ষড়যন্ত্রীমশাই / Beyond Promises
পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি প্রতিবছরই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। গতকাল পুরশুড়ায় বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “সরকার আনুন, কথা দিচ্ছি ২৬ সাল থেকে বন্যা বন্ধ করব।” এই প্রতিশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি হাততালি কুড়ালেও, এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন এই ধরনের প্রতিশ্রুতি এতদিনে বাস্তবে রূপান্তরিত হয়নি, সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
শুভেন্দু অধিকারী ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজ্যের সেচ মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে তিনি কি বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? যদি না নিয়ে থাকেন, তাহলে সেই ব্যর্থতা কি কেবল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সরকারের দায়িত্বে থাকায় হয়েছিল, নাকি আরও গভীর কোনো কাঠামোগত সমস্যা ছিল?
তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকেও সময়ে সময়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন সময়ে বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, বাস্তবে জনগণের দুর্ভোগ কি কমেছে? প্রতিবারই বন্যার পর নেতারা আসেন, আশ্বাস দেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যার সমাধান যেন অধরাই থেকে যায়। যেমন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, গত ৬৫ বছর ধরে প্রতিশ্রুতির বন্যায় ঘাটাল অনবরত ভেসেই চলেছে। নেতা-অভিনেতা আসেন, মুখ্যমন্ত্রী আসেন, প্রতিশ্রুতি দেন এবং রাজনৈতিক ট্র্যাডিশন মাফিক প্রতিশ্রুতি পালন করতে ভুলেও যান।
এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা আজ বিরোধী শিবিরে দাঁড়িয়ে বন্যা প্রতিরোধের নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে তাঁরাও যখন তৃণমূলের সেচ মন্ত্রী ছিলেন, তখন কি এমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলেন? সেই সময়ের ব্যর্থতাকে আজকের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে দেখা যায় কি? এই প্রশ্নগুলো সাধারন নিয়মেই ওঠা প্রয়োজন।
বিপরীতে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও একই ধরনের দায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। বন্যা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব রাজ্যের জনগণের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষিতে মালদহ মুর্শিদাবাদের গঙ্গা ভাঙনকে ভুলে গেলে চলবে না। সেখানেও পরিস্থিতি ভয়াবহ।একদিকে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন যে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না, অন্যদিকে সরকার বলছে যে কেন্দ্রীয় সহযোগিতার অভাবে কাজ এগোচ্ছে না। কোনটা ঠিক? কোনটা বেঠিক? সেই প্রশ্ন উঠবেই। না কি ঠিক বেঠিকের ধাঁধাতে ধাঁধিয়ে দিয়ে রাজ্যপাট বজায় রাখাই কি রাজনীতির কারবারিদের উদ্দেশ্য? যদি তাই হয়, তাহলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মাথায় সাফল্যের পালক ওঠা অমূলক নয়।
আসলে, এই সমস্যার মূল কারণ হলো অন্য কিছু। প্রকৃতপক্ষে ফি বছর বন্যার কারন দীর্ঘমেয়াদী সেচ ব্যবস্থাপনা, নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, এবং বন্যা প্রতিরোধে একটি সমন্বিত ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাব। রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়েরই সমন্বয়ে কাজ করা দরকার যাতে সাধারণ মানুষ বারবার বন্যার কবলে পড়ে না যায়।
জনগণের আশা ও হতাশা উভয়ই বেড়ে চলেছে। প্রতিশ্রুতি শোনা সহজ, কিন্তু বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব সাধারণ মানুষের জীবনে বন্যার যন্ত্রণা অব্যাহত রাখছে। সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ না করে বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করুক এবং বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিক। জনস্বার্থে প্রশ্ন তুলতে হবে—কখন এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে?
ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস