শুরু করেছে। তারমধ্যেও মাঝেমধ্যে হিন্দু-মুসলিম ন্যারেটিভ সেট করে, সাম্প্রদায়িক তাস খেলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে এবং মোদী -শাহরা বঙ্গ সফরে এলে, বঙ্গ বিজেপিকে কিছুটা উজ্জীবিত দেখায়। কিন্তু সেগুলো যে নেহাতই তাৎক্ষণিক উন্মাদনা তা বারংবার ভোটবাক্সে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি বিজেপি সংখ্যা গুরু হিন্দুদের ভোটও যে ৫০% এর বেশি পায় না তাও বহুবার প্রমাণিত। আর এভাবেই যখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলটাই জনমানসে ‘রুল্ড আউট’ হয়ে যায় তখন গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে বৈকি!

কিন্তু এরাজ্যে বিজেপি ছাড়াও আরও একটা বিরোধী রাজনৈতিক দল আছে যারা একদা টানা ৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এখনও তাদের ডাকে ব্রিগেড ভরে যায়। কিন্তু ভোটবাক্স ভরে না। তাই তাদের সমর্থকরা হতোদ্যম। এই সমর্থকদের অনেকেই দিনরাত এক করে ভেবে চলেছেন কিভাবে দলটাকে টেনে তোলা যায়। কিভাবে ‘শুন্য’র গেড়ো কাটানো যায়। কিন্তু দলের নেতারা নির্বিকার। মাঝে শোনা গেছিল এদের কে এক ‘ক্যাপ্টেন’ আছে। আমরা তাকে নিয়ে প্রতিবেদনও করেছি। তাঁর অগাধ জনপ্রিয়তা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। সম্প্রতি কালীগঞ্জে মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে শাসক মুখপাত্র কে ‘কু-কথা’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাও সে জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি। কিন্তু জনপ্রিয়তা আর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এক জিনিষ নয়। আর সাম্প্রতিক অতীতে ‘টিম মিনাক্ষী’ বা ‘বঙ্গ সিপিআই(এম)’, এদেরকে যে নামেই ডাকি না কেন, তারা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে এমন দাবী অতি কট্টর সিপিআই(এম) সমর্থকরাও করবেন না। বিজেপির যেমন হিন্দু মুসলিম উত্তেজনা ও সাম্প্রদায়িকতা হলো রাজনৈতিক পুঁজি, বঙ্গ সিপিআই(এম) এরও এক ও একমাত্র পুঁজি হলো রুটি-রুজি। এরা নাকি খালি খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে, তাদের হয়ে লড়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি যখন রাজ্যে ২৬০০০ সরকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায় তখন রাজনীতি-অরাজনীতির দোলাচলে এরা দোল খায়। ৩৪ বছরের বাম সরকারই ‘ডিএ’ কে সরকারি কর্মচারীবর্গের অধিকার হিসাবে আইনি মান্যতা দিলেও সেভাবে বকেয়া ডিএ আদায়ের আন্দোলনেও এরা ঝান্ডা হাতে রাস্তায় নামে না। সেখানেও অরাজনৈতিক মঞ্চের দাপাদাপি। বছরে মাঝেমধ্যে কিছু লোক দেখানো কর্মসূচি, ডেপুটেশন দেওয়া এবং একটা ব্রিগেড, এর বাইরে এদেরকে চট করে খুঁজে পাওয়া যায় না। একই অবস্থা হলো যখন আমরা জানলাম এই রাজ্যের বাংলাভাষী প্রান্তিক মানুষ কাজের খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিনরাজ্যে গিয়ে শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলবার ‘অপরাধে’ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি তকমা পাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের হাতে হেনস্থার স্বীকার হতে হচ্ছে। এটাও তো মানুষের রটি-রুজির লড়াই। জীবন-জীবিকার প্রশ্ন। কোথায় রাজপথে লাল পতাকার গর্জন! কোথায় ক্যাপ্টেন! দেখে মনে হচ্ছে রুটি-রুজির সাথে বাংলা ভাষা ও বাঙালীর অস্মিতা মিশে যেতেই এরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। কিংকর্তব্যমিমূঢ় অবস্থা। অনেকটা পরীক্ষায় সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র এসে গেলে যেমন অপ্রস্তুত হয়ে যায় লোকে, সিপিআই(এম)র অবস্থা এই মুহুর্তে অনেকটা সেরকম লাগছে। মানুষ চাইছে এই ইস্যুতে রাস্তায় নামতে। বামেরা ধরতে পারছে না। দুদিন আগে সন্ধ্যের পর যাদবপুরে নমো নমো করে একটা ‘নাম কা ওয়াস্তে’ মিছিল করেই এই ইস্যুতে আপাতত ইতি টেনে দিয়েছে। সেই নজরকাড়া আন্দোলন-রাজপথে চিৎকার কোথায়? অথচ এই ইস্যুতে বামেরা রাস্তায় নেমে মানুষের ভিড়কে নিজেদের দিকে টেনে তাদের চিরকালীন রাজনৈতিক শত্রু সাম্প্রদায়িক বিজেপি -আরএসএস কে জনবিচ্ছিন্ন করবার একটা চেষ্টা করতেই পারতো…. কিন্তু কোথায় কি…. আমরা সেই চেষ্টাটাই দেখতে পাচ্ছি না। আর সেই ফাঁকে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতপরশু বৃষ্টির মধ্যে জনপ্লাবন নিয়ে রাস্তায় নেমে পরিযায়ী শ্রমিকের রুটি-রুজিতে ‘জয়-বাংলা’ মিশিয়ে বাংলা ও বাঙ্গালীর আবেগ উস্কে দিয়ে এই ইস্যুতে সমস্ত লাইম লাইট নিজের দিকে টেনে নিলেন।

আর তাই এরপরে গতকাল সন্ধ্যেবেলা সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের রাজনৈতিক অবিমৃশ্যকারি মন্তব্য শুনে আর আমরা অবাক হইনি। তিনি প্রশ্ন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন রাস্তায় মিছিল করছেন ? কেন বিধানসভায় রেজিলিউশন পাশ করছেন না ?… সেলিম সাহেবকে শুধু বলতে চাই, হ্যালো কমরেড, আপনারা সব ইস্যুতে আন্দোলনের নামে সরকার –কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশান দিয়ে দায় সারতে পারেন, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের মত এতটা রাজনৈতিক ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন নন যে বিধানসভায় একটা রেজিলিউশন পাশ করে সেটা ভিন রাজ্যের সরকারগুলোকে বাইপোস্ট পাঠিয়ে দিয়ে দায় সেরে ফেলবেন। তিনি জানেন ওনাকে বাংলার মানুষের ভোটে জিতে সরকারে আসতে হবে। কাজেই রেজিলিউশন পাশ করবার মত ‘ইন্ডোর’ ‘ক্লেরিক্যাল’ কাজ ওনার ধাতে সয় না। উনি জানেন কলকাতার রাজপথে জনপ্লাবন নিয়ে প্রিন্ট ও টেলি মিডিয়ার বুম ক্যামেরা সমেত হাটতে হবে । তবে মানুষ জানতে পারবে, তবে আসবে ভোট। আপনি বলতে পারেন এটা ‘লোকদেখানো’। কিন্তু সেটাও আপনাকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বললে হবে না, রাস্তায় নেমে পেছনে জনপ্লাবন নিয়ে প্রচার মাধ্যমের সামনে বলতে হবে। একবার বললে যদি যথাযথ প্রচার না হয়, তাহলে ফের মিছিলের কর্মসূচি নিয়ে মানুষের ভিড় থেকে দাঁড়িয়ে আবার বলতে হবে। এটাই বিরোধীদলের কাজ। আর মনে রাখবেন মাননীয়ার ম্যাজিকটা এখানেই…. উনি ‘লোকদেখানো’ কাজটাই ‘লোকদেখিয়ে’ সর্বসমক্ষে করেন আর জনমানস আপনাদেরকে রাস্তায় খুঁজে না পেয়ে তাতেই আস্বস্ত হয়।

