উৎসবে না ফিরলে কি করবেন? / Dance of Denial

মুখ্যমন্ত্রী দুদিন আগে রাজ্যের প্রতিবাদী জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, “উৎসবে ফিরুন।” আহা, কি মধুর আহ্বান! বাংলার রাজপথে যখন তিলোত্তমার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘাম ঝরাচ্ছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী চান আমরা প্যান্ডেলে ঢুকে আনন্দে মেতে থাকি। আশাকরি বুঝতেই পারছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ম্যানেজড, আর প্রতিবাদ তো শুধু বিনোদন বঞ্চিতদের জন্য, তাই না?

তাহলে প্রশ্ন উঠছে, উৎসবে না ফিরলে কী করবেন মুখ্যমন্ত্রী? তিনি কি দুয়ারে পুলিশ পাঠিয়ে জনে জনে বলবেন, “যা রে যা, প্যান্ডেলে যা?”

হতে পারে এমন, পুলিশের গাড়ি থামবে বাড়ির সামনে, আর দরজায় টোকা পড়বে— “দাদা, আজ কিন্তু অষ্টমী। পুজো মিস করলেই বিপদ। যান, ফুচকা খেতে খেতে একটু প্রতিমা দেখে আসুন।” হবে বলছি না, কিন্তু হতেও পারে।

যদি আপনি বলেন, “না, তিলোত্তমার জাস্টিস চাই”, রাষ্ট্রযন্ত্র তখন হয়ত চোখ কপালে তুলে বলবে, “ন্যায়? ঐটা মুলতুবি রাখা হয়েছে! আপাতত গান শোনেন, ধুনুচি নিয়ে নাচেন।” অথবা এতকিছু না বলে পাঁজকোলা করে তুলে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে পাড়ার প্যান্ডেলে।

আমরা হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করছি, কিন্তু বাস্তব তো এমনই। যখন সাধারণ মানুষ বিচার দাবি করে, তখন শাসকের কাজই হচ্ছে তাদের অন্য পথে চালিত করা। উৎসব মানে তো আনন্দ! আর শাসকদের চোখে, জনগণের আনন্দ মানেই সাফল্য। তাই কি মাননীয়া মনে করছেন, এইসব অপ্রয়োজনীয় বিচার-টিচার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মানুষ একটু সেজে গুজে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে আসলেই সব মিটে যাবে।

আর মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই উৎসবে না ফিরলে চটে যান? তাহলে কি শাসকের প্যারা-মিলিটারি বাহিনী এক হাতে ধুনুচি আর অন্য হাতে লাঠি নিয়ে নেমে পড়বে। “তুমি কেন বেজায়গায় ন্যায়ের কথা তুলছো?” বলে তারা প্যান্ডেলের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে।

নাহ্, এসব কিছু হওয়ার কথা না। একটা গণতান্ত্রিক রাজ্যে এমনটা হয় না।

কিন্তু মোদ্দা প্রশ্ন একটাই: আমরা কি সত্যিই এতটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছি যে তিলোত্তমার সুবিচারের জন্য লড়াই ছেড়ে উৎসবে যাব?

না, মুখ্যমন্ত্রী, উৎসবে ফিরছি না! যতদিন তিলোত্তমার ন্যায্য বিচার না পাওয়া যাচ্ছে।

এই লড়াই আজ রাষ্ট্রযন্ত্র বনাম মানুষের। পারবেন আটকাতে? মানুষের মুড কিন্তু অন্য কথা বলছে।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস