আরজি না পিজি? / RG or PG
জীবন-মৃত্যু নিয়ে খেলা বোধহয় নতুন সংজ্ঞায় পৌঁছেছে। সৌজন্যে রাজ্য প্রশাসন। আজকাল একটা এ্যাম্বুলেন্স কোথায় যাবে, কে যাবে, কেন যাবে—এই সব প্রশ্ন একেবারে গৌণ হয়ে গেছে। এক মায়ের চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার আগেই আরেক মা-কে চোখের জল মুছতে বলা হচ্ছে। যেহেতু জীবন-মৃত্যু এখন হাসপাতালের পেছনে দৌড়ানোর মাঝে প্রশাসনের মুখ বাঁচানোর খেলা। তাতে কে বাঁচলো কি মরলো, তাতে প্রশাসনের কিচ্ছু আসে যায় না।
কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্যের সাথে কি হয়েছিল? প্রথমে শোনা গেল, গুরুতর আহত পায়ে ধাক্কা খাওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা দরকার ছিল। কিন্তু তার বদলে এ্যাম্বুলেন্স শুরু করল একটা নতুন খেলা—”রেফার খেলা”। ওয়ালশ হাসপাতালের মতো একটি “সুপার স্পেশালিটি” কেন্দ্র নাকি প্রথমে বিক্রমকে কলকাতা মেডিক্যালে পাঠানোর কথা ভাবছিল। অথচ সেই এ্যাম্বুলেন্স কলকাতা মেডিক্যালে না গিয়ে আরজি করের দিকে গেল কী করে? এ কি চমকপ্রদ অঙ্কের মতো? কোন্নগর পুরপ্রধানও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “বাড়ির লোকই তো চেয়েছিল!”
দেখুন, পরিবার তো আর নাটকের নির্দেশক নয়, কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশাসনকে দেখা যাচ্ছে মঞ্চের পেছনে প্রম্পটার হিসেবে! এ্যাম্বুলেন্সটা তো পুরসভা দিয়েছে—কিন্তু অদৃশ্য হাতে কারা চালালো? রেফার খেলা শুরু হলো, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল, কিন্তু যাওয়া হলো ভুল মঞ্চে। কোন্নগর পুরপ্রধান নিজেই প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বাড়ির লোকই তো আরজি করে যেতে চেয়েছে।’’ মানে?
এদিকে শোনা যাচ্ছে, ওয়ালশ হাসপাতাল নাকি সুপার স্পেশালিটি, যেখানে রেফারের বাইরে কিছু ঘটে না। এ যেন একটা ম্যাজিক শো! “রোগী এল, রোগী গেল”—তাতে ডাক্তাররা বিশ্রাম নিচ্ছেন! সুপার প্রণবেশ হালদার তো গর্বিত ভাবে বলছেন, ‘‘বিক্রমকে রেফার করা হয়েছিল।’’ কিন্তু তারপর সেই এ্যাম্বুলেন্সটা কীভাবে নিজের রাস্তা হারিয়ে ফেলে? কেউ জানে না।
আরজি করে গেলে কি কিছু সত্যিই বদলে যেত? বিক্রমের কাকিমা বলেন, ‘‘পিজিতে নিয়ে গেলে বোধহয় বাঁচানো যেত।’’ আবার পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘আরজি করে গেলে আমরাই বা কী করব?’’ বোধহয় জীবন-মৃত্যুর নতুন সংজ্ঞা আমাদের শিক্ষা দিল—যেখানে মানুষ বাঁচার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রশাসনের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার লড়াই।
তবে কি সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থে আর জি কর এ আন্দোলনরত ডাক্তারদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়েই কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্য কে এসএসকেএম বা মেডিক্যাল কলেজে না নিয়ে গিয়ে, সময় নষ্ট করে আর জি করে এনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে ফেলা হলো? এত মরিয়া কেন প্রশাসন? কেন লাশ খুঁজছে প্রশাসন? কাকে বাঁচাতে? কোনো একজনকে নাকি গোটা সিস্টেমকে?
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.