অথচ তলিয়ে ভেবে দেখা যাবে এই যে লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে কাজ না পেয়ে রাজ্য ছেড়ে কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, এটা গোটাটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারেরই ব্যর্থতা। শুধু তাই নয়, সারের কালো বাজারিতে অতিষ্ট হয়ে আর ফসলের দাম না পেতে পেতে বাংলার কৃষিজীবী মানুষ আজ ক্রমশ চাষবাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারওপর সমবায় ব্যবস্থা লাটে উঠে যাওয়ায় সময়মত কৃষি ঋণ না পেয়ে মহাজন ও মাইক্রো ফিন্যান্সের খপ্পরে পড়ে এক বিরাট অংশের কৃষক আজ জমি-জমা হারিয়ে ক্ষেত মজুরে পরিণত হয়েছে। সেই ক্ষেত মজুরদের একটা বড় অংশ আজ চাষবাসের কাজ করতে পাড়ি দিচ্ছে ভিনরাজ্যে, কারণ ভিনরাজ্যে মজুরি বেশি। এনিয়ে আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের একের পর এক প্রতিবেদন আছে। আপনি জানলে অবাক হবেন, বর্ধমান জেলাকে আগে বলা হতো ধানের গোলা; আজ সেই বর্ধমান জেলার ক্ষেতমজুররা পরিযায়ী কৃষক হয়ে ধান চাষ করতে যায় অন্ধ্র বা তেলেঙ্গানায়, যা ২০১১ সালের আগে ভাবাই যেত না। মানে শুধু পরিযায়ী শ্রমিক নয়, পরিবর্তনের বাংলায় আজ ‘পরিযায়ী কৃষক’ও ঘোর বাস্তব এবং এর মূলে রয়েছে বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নেতা -মন্ত্রীদের কৃষি ও সমবায় ব্যবস্থাকে ঘিরে চালিয়ে যাওয়া সীমাহীন দুর্নীতি ও কালোবাজারি। আর এই যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষী মানুষের প্রতি বিদ্বেষের চাষ করছে বিজেপি ও আরএসএস, তার মূলেও রয়েছে একাংশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে মোটা টাকার বিনিময়ে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বা আধার জুটিয়ে ফেলা। কিন্তু এসবই চাপা পড়ে যায় বিরোধীদলগুলোর অপদার্থতার কারণে। আর রাস্তায় নেমে সারা জাগিয়ে যাবতীয় প্রচারের আলো শুষে নেন মমতা স্বয়ং নিজে। আর এভাবেই মমতা নিজেকে এই মুহুর্তে সুকৌশলে বিজেপি-আরএসএস ইকো সিস্টেমের বিরুদ্ধে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙ্গালীর ‘মসিহা’তে পরিণত করছেন। অথচ এই বাংলার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁর দলের স্বৈরাচারী শাসনে অতিষ্ঠ। ‘মিমবাজ’ বাম-রাম বাহিনীকে বলতে চাই রাঁধুনি ঠিকঠাক হলে সয়াবিনকেও মাংস বলে মনে হয়। এঁচোড় খেয়েও মনে হবে পাঁঠার মাংস। মমতা হলেন সেই লেভেলের রাঁধুনি। আর আপনাদের ‘হিন্দু ব্লু আইড বয়’ বা ‘ক্যাপ্টেন’রা রান্না তো দূর অস্ত, উনুনে আগুন জ্বালাবার দেশলাই কাঠিটাও এখনও খুঁজে পাননি।

সত্যি বলতে কি, আজ রাইজ অফ ভয়েসেস ফের একবার বলতে বাধ্য হচ্ছে, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বৈরাচার নয় বা পক্ষপাতদুষ্ট বঙ্গ মিডিয়া কর্তৃক শাসকের নির্লজ্জ পদলেহন নয়, বিরোধীদলের প্রথমসারির নেতাদের সার্বিক নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতাও পশ্চিমবঙ্গের এই অধঃপতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। বিশ্বাস করুন বা না করুন, আসল সত্যিটা হলো এইসব ‘অধিকারী’ বা ‘ক্যাপ্টেন’ বাহিনী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পলিটিক্যালি দুধের শিশু! আর তাই বাংলার এই অসুখ সহজে সারবে না। অসুখটা চলবে। সৌজন্যে সেটিংবাজ বহুমুখে বিভক্ত মুরলীধর সেন লেন ও অপদার্থ আলিমুদ্দিন স্ট্রীট।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